রাজশাহী রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ই আশ্বিন ১৪৩১


মোদির সফর ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে সারাদেশ


প্রকাশিত:
২৬ মার্চ ২০২১ ০২:৫০

আপডেট:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৪

ফাইল ছবি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একইসঙ্গে রাজধানীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার মনিটরিংয়েও নজর রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগত ভিভিআইপিদের গমনাগমনের জন্য ২৬ ও ২৭ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এমনকি কিছু কিছু সময়ের জন্য অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধও করা হবে।’


ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাজধানী নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয়েছে। ডিএমপি ছাড়াও সব ইউনিট একইসঙ্গে মাঠে কাজ করছে। সিআইডি, র্যাব ও এসবির পাশাপাশি অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। এছাড়া ডিএমপির ডিবি, ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে। পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ মাঠে রয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সাদা পোশাকে রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কৃঞ্চ পদ রায় বলেন, ‘নিরাপত্তার পুরো শক্তিকে কাজে লাগানো হয়েছে। পুরো রাজধানী নিরাপত্তা বলয়ে রয়েছে।’

ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় মোদির যাতায়াত ও সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘কেবলমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা শুধু রাষ্ট্রপ্রধান নয়, দেশে ও দেশের বাইরে থেকে আসা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সফরসূচিকে কেন্দ্র করে র্যাব অভূতপূর্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা সরকার প্রধানের আসাকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নাশকতা যাতে না হয় সেজন্য তিনটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অতিথিদের আগমন সূচিতে যেসব স্থান রয়েছে (ঢাকার ভেতরে ও বাইরে) সেখানে র্যাব তিন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থানগুলোতে র্যাব সদস্যদের দৃশ্যমান উপস্থিতি, গোয়েন্দা নজরদারি এবং সাইবার মনিটরিং করা হয়। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, বিগত দিনে র্যাব যেভাবে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে, আগামী দিনগুলোতেও র্যাব তার স্বাক্ষর রেখে যাবে।’


মোদিবিরোধী বিক্ষোভে র‍্যাবের ভূমিকা প্রসঙ্গে আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘যারা মোদিবিরোধী বক্তব্য, সভা-সমাবেশসহ এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের প্রতি এসব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ। সর্বত্র পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মোতায়েন রয়েছে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় মোদি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। বিমানবন্দরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেয়া হবে। এরপর যথারীতি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করা হবে। এরপর তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন।

jagonews24

এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল এক্সিবিশন উদ্বোধন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নরেন্দ্র মোদির চলাচলের কারণে ঠিক কোন কোন সড়কে যান চলাচল থাকবে না তা ডিএমপি থেকে স্পষ্ট করা না হলেও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা গেছে, আগামীকাল ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদি বিশেষ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন।

পরে তিনি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন। এরপর তিনি হোটেল সোনারগাঁওয়ে আসবেন। পরে বিকেলে তিনি যাবেন শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে। ঢাকায় তার চলাচলের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ রাখা হবে।

তার মধ্যে আছে বিমানবন্দর সড়ক, বিজয় সরণি, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক, মিরপুর রোড, কল্যাণপুর, গাবতলী হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের নবীনগর।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার প্রধান সড়ক ও ওই এলাকার উড়ালসড়ক। সেখান থেকে বঙ্গভবনে যাওয়ার শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণি (ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরের সামনে), কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন, গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পাশের সড়ক ও মৎস্য ভবনের সামনের প্রধান সড়ক। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে যেকোনো প্রধান সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ থাকতে পারে।

এ ছাড়া ২৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩টায় নরেন্দ্র মোদি তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন। বিকেল সাড়ে ৫টার পর বঙ্গভবনে যাবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর তিনি ঢাকা ছাড়তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন।

এদিকে, স্বাধীনতা দিবস ও মোদির আগমন উপলক্ষে বাস পরিবহনগুলোর মালিক ও শ্রমিকেরা শুক্রবার ও শনিবার রাজধানীতে স্বল্প সংখ্যক বাস চালাবেন বলে জানা গেছে। একটি কোম্পানির মোট বাসের ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাস চালাবেন তারা। সেটাও সময় ও সুযোগ বুঝে সড়কে নামতে বলা হয়েছে।

তবে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘সীমিত আকারে বাস চালানোর একটা নির্দেশনা রয়েছে আমাদের ওপর। দেশের স্বার্থে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের পাশের সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ও শনিবার এমনিতেও রাজধানীর সড়কে মানুষজন কম থাকে। তবে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার সড়কে পরিবহন বেশি থাকবে।’

অন্যদিকে, ভিভিআইপিদের চলাচলের স্বার্থে রাজধানীর সড়কগুলো যাতে মোটামুটি ফাঁকা থাকে সেজন্য প্রধান মার্কেটগুলোও বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে। এমনিতেও শুক্রবার রাজধানীর বেশিরভাগ মার্কেট বন্ধ থাকে।

কল্যাণপুরের শ্যামলী বাস কাউন্টারের টিকিট মাস্টার মো. রাজীব বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবারের জন্য কোনো টিকিট বুক রাখা হচ্ছে না। যাত্রীরা এসে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো ক্লিয়ার ম্যাসেজ (বার্তা) দিচ্ছেন না।’

মার্কেট বন্ধ থাকবে কি-না জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দোকান বা মার্কেট বন্ধের এমন কোন নির্দেশনা আসেনি। তবে আগামীকাল স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অনেকেই দোকান বন্ধ রাখবেন।’

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সময় নগরবাসীকে কিছু রাস্তা পরিহার করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। নগরবাসীর সাময়িক এই অসুবিধার জন্য ডিএমপি দুঃখ প্রকাশ করছে।’

 

 

আরপি/ আইএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top