রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

সিঁদুর রাঙ্গা মুখে দেবীকে বিদায়


প্রকাশিত:
১৬ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৫৮

আপডেট:
২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪৬

ছবি: প্রতিমা বিসর্জন

ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবীর ঘুম ভাঙানোর বন্দনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, তার সাঙ্গ হলো বিজয়া দশমীতে। বাবার বাড়ি বেড়ানো শেষে কৈলাসে দেবালয়ে ফেরার সময় হলো আনন্দময়ী দেবী দুর্গার। ভক্তদের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় নিলেন অসুর দোলনী দেবী দুর্গা। বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে গেলেন দেবী। এক বছর পর আবারও তার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরবেন এমনটাই প্রত্যাশা ভক্তদের।

‘ধান-দূর্বার দিব্যি, ফের এসো মা/মা তুমি আবার এসো’- ভক্তদের এমন আকুতিতে বিদায় নিলেন দেবী। শুক্রবার সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের প্রার্থনা, ঢাক, ঢোল, কাঁসার ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি আর শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম কাঙ্খিত সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্ডপগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর আর অন্যদিকে উৎসবের আমেজ সব মিলিয়ে নতুন মাত্রা পায় উৎসবটি। ভক্তরা বলছেন, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ হয়।

পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে শুক্রবার মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর শান্তিজল গ্রহণ। সোমবার শ্বশুরবাড়ি কৈলাশ থেকে কন্যারূপে মর্ত্যলোকে আগমন ঘটে দেবী দুর্গার। হিন্দু বিশ্বাসমতে, টানা পাঁচদিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণে শেষ হলো বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতেও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এবারের দুর্গোৎসব। শুক্রবার বেলা ১১ টায় নগরীর কুমারপাড়া ধর্মসংঘ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। নিয়ম অনুসারে ঢাকের তালে তালে দেবী দুর্গাসহ কার্তিক, গণেশ, স্বরস্বতীসহ অন্যান্য দেব-দেবীর প্রতিমাগুলো সাত পাক ঘুরিয়ে নৌকায় তোলা হয়। কিছুক্ষন নৌভ্রমনের পর মাঝ পদ্মায় বিসর্জন দেওয়া হয় দেবী দূর্গাকে। সবশেষে বিকেল থেকে শুরু হয় বিসর্জনের মূল আয়োজন। এ বছর রাজশাহী জেলায় সর্বমোট ৪৫৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তন্মধ্যে মহানগর এলাকার ৭৫টি ও জেলার ৯ উপজেলায় ৩৮১টি মণ্ডপে উদযাপিত হলো দুর্গোৎসব। নগরীর ৭৫টি মন্ডপের প্রায় সবগুলো প্রতিমাই বিসর্জন দেওয়া হয় পদ্মার নদীর বিভিন্ন ঘাটে।

এবিষয়ে রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, সবার সহযোগীতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে এবারের দুর্গোৎসব পালিত হলো। এখন পর্যন্ত (শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত) ৫৫টি মন্ডপের প্রতিমা পদ্মা নদীর মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর প্রায় সবগুলো প্রতিমাই মুন্নুজান ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক প্রতিমা বিসর্জন পরিদর্শনে আসায় তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমরা নির্বিঘ্নে পূজার কার্যক্রম শেষ করতে পেরেছি।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, দুর্গোৎসব উপলক্ষে কন্ট্রোল রুম থেকে সার্বক্ষনিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। উৎসব চলাকালে সাদা পোশাকেও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। এছাড়াও নির্বিঘ্নে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করতে বিকাল থেকেই নগরীর কুমারপাড়া, আলুপট্টি, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top