রাজশাহী রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ই আশ্বিন ১৪৩১


চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পিছিয়ে পড়তে চায় না বাংলাদেশ


প্রকাশিত:
১৭ মার্চ ২০২১ ০০:২৫

আপডেট:
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৬

ফাইল ছবি

পেছনের তিনটি শিল্প বিপ্লবে পিছিয়ে পড়লেও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে হারতে চায় না বাংলাদেশ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয় সরকার। যা এখন আর স্বপ্ন নয়, অনেকটাই বাস্তব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ গ্রহণে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন সব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিতে যাচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দেশে সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে, একই সঙ্গে উৎপাদন ও সেবা প্রদানের স্তর বিলুপ্ত হতে পারে। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে কর্মহীনতার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সবকেই চ্যালেঞ্জ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।


এ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে সব পর্যায়ে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টির জন্য যুগোপযোগী দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন, কারিকুলাম প্রণয়ন, প্রশিক্ষণের মান পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় সাধন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক পেশাগত প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ)।

এনএসডিএ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কর্মকৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। এ জন্য দফায় দফায় বৈঠক করে কর্মপদ্ধতিও ঠিক করা হয়েছে।

এনএসডিএ মনে করে, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের শেষ পর্যায়ে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইনে তৈরি, পোশাক শিল্পের প্রসার এবং প্রবাসে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অদক্ষ এবং স্বল্প দক্ষ শ্রমশক্তির কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শিল্পে অটোমেশন বা রোবাট ব্যবহৃত হচ্ছে, যা কর্মীকে প্রতিস্থাপন করবে। এতে শিল্প পণ্য ও সেবা উৎপাদন ব্যয় কমবে। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উদ্ভবে ব্যবসা করার জন্য বুদ্ধিমত্তা এবং সমন্বিতভাবে কাজ করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ অবস্থায় ইনোভেশন নিয়ে পৃথিবীব্যাপী ব্যবসা করার সুযোগ গ্রহণেরও সময় এসেছে। তবে এর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ দুটোই রয়েছে।

সরকার তথা এনএসডিএ মনে করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বাংলাদেশ পাঁচটি সুবিধা পাবে। ১. এটি বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্য করার সুযোগ কোনও নির্দিষ্ট ভৌগলিক স্থানে আবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। ২. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ক্রস কাটিং হওয়ায় সকলেই প্রভাবিত করবে। ৩. পণ্য ও সেবা উৎপাদনের টুলস ব্যবহার করে কাঁচামাল, মানব সম্পদ, সময় ইত্যাদির সর্বোত্তম ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, পরিবেশ সুরক্ষাসহ সর্বোপরি সবার জন্য মানসম্মত জীবন-যাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিতসহ ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ৪. অনগ্রসর, প্রান্তিক, বিশেষভাবে সক্ষম ও নারীদেরকে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন টেকনোলজিতে দক্ষ করে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। ৫. চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সহজাত প্রবৃত্তি সম্পন্ন কাজকে প্রতিস্থাপন করবে না বলে, সেখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

এনএসডিএ মনে করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ দুটি। এর একটি হচ্ছে দেশের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। অপরটি হচ্ছে শিল্প বিপ্লবের কারণে উৎপাদন ও সেবা প্রদানের স্তর বিলুপ্ত হতে পারে। ফলে ক্ষেত্রবিশেষে কর্মহীনতার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দুটিকেই চ্যালেঞ্জ মনে করেন সরকার সংশ্লিষ্টরা।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৬টি অভিমত দিয়েছে।

১. শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের আপ-স্কিলিং এবং রি স্কিলিংয়ের প্রয়োজন পড়বে। বিকল্প পেশায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকরী প্রশিক্ষণ এবং সনদায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

২. আগামী পাঁচ বছরের জন্য দক্ষতা উন্নয়নের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা যেতে পারে।

৩. অগ্রাধিকার পেশা চিহ্নিত করে শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী অকুপেশন নির্বাচন কম্পিটেন্সি স্ট্যান্ডার্ড কোর্স এক্রিডিটেশন ডকুমেন্ট, কারিকুলাম, সিবিএলএম, অ্যাসেসমেন্ট টুলস ও কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ম্যানুয়েল প্রণয়ন, প্রশিক্ষক তৈরি, অ্যাসেসর তৈরি, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকরণ ইত্যাদি সম্পৃক্তসহ সব ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারণা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

৪. মাস্টার ট্রেইনার পুল তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষকদের বিদেশে, যেমন- ভারত, চীন, তাইওয়ানে পাঠাতে হবে। অথবা এসব দেশ থেকে প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৫. শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য আইএসসি শিক্ষাবিদ, শিল্প প্রতিষ্ঠান, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।

৬. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বা সংস্থায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ও বিকল্প ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞানচর্চার কোনও বিকল্প নাই। তিনি বলেন, পেছনের তিনটি শিল্পবিপ্লবে আমরা পিছিয়ে পড়লেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানমনস্ক জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্য ঘোষণা দেন ২০০৮ সালে, আর ভারত এমনকি যুক্তরাজ্যের ঘোষণাও এরপরে এসেছে।

ড. হাছান বলেন, আমাদের মেধাবী সন্তানেরা বিশ্বের বহুস্থানে স্থাপত্য-নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সমানতালে চলার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই মেধাগঠন ও বিজ্ঞানচর্চার উত্তরোত্তর প্রসার একান্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

আরপি / আইএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top