রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ড তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত পদ্মাপাড়ের জনজীবন


প্রকাশিত:
৮ জানুয়ারী ২০২৩ ০৫:৪৫

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪১

ফাইল ছবি

ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ। গত কয়েকদিন ধরে এরই ধারাবাহিকতায় পদ্মাপাড়ের নগরী রাজশাহীতেও জেঁকে বসেছে শীত। বেলা বাড়ার অনেক সময় পার হলেও দেখা মিলছে না সূর্যের। আড়মোড়া ভেঙে সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি সজীবতা পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে অনেক। 

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগ থেকেই বইতে শুরু করে হিম শীতল বাতাস। ক্রমেই জনমনে বাড়তে থাকে দুর্ভোগ আর ভোগান্তি। হাড় কাঁপানো শীতে তাই নাজেহাল হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি পৌষের শীতের কবল থেকে রক্ষা মিলছে না পশু-পাখিদেরও।

রোদহীন নগরীতে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে কাজে যোগ দিতে পারছেন না অনেকেই। সামান্য উপার্জনে চাল-ডাল জোটানোই যাদের প্রধান লক্ষ্য, শীত নিবারণের পোশাক কিনতেও হিমশিম অবস্থা তাদের। দিনের আলো ফুটতে দেরি হওয়ায় কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছেন শ্রমজীবীরা।

শীতের থাবা থেকে বাঁচতে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। ফুটপাত থেকে শুরু করে শপিংমলগুলোতেও গরম কাপড়ের চাহিদা এখন তুঙ্গে। কয়েক গুণ চাহিদা বেড়েছে ‘সেকেন্ড হ্যান্ড’ শীতবস্ত্রেরও। সাশ্রয়ী দামের কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব পোশাকেই যেন নজর সব শ্রেণির মানুষের। বড় মার্কেটের চেয়েও বেশি ভিড় বেড়েছে ফুটপাতের পুরনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। আবার অনেকেই রাস্তা কিংবা ফুটপাতে খড়কুটোয় আগুন পোহাতেও ব্যস্ত একটু উষ্ণতা পেতে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শনিবার (৭ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা এবারের শীত মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গতকাল (শুক্রবার) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। আর বুধবার ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

ঘন কুয়াশার কারণে আজও বেলা ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি রাজশাহীতে। ভোরের কুয়াশায় পথঘাটে চলতেও বিড়ম্বনায় পড়ছেন পরিবহন চালকরা। দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়ক কিংবা সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। আবার সঠিক সময়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে চালকদের। বিলম্ব হচ্ছে দিনের স্বাভাবিক কার্যক্রম। আশঙ্কা বাড়ছে দুর্ঘটনারও। হাড় কাঁপানো শীতে গুটিসুটি হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধদের কষ্টও ঠেকেছে অসহনীয় পর্যায়ে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস সহকারী কামাল উদ্দিন বলেন, আজ (শনিবার) ভোর ৬টায় রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে জেলায় গত ২৯ ডিসেম্বর ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

আজ সকালে দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ২০০ মিটারেরও নিচে। ভোর ৬টার পর থেকে আর তাপমাত্রা কমে নি। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলেও জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।

এদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।

এছাড়াও অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

 

 

 

আরপি/এসআর-০২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top