রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

বর্ষবরণে আতশবাজি ও আলোকসজ্জায় রঙিন নগরী


প্রকাশিত:
১ জানুয়ারী ২০২২ ২০:৩৩

আপডেট:
১ জানুয়ারী ২০২২ ২০:৫৫

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

‘ওহে পান্থ!
অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে যাও তুমি
ঐ যে ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে
সম্মুখে রয়েছে পড়ে
তোমার সে কর্মক্ষেত্র-মহারঙ্গ ভূমি।’

মহাকবি কায়কোবাদের পঙক্তির মতোই সত্যিকারের সুন্দরের প্রত্যাশায় পুব আকাশে উদিত হলো নতুন সূর্য। কুয়াশার চাদর ভেদ করে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে সেই আলো। শুক্রবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাঁটা শূন্যের ঘর অতিক্রমের সঙ্গে সঙ্গেই গণনা শুরু হয়েছে নতুন বছরের। ২০২১ সালের ফেলে আসা ক্লান্তি, হতাশা, ক্ষোভ, ভুল, দুঃখকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলার বাসনা নিয়ে পুবাকাশে উঠেছে ২০২২ সালের নতুন সূর্য।

করোনা মহামারীতে আক্রান্ত বিশ্ব সুস্থ হয়নি এখনও। অনেকেই হারিয়েছে নানা প্রিয় মুখ ও প্রিয়জনকে। সংকটের ক্ষত কাটাতে পারে নি বেশিরভাগ খাত। পুরো পৃথিবীর মানুষের বুকে রয়েছে হারানোর দগদগে ব্যথা। কিন্তু মানুষ সে তো থেমে থাকার নয়, শুরু করেছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম। আবিষ্কার করেছে টিকা। টিকাকরণের আওতায় বাংলাদেশও। আবিষ্কারের পথে ঔষুধ। আর মৃত্যু নয়, করোনাকে জয় করেই এগিয়ে যাবে মানবকুল-এটাই নতুন বছরের প্রধান প্রত্যাশা।

নতুন বছরকে বরণ করা নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’

রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে ২০২২ গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। উন্নয়নে নেয়া নানা উদ্যোগ পূর্ণতা পাওয়ার পাশাপাশি নতুন বছরে সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে অগ্রগতির পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হবে নগর- এমনটাই প্রত্যাশা রাজশাহীবাসীর।

ইংরেজি নতুন বর্ষকে শুভেচ্ছা জানাতে নানা আয়োজন ছিল নগরীজুড়ে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক ভবন কিংবা জনবহুল মোড়গুলোতেও ছিল নানা আয়োজন। হরেক রকম আলোয় সজ্জিত পুরো নগরী। ফটোসেশন কর্ণারও রাখা হয়েছে অনেক জায়গায়। স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তি পর্যায়েও আয়োজন করা হয় নানা পদের খাবারের।

নগরীতে উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোন আয়োজনের অনুমতি না থাকলেও থামিয়ে রাখা যায়নি মানুষের উদযাপনকে। রাত ঠিক বারটায় ফানুস ও আতশবাজির ঝলকে রঙ্গিন হয়ে উঠেছিল রাজশাহীর আকাশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) বিধি-নিষেধ থাকলেও পটকার শব্দে প্রকম্পিত নগরীর বেশিরভাগ এলাকা।

করোনার প্রকোপ পুরোপুরো কাটিয়ে উঠতে না পারায় এ বছরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে আরএমপি। নগর এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, জনস্বার্থ, জনশৃঙ্খলা ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি সকাল দশটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহন ও প্রদর্শন। অনুমতি ছিল না আতশবাজি, পটকা ফুটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহারের। আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আরএমপি মুখপাত্র ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, থার্টি ফাস্ট নাইটকে উপলক্ষ করে পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা হয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের টহল টিম সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে উন্মুক্ত স্থানে আতশবাজি, পটকা ফুটানো, গান-বাজনাসহ সকল আয়োজনের উপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

নতুন বছর ২০২২-এ মানুষ নতুন করে জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখেন। ফেলে আসা দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে চান সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাই আজ হৃদয়ে হৃদয়ে বেজে ওঠে একটাই প্রার্থনা- নতুন বছরটি যেন ভালো কাটে।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top