রাজশাহী শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১

ভ্যান চালক সঞ্জয় এখন পুলিশ কনেস্টেবল


প্রকাশিত:
১২ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৪৭

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ১২:২৮

সঞ্জয় কুমার বর্মণ

রাজশাহী ট্রেইনি রিক্রুটিং কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল যখন ঘোষণা করা হয়, তখন রাত ১২টা। ফল ঘোষণা করছিলেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন। তার ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে সেই ঘোষণা শুনছিলেন চাকরি প্রত্যাশীরা। নিজের রোল নম্বর ও নাম শোনার সাথে সাথে উত্তীর্ণরা 'ইয়েস স্যার' বলে উত্তর দিচ্ছিলেন। এ সময় আনন্দে কেঁদে ফেলেন চাকরি পাওয়া ব্যক্তি ও তাদের অভিভাবকরা।

এক পর্যায়ে নাম ঘোষণা হয় তানোরের মুণ্ডুমালার সঞ্জয় কুমার বর্মণের। চূড়ান্ত ফল ঘোষণায় নিজের নামটি শোনার পর তার চোখ অশ্রুতে ভরে যায়।

সঞ্জয় কুমার বলেন, তার বাবা পেশায় একজন ভ্যান চালক। কষ্ট করেই তিনি ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। সঞ্জয় নিজেও ভ্যান চালাতেন। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে সঞ্জয় জেলা পুলিশ লাইন্সে এসেছিলেন বাবার ভ্যানে চড়েই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কৌটায় সঞ্জয় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। একটা ধারণা ছিল যে মামা-খালু আর টাকা ছাড়া কোন চাকরি হবে না। আমার এ ধারণা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা তো আদিবাসী, আমাদের টাকাও নেই, মামা-খালুও নেই। তাও নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছি। আমার এ খুশি রাখার জায়গা নেই। আমার বাবার খুশি আরও বেশি।’

তিনি জানান, ‘যখন কম্পিউটারের দোকানে অনলাইনে আবেদন করতে যাই, তখন একজন প্রশ্ন করেছিলেন চাকরি পেতে আমি কাকে ধরেছি। টাকা-পয়সা রেডি করেছি কি না। আমার কেউ নেই। আমি আজ শুধু ১০০ টাকার ট্রেজারি চালান আর আবেদনের খরচ মিলে ১৫০ টাকায় সরকারি চাকরি পেয়েছি। বাবার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি আজ চাকরি পেয়েছি বিনাপয়সায়।

শুধু সঞ্জয় নয়; এবার পুলিশের নিয়োগ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারণা, তদবির আর ঘুষ ছাড়া চাকরি মেলে না। কিন্তু এই ধারণা এবার মিথ্যা প্রমাণিত করে ১৫০ টাকা খরচে রাজশাহীতে চাকরি পেয়েছেন ৫৪ জন কনস্টেবল।

মৌখিক পরীক্ষা শেষে সোমবার রাতে তাদের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৫৪ জনের পাশাপাশি অপেক্ষমান তালিকাও প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কেউ বাদ পড়লে অপেক্ষামান তালিকা থেকে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন।

সঞ্জয় বলেন, আমিসহ আমার বাবা মা কেউ কখনো কল্পণাও করতে পারিনি যে বিনা টাকায় চাকরি হবে। এটা দেখে আমার বাবা আমার চেয়ে বেশি খুশিতে আত্মহারা হয়েছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এতো সুন্দর পদ্ধতি চালু করায় আমাদের মত গরীব মেধাবী ছেলেরা এই চাকরিতে আসতে পেরেছে। সরকার এটা একটা সুন্দর পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতি থাকলে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

সঞ্জয় পরিবারের মধ্যে বড় ছেলে। ছোট ভাই আর বাবা-মাকে নিয়ে খুব কষ্টে তাদের জীবন কাটছে। এই কষ্টের তাদের অনুসূচনা ঘুঁচবে বলে জানান তিনি।

এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, নতুন নিয়মে এবার পুলিশে নিয়োগ হচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করার পর তথ্য-যাচাই বাছাই করে শারীরীক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিতদের তালিকা করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তারপর রাজশাহীতে শারীরীক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এতে উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখা হয় সদর দপ্তরে। শুধু কোড নম্বরে পাঠানো খাতা দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটা কার খাতা। তাই এ নিয়োগে কোন প্রার্থীর পক্ষে কেউ কাজ করবে, এ রকম কোন সুযোগই ছিলো না। যারা চাকরি পেয়েছেন সবাই ঘুষ-তদবির ছাড়াই পেয়েছেন।

 

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top