রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


পাওনা টাকা চেয়ে পেলেন রামদায়ের কোপ!


প্রকাশিত:
১৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৩৫

আপডেট:
১৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর পত্নীতলায় ইটভাটার অংশীদারত্বের ব্যবসায় পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন এক ব্যক্তি। মারধরের শিকার হাফিজুর রহমান বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার গৌরাদিঘী গ্রামের বিআরবি ইটভাটায় ওই মারধরের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম স্থানীয় আমইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

ইটভাটার অংশীদার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ও কান্তা গ্রামের ইয়াসিন আলী মণ্ডল ইটভাটার ব্যবসা শুরু করেন। পরে কান্তা কিসমত গ্রামের জিয়াউর রহমান ও মহাদেবপুর উপজেলার কানলা গ্রামের হাফিজুর রহমানও ব্যবসায় যোগ দেয়।

ইয়াসিন আলী, জিয়াউর রহমান এবং হাফিজুর রহমান অর্ধেক এবং চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাকি অর্ধেক অংশের মালিক হিসেবে ব্যবসা করে আসছিলেন।

এ পর্যন্ত ব্যবসায় উভয় পক্ষ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ব্যবসায় বিনিয়োগের পর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে এখন পর্যন্ত তিনজন মিলে ৯০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু বাঁকি ৪০ লাখ টাকাসহ লভ্যাংশের টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম।

এ নিয়ে চলতি বছরের ২২ জুন অংশীদার জিয়াউর রহমান ও ২৩ সেপ্টেম্বর ইয়াসিন আলী মণ্ডল থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এমনকি উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী মন্টুর কাছে অভিযোগ করেও তারা কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান।

এরই ধারাবহিকতায় সোমবার বিকেলে ইটভাটায় হিসেব চাইতে গেলে হাফিজুর রহমানকে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে লোহার রামদা কুপিয়ে জখম করেন। খবর পেয়ে অন্য অংশীদার জিয়াউর রহমান ও ইয়াসিন আলী মণ্ডলসহ পরিবারের লোকজন হাফিজুরকে উদ্ধার নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গুরুতর আহত হাফিজুর রহমান বলেন, ‘লাভ ও পাওনা টাকার হিসেব চাওয়ায় আমাকে মারধর করেছে শহিদুল ও তার লোকজন। আমি এর বিচার চাই।’

অংশীদার ইয়াসিন আলী মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের তিনজনের প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা আছে। এর মধ্যে ৯০ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছি। বাঁকি ৪০ লাখ টাকা ও লাভের কোনো দেয়নি শহিদুল। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ কোনো দিতে পারেনি। উল্টো থানার এসআই নজরুল ইসলাম আমাদের বলে যে, ইটভাটায় গেলে নাকি আমাদের সমস্যা হবে।’

জিয়াউর রহমান নামে অন্য অংশীদার বলেন, ‘থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু এসআই জাফর আহম্মেদকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে বলছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পত্নীতলা থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় অভিযোগ করার পর তাদের উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। প্রমথবার বসে সুহারা না হওয়ায় পরে আবার বসার জন্য দিন ঠিক করা হলেও তারা আসেননি।’

একই বিষয়ে এসআই জাফর আহম্মেদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন অভিযোগ করেন, সে সময় ওসি ছিলেন শামসুল আলম শাহ স্যার। তিনি উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী মন্টুকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিষয়টির সুরাহার জন্য। পরে কি হয়েছে আমার জানা নেই। আর আমি কোনো পক্ষপাতিত্ব করিনি।’

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি হাফিজুর রহমানকে মারধর করিনি। একটু ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। তারা কোনো টাকা পাবে না। তাদের হিসাব অনেক দিন আগেই মিটিয়ে দিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চৌধুরী মন্টুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার বর্তমান ওসি সেলিম রেজা বলেন, ‘আমি থানায় কিছুদিন আগে যোগ দিয়েছি। মারধরের ঘটনা জানা নেই। যদি থানায় অভিযোগ করা হয়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আরপি/এসআর-০৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top