রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

৫৩৫ জনে পজেটিভ মাত্র ১৮৫

রামেক হাসপাতালে করোনা উপসর্গেই মৃত্যুর দাপট


প্রকাশিত:
১ আগস্ট ২০২১ ১১:৩৫

আপডেট:
১ আগস্ট ২০২১ ১১:৪৬

রামেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগ

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে উপসর্গ নিয়েই মৃত্যু হচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক। প্রতিদিন অধিকাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন করোনা পজেটিভ না হয়েও। এমনকি করোনা নেগেটিভ থেকেও মারা গেছেন বেশ কয়েকজন। জুন মাসের ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসেও করোনা উপসর্গে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালটিতে। একইসঙ্গে বেড়েছে আগের মাসের তুলনায় গত মাসে মৃতের সংখ্যা। জুনে ৩৫৫ জন মারা গেলেও জুলাই মাসে ৫ শতাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে করোনা ইউনিটে।

রাজশাহী পোস্টের হাতে আসা তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৫৩৫ জনের। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিলেন মাত্র ১৮৫ জন। আর ৩২৩ জনই মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে। এছাড়া আরো ২৭ জনের প্রাণ গেছে করোনা নেগেটিভ অবস্থায়। মৃতদের মধ্যে ২৪৩ জনই রাজশাহীর বাসিন্দা। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছিলেন মাত্র ৪৪ জন। অথচ তার আগের মাস জুনে মারা যান ৩৫৫ জন। ওই মাসেও করোনা পজেটিভ নিয়ে মৃতের সংখ্যা কম ছিল। জুনের ৩০ দিনে ১৮৩ জন করোনা উপসর্গে, ১৬৬ জন পজেটিভ এবং ৬ জনের মৃত্যু হয় করোনা নেগেটিভ অবস্থায়। তার ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসেও সিংহভাগ মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গে।

গত মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৪ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ২৫ জন মারা যান। আর সর্বনিম্ন ১১ জনের মৃত্যু হয় ২৪ জুলাই। পবিত্র ঈদুল আজহার দিনেও মারা যান ২২ জন। আর করোনা উপসর্গে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ৭ জুলাই, ১৭ জনের। ওইদিন মোট ২০ জন মারা যান। এছাড়া মাসের প্রথম দিন মৃত ২২ জনের ১৬ জনই ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে। সেদিন করোনা পজেটিভ অবস্থায় মারা যান মাত্র ৫ জন। তাছাড়া একদিনে সর্বোচ্চ ২৫ জনের মৃত্যুর দিনও করোনা উপসর্গে প্রাণ গেছে ১৪ জনের। আর ৯ জুলাই এবং ঈদের দিন ও পরদিন ১৫ জন করে মারা যান শুধুমাত্র করোনা উপসর্গ নিয়েই।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত মাসের ৩১ দিনে করোনা ইউনিটে মোট ভর্তি হন এক হাজার ৮৯১ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন এক হাজার ৫৮৩ জন। এরমধ্যে গত ৪ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ৭৭ জন ভর্তি হন এবং সর্বনিম্ন ৩১ জন রোগী হাসপাতালে আসেন ২২ জুলাই ঈদুল আজহার দিন। সেদিনই সর্বনিম্ন ৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। আর ১৩ ও ১৮ জুলাই সর্বোচ্চ ৭৬ জন করে ছাড় পান হাসপাতাল থেকে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৩ জন। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মারা যাওয়া এ ১৩ জনের মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিলেন ৫ জন। বাকি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা উপসর্গে। হাসপাতালটিতে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে সর্বশেষ একদিনে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২ জন। রামেকের করোনা ইউনিটে বর্তমানে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ৪৩৩। এদের মধ্যে ১৮৮ জন করোনা পজেটিভ রোগী। বর্তমানে ৫১৩টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে করোনা রোগীদের জন্য।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী বলেন, সাধারণত ৮/১০ দিনের মাথায় মৃত্যু হচ্ছে ভর্তি থাকা রোগীদের। করোনা ইউনিটে শত শত রোগীর মধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে এক-দু‘জন রোগীর মৃত্যুকে বেশি বলার অবকাশ নেই। যাদের আগে থেকে ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মোটা বা অন্য রোগ ছিল কিংবা গর্ভবতী মহিলা- তারাই বেশি ঝুঁকিতে। তিনি বলেন, তাদের করোনা টেস্টে পজেটিভ না আসায় উপসর্গে মৃত্যু দেখানো হচ্ছে। এখনো শতকরা ৬০-৭০ ভাগ রোগীই গ্রামের। গ্রামগঞ্জে জনসচেতনতা খুব জরুরী।

পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে অধিকাংশ রাজশাহীর রোগীর মৃত্যুর কারন জানতে চাইলে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীতে বেশ কিছুদিন ভয়ঙ্কর রূপে ছিল করোনা ভাইরাস। ঈদে মানুষের মুভমেন্ট হওয়ার জন্য সংক্রমণ আরো বেড়ে গেছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর ওপর দিয়ে ভ্যারিয়েন্ট ধীরে ধীরে নাটোর ও পাবনার দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে ওই দুই জেলা থেকে বেশি রোগী আসছেন। করোনা ঝুঁকি নিয়েও হাসপাতালে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top