রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০

এমপিও পেতে কলেজ অধ্যক্ষের অপতৎপরতার অভিযোগ


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২১ ০৩:৪৬

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৫২

ফাইল ছবি
 
এমপিও পেতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগসহ নানা অপতৎরপতার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। গত ৫ আগস্ট মাউশির রাজশাহীর পরিচালক ও সহকারী পরিচালককে (কলেজ) লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন জেলার ভোলাহাট জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন। এর আগে ওই অধ্যক্ষের দুই দফা এমপিও আবেদন বাতিল করে দেয় আঞ্চলিক শিক্ষা দপ্তর।
 
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, আগের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র ছাড়াই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনের প্রথম দফা এমপিও আবেদন বাতিল হয়ে যায়। আবেদন বাতিলের কারণ উল্লেখ করে ওই সময় অধ্যক্ষকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা না মেনে তিনি আরেক দফা এমপিও আবেদন করেন। মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ে ধর্ণাও দেন। নানা কৌশলে চাপ দেন কর্মকর্তাদের। শেষে আইনজীবীর মাধ্যমে আঞ্চলিক পরিচালক বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। গত ১৯ আগস্ট সেই লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিয়েছেন আঞ্চলিক পরিচালক।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন ২০০৩ সালের ২৩ জুলাই সমাজ কল্যাণ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট সোলেমান ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেন। কর্মস্থল পরিবর্তন করে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর ভোলাহাটের জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নেন। একদিন পর ১০ অক্টোবর সোলেমান ডিগ্রি কলেজে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পরদিন ১১ অক্টোবর তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন।
 
এমপিওভুক্তির জন্য চলতি বছরের ৪ এপ্রিল প্রথম দফা অনলাইনে আবেদন করেন। ‘যোগদান প্রক্রিয়া পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র ছাড়াই সম্পন্ন হওয়ায়’ তার সেই আবেদন বাতিল হয়ে যায়। এর দুই মাস পর ৩ জুন আবারও তিনি এমপিও পেতে অনলাইন আবেদন করেন। একই কারণে তার সেই আবেদনটিও বাতিল হয়ে যায়।
 
এমপিও সংশ্লিষ্টদের দাবি, আবেদনকারী অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছেন ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর। কিন্তু তখনও তার পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র মেলেনি। ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর পরিচালনা কমিটির সভায় ছাড়পত্রের বিষয়টি উঠলেও কলেজ কর্তৃক প্রদেয় অনুমতিপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র না থাকায় সেটি আটকে যায়। ওই সভার রেজুলেশনে তার পদত্যাগের বিয়ষটি স্থগিত রাখার কথা উল্লেখ রয়েছে।
 
এর প্রায় দুই বছর পর ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর পরিচালনা কমিটির সভায় তার ছাড়পত্র অনুমোদন মেলে। পরদিন ২৪ নভেম্বর তিনি ছাড়পত্র পান।
 
তার আবেদনপত্র বাতিলের ব্যাখ্যায় আঞ্চলিক শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র ছাড়াই তিনি জামবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে যোগদান করেছেন। আগের কর্মস্থল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন যোগদানের প্রায় দু বছর পর। যা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ এর ১২ ধারা এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৫ এর ৩ (ঘ) ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।
 
কিন্তু অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন দাবি করেন, তিনি ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। সেটিই অনুমোদন হয়েছে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর। আর ছাড়পত্র ও দায়মুক্তিপত্র পেয়েছেন পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার দিনই। কাজেই প্রচলিত জনবল কাঠানো ও বিধি অনুযায়ী তিনি এমপিও পাওয়ার কথা। কিন্তু মাউশি আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক ও সহকারী পরিচালক (কলেজ) যোগসাজসে সেই আবেদন বাতিল করেছেন। পরে তিনি আরেক দফা আবেদন করেন। সেই আবেদনটিও পর্যালোচনা না করেই বাতিল করা হয়েছে। আইনী প্রতিকার পেতে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
 
প্রথমে আঞ্চলিক পরিচালক, সহকারী পরিচালক এমনকি সহকারী প্রোগ্রামারের বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগ আনেন এই অধ্যক্ষ। তবে এই তিন কর্মকর্তা তার কাছে উৎকোচ দাবি করেননি বলে শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন অধ্যক্ষ। সম্প্রতি এমপিও পেয়েছেন এমন একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলেও এমন অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।
 
এদিকে, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনের লিগ্যাল নোটিশের জবাব দেয়ার কথা জানিয়েছেন মাউশির আঞ্চলিক পরিচালক ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ওই আবেদনকারীর এমপিও আবেদন নিস্পত্তির জন্য মাউশি অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে তাকে অবহিত করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও মাউশি অধিপ্তরের নির্দেশনা না নিয়েই তিনি অনলাইনে ব্যাখ্যা দিয়ে আবেদন পাঠান। যা জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে আঞ্চলিক কার্যালয়ের এখতিয়ারবর্হিভূত। ফলে বিষয়টি তাদের পর্যালোচনারও সুযোগ নেই।
 
এমপিও আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর সহকারী পরিচালক (কলেজ) ও উপ-পরিচালক (কলেজ) মতামত দিয়ে থাকেন। সহকারী পরিচালক ও উপ-পরিচালকের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালক পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত দেন। জনবল কাঠামো, প্রচলিত আইন ও বিধি মেনেই এমপিও আবেদন নিস্পত্তি হয়। এই আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও এর ব্যতয় ঘটেনি। তাছাড়া তারা যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেটি উপেক্ষা করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। যা সরকারী কাজে বাধা সৃষ্টির নামান্তর।
 
তিনি অভিযোগ করেন, প্রতিটি এমপিও শুরুর পর একটি চক্র এমপিও নিয়ে তদবির শুরু করে। চর্তুমূখী চাপ উপেক্ষা করেই বিধি মেনে এমপিও আবেদন নিষ্পত্তি করেন তারা। আর এতে ক্ষিপ্ত হন তদবিরকারীরা। নানান কায়দায় এমপিও কার্যক্রম নিয়ে অপপ্রচার চলে।
 
এতে সরাসরি যুক্ত আঞ্চলিক দপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা। এতে মানসিক চাপ বাড়ে। ব্যহত হয় দফতরের কর্মপরিবেশ। এমপিও কার্যক্রমসহ সরকারের কর্মকান্ড বাধাগ্রস্থ হয়। দিন দিন এই চাপ বাড়ছে। এর প্রতিকার জরুরী। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন।
 
 
আরপি/এসআর-১১

বিষয়: এমপিও


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top