রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

শীতের শুরুতেই সবজি চাষে ব্যস্ত চাষীরা


প্রকাশিত:
১ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৫৭

আপডেট:
২ নভেম্বর ২০২১ ০২:৩৭

ফাইল ছবি

আবহওয়া অনুকূলে হওয়ার কারণে সবজি চাষে দিনদিন কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। লাভজনক হওয়ায় তুলনামূূলক নিচু জমিতেও এখন সবজির আবাদ করা হচ্ছে। আর এদিকে রবি মৌসুমের শুরুতেই শীতকালীন অগ্রিম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।

এরই মধ্যে কৃষকরা লাল শাক, লাউ, বেগুন, শিম, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো ও শসাসহ বিভিন্ন সবজির চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর তিন থেকে চার সপ্তাহ পর এসব সবজি বাজারজাত করবেন এমনটাই আশা এখানকার চাষীদের।

চাষীরা বলছেন, এখন সারা বছরই সবজির আবাদ করছেন তারা। আসন্ন শীতকে সামনে রেখে শীতকালিন সবজির আবাদের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে শীতের শুরুতে বাজারে সবজির দাম ভালো থাকে। যেটিকে অনেক কৃষক র্টাগেট হিসেবে নিয়ে অগ্রিম আবাদ করে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে শীতকালীন শাক-সবজি। বেশি লাভ ও বাম্পার ফলন হবে এমনটাই স্বপ্ন কৃষকদের।

রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার কৃষক মান্নান জানান, রবি মৌসুমের সবজির দাম সবচেয়ে বেশি থাকে শীতের প্রথম দিকে। প্রথম চালানে সবজি বিক্রি করতে পারলে লোকসানের কোনো চিন্তা থাকে না।

সে সময় মাঠে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও সবজি কেনার জন্য ঘুরে বেড়ায়। একারণে তিনি গত দুই বছর থেকে চেষ্টা করেন অগ্রিম ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষে।

এক্ষেত্রে আবাদের বাড়তি পরিচর্যার পাশাপাশি ঝুঁকিও বেশি থাকে। তবে যেহেতু এটা লাভজনক তাই অন্যান্য সময়ের চেয়ে অগ্রিম চাষাবাদের পরিমাণও বাড়ছে।

তিনি আরও জানান, তার এবার দুই বিঘা মতো কপি আছে। শীতের শুরুর দিকে এটা বিক্রি উপযোগী করতে পারলে ভালো লাভবান হবেন তিনি।

এদিকে, তুলনামূলক নিচু জমিতে অগ্রিম সবজি চাষ করে জলাবদ্ধতার কারণে বেশিকিছু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের সবজি-বীজতলা নষ্টও হয়েছে।

অগ্রিম শীতকালিন সবজি আবাদ ঠিকমতো পরিচর্যা করে গড়ে তুলতে পারলে ভালো লাভবান হওয়া যায়।

বিশেষ করে ফুলকপি, বাঁধা কপি ও টমেটোর দাম ভালো থাকে। একারণে অগ্রিম বীজতলাও করেছিলেন। কিন্তু নিচু জমি হওয়ায় অর্ধেকের বেশি কপি বীজ নষ্ট হয়ে যায়।

এছাড়া জমিতে বৃষ্টির পানি জমেও অনেকটা ক্ষতি হয়েছে তার। এমন অবস্থা তার আশেপাশে আরও অনেকের হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রবি মৌসুমের সবজি আবাদ মূলত ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতো। তবে গত কয়েক বছর থেকেই এই সময়টাকে অনেক কৃষক কমিয়ে নিয়ে আসছেন।

এবার সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতেই রবি মৌসুমের সবজি আবাদ শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে ৭৩১ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে।

যেটা অক্টোবরের মাঝামাঝিতে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আর রাজশাহীতে গত বছর ১৮ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছিলো।

রাজশাহীতে এরইমধ্যে ১৩০ হেক্টর বেগুন, ২৫ হেক্টর ফুলকপি, ১৩ হেক্টর বাঁধাকপি, ৮০ হেক্টর মুলা, লাউ ৩৫ হেক্টর, সীম ৭২ হেক্টর, বরবটি ৭ হেক্টর, শসা ১ হেক্টর, করলা ৫ হেক্টর, ঢেঁড়শ ১০ হেক্টর, মিষ্টিকুমড়া ২১ হেক্টর, ডাটা শাক ১ হেক্টর, লালশাক ৮০ হেক্টর, পালং ১৩ হেক্টর, পুঁইশাক ২ হেক্টর, কলমীশাক ৩ হেক্টরসহ ২৩০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ শুরু হয়েছে। যে সবজিগুলো শীতের প্রথম দিকে উঠতে শুরু করবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আওয়াল জানান, রবি মৌসুমের শীতকালিন সবজি চাষে রাজশাহীর কৃষকের আগ্রহ সবসময় বেশি থাকে।

উঁচু জমিতে সবজি আবাদটা লাভজনক। তবে বাজারে সবজির দাম ওঠানামা করে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। এতে অনেক সময় কৃষক ক্ষতিগ্রস্তও হন।

একারণে সার্বিক দিক-বিবেচনায় শীতের শুরুতেই সবজি বাজারে নিতে পারলে দামটা ভালো থাকে। কারণ সেসময় সরবরাহ কম থাকে।

তবে এখন বারো মাসই সব সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তারপরও এসময়টার মধ্যে যেহেতু দাম ভালো থাকে তাই অগ্রিম শীলকালিন সবজির আবাদে কৃষকের আগ্রহ ভালো।

জলাবদ্ধতার কারণে বিচ্ছিন্নভাবে নিচু জমিতে যারা সবজির আবাদ করেছিলেন তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তবে বড় ধরনের বা উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

 

আরপি/ এমএএইচ-০৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top