রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

বই পড়ার দাওয়াত নিয়ে অলি, যেতে চান ৬৪ জেলায়


প্রকাশিত:
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:১৫

আপডেট:
৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:২৩

ফাইল ছবি

সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে বইপড়ার প্রতি আহ্বান জানাতে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচিতে ২৬তম জেলা হিসেবে রাজশাহীতে এসেছেন অলি সাব। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপরে তার নাটোরের উদ্দেশে রাজশাহী ছাড়ার কথা আছে। এর আগে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সারাদিন তিনি শহরের শিক্ষার্থীদের বই পড়ার দাওয়াত দিয়েছেন। দেখা করেছেন শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। 

ঘরে ঘরে বইপড়ার নেশা ছড়িয়ে দিতে পুরনো ফনিক্স বাইসাইকেল নিয়েই ছুটে চলেছেন এই স্বপ্নরাজ।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার বালিজুরীতে বাড়ি অলি সাবের। বাবা লুৎফুর রহমান কৃষক, মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় অলি।১৯ বছর বয়সী তরুণ সুনামগঞ্জের এক কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন।

রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে অলির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের। তিনি জানান, গত ৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ‘৬৪ জেলায় বইপড়া আন্দোলন’ কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। গত ২০ অক্টোবর নেত্রকোনা থেকে দ্বিতীয় পর্বের কর্মসূচি শুরু করেছেন তিনি। নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে গত রোববার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর রাজশাহীতে পৌঁছান তিনি।

আগামী ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে বাকি ৩৮টি জেলা ভ্রমণ করতে চান তিনি। এরপর এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একুশে বইমেলায় একটি বই বের করার পরিকল্পনা এই তরুণের। ইতোমধ্যে একটি প্রকাশনা সংস্থা তার বই বের করতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ গ্রহণের কারণ জানতে চাইলে অলি সাব বলেন, মানুষজন যেন আরও বেশি বেশি বই পড়ে সেই সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বই পড়ার আন্দোলন করছি। তারই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী আমার ২৬ তম জেলা। আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের আন্দোলন হয়, কেউ পরিবেশ নিয়ে কাজ করে, কেউ মাদকবিরোধী আন্দোলন করে, কেউ রক্ত দানে সচেতনতা তৈরি করে, কিন্তু আমি করছি বই পড়ার আন্দোলন। ‘জানতে চাই' এই চিন্তা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জেলায় স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি। সেখানকার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছি, চার-পাঁচ মিনিট আমার বই পড়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। প্রিন্সিপাল স্যারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলছি। পুরো ৬৪ জেলা বাইসাইকেলে চড়ে তাদের কাছে বই পড়ার মেসেজটা দিচ্ছি। যাত্রাপথে বিভিন্ন জেলার ডিসি, সাংবাদিক, পথিকদের সঙ্গে বই পড়ার গুরুত্ব বিষয়ে কথা বলছি।

আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার ভ্রমণসহ যাবতীয় খরচ আমার পরিবার থেকেই দিচ্ছে। প্রতিবন্ধকতা বলতে গেলে, রাস্তাঘাটের অবস্থা আমাদের সবারই জানা। অনেক যানবাহন বেপরোয়াভাবে চলে, রাস্তায় অনেক ধুলাবালি, অনেক রোদের কারণে আমি অনেক ঘেমে যাই। প্রত্যেকদিন প্রায় ৮০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতে হয়, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

যাত্রাপথে প্রশাসনিক জটিলতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় নি। কেননা যখন যে জেলায় যাই তখন সে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে যোগাযোগ করে রাখি। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করি, তারা অটোগ্রাফ দেন, সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। অনেক সময় সার্কিট হাউজে থাকার ব্যবস্থাও করেন।

এই উদ্যোগে অনেকে সাড়া দিচ্ছেন উল্লেখ করে স্বপ্নরাজ বলেন, ভ্রমণকালীন আমি বলবো প্রায় ৫৮% সাড়া পাচ্ছি। আমি যদি কোনো দোকান একটা পানির বোতল নিতে গেলে তারা আমার সম্পর্কে জেনে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই দামটা আর নিচ্ছেন না। কোনো হোটেলে খাওয়া দাওয়া করলে দেখা যাচ্ছে সেই দামটাও তারা নিচ্ছেন না, ঔষধ নিলেও তারা দাম নিচ্ছেন না। এছাড়াও থাকার জন্য মাঝে মাঝে সার্কিট হাউজ, মসজিদে, মাজারে আবার অনেকের বাড়িতেও থেকেছি। প্রত্যেকেই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আমার এই উদ্যোগকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। কোনো বাড়িতে থাকার সময় দেখা যায় পুরো এলাকার মানুষের সাথে পরিচয় হচ্ছে। অনেক ভালো লাগছে। তাদের ভালোবাসায় আমি আপ্লূত।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মূলত চারটি মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। বই পড়ে, ভ্রমণ করে, অভিজ্ঞতা থেকে আর আধ্যাত্মিক চিন্তা করে। আমি ইতোমধ্যে নিজ উদ্যোগে দুইটি পাঠাগার তৈরি করেছি। আমার এলাকার মানুষরা ফ্রীতে সেখানে বই পড়তে পারেন।

এছাড়াও যতক্ষণ ৬৪ জেলা না শেষ হচ্ছে ততক্ষণ আমার এই বই পড়ার আন্দোলন চলবে বিরামহীন অবিরত। আমি ভবিষ্যতে লেখক হতে চাই। মানুষজন যেন বেশি বেশি বই পড়ে সেজন্য কাজ করবো। আর ক্যারিয়ার জীবনে আমি একজন উদ্যোক্তা হতে চাই বলেও ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top