রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৬ই চৈত্র ১৪৩০


নওগাঁয় বৃষ্টি না হওয়ায় জমি ফেটে চৌচির, ব্যাহত আমন চাষ


প্রকাশিত:
১৮ জুলাই ২০২২ ০৪:২৯

আপডেট:
১৮ জুলাই ২০২২ ০৭:১৫

আষাঢ় শেষে শ্রাবণ মাস শুরু হলেও তেমন বৃষ্টি নেই নওগাঁয়। প্রখর রোদে সব শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আমন ধান রোপণ। বিকল্প পদ্ধতিতে পানি দিয়ে বীজতলা তৈরি হলেও বৃষ্টির অভাবে অনেকে চাষাবাদ করতে পারছেন না। আবার অনেকে নলকূপ বা নীদ-নালা থেকে পানি দিয়ে জমিতে চাষাবাদ করেছেন। তবে খরচের অভাবে নিয়মিত পানি দিতে না পারায় মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া এ বছর আউশ ধান রোপণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির দেখা মেলে। বৃষ্টির পানি জমিতে বেঁধে রেখে চাষাবাদ করা হতো। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করতো। নদী-নালা, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি দেখা যেত। এসব পানি দিয়ে জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হতো। আবার অনেক কৃষক ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বোরো জমিতেও আমন ধান রোপণ করতেন। এতে ভাগ্য ভালো হলে কোনো বছর আমন ধান ঘরে উঠতো। আবার কখনো লাগানোর কিছুদিনের মধ্যে ফসল ডুবে যেত।

কিন্তু এ বছর আষাঢ় মাস শেষ হলেও বৃষ্টির দেখা নাই। কাঠফাটা তপ্ত রোদে ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণীকুল। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে সেচ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির আশায় নওগাঁর সাপাহার উপজেলার গোয়ালা ঈদগাহ মাঠে দুই রাকাত ইস্তিস্কার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত করেছেন মুসল্লিরা।

শিক্ষক মাওলানা শামসুদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে চারদিক থৈ থৈ করে। এ বছর ঠিক তার উল্টো। আষাঢ় মাস শেষ হলেও এ বছর তেমন বৃষ্টির দেখা নেই। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আমরা তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা ও বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছি। আল্লাহ যেন এ পরিস্থিতির অবসান ঘটান।’

সাপাহার উপজেলার গোয়ালভিটা গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছর থেকে তিনবিঘা জমিতে আমনের আবাদ করতাম। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির পানি হলে চাষাবাদ করতাম। এ বছর বৃষ্টি না হওয়া ধান রোপণ করা পিছিয়ে পড়ছিল। এ কারণে গভীর নলকূপের (ডিপ) পানি দিয়ে কয়েকদিন আগে আড়াই বিঘা জমি লাগানো হয়েছে। বাকি ১০ কাঠাতে পানির অভাবে ধান লাগানো সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে ডিপের পানি দিয়ে জমি রোপণ করতে গিয়ে পানি সেচ, শ্রমিক খরচ, হালচাষ ও সার-কীটনাশক দিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে ইরি-বোরো আবাদ করতে যে ৯-১০ হাজার টাকার মতো খরচ হতো আমনেও তেমন খরচ হবে। বৃষ্টির পানি দিয়ে আবাদ করতে খরচ হতো ৫-৬ হাজার টাকা। বৃষ্টির জন্য আমরা আল্লাহর দিকে চেয়ে আছি এবং দোয়াও করেছি।’

পোরশা উপজেলার মিনা বাজার এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করার ইচ্ছা আছে। সে লক্ষ্যে এক মণ স্বর্ণা-৫ জাতের ধান দিয়ে বীজতলা তৈরি করেছি। জমিতে চারা রোপণের সময় হয়ে গেছে। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে জমি চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। ওই জমিতে নলকূপের পানিও যায় না।’

নওগাঁ সদর উপজেলার নিন্দইন গ্রামে কৃষক সাদেকুল ইসলাম বলেন, আমন ধান বৃষ্টি নির্ভর। কিন্তু এখনো বৃষ্টির কোনো দেখা নাই। বৃষ্টির আশায় ডোবার পানি দিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। এখন ডোবা-নালার পানি শেষ হওয়ায় জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানি না দেওয়ায় জমির মাটি সাদা হয়ে গেছে। ধানের গাছ শুকিয়ে হলুদ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আকাশের দিকে চেয়ে আছি কখন বৃষ্টি হবে। আর যদি এভাবে চলতে থাকে ধানের গাছ মারা যাবে। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। অনেকেই ধান বাঁচানোর জন্য ২০০-২৫০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে জমিতে সেচ দিচ্ছে। আবার অনেকেই পানির অভাবে জমিতে আবাদ করতে পারেনি।’

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে বৃষ্টি হবে। এখন যদি বৃষ্টি না হয় ফসল বাঁচানোর জন্য কৃষকদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আবাদ করতে পানি সেচ করায় খরচও অনেক বেড়ে যাবে। যারা জমিতে ধান রোপণ করেছেন যদি সেচ না দেয় তাহলে ধান মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরেন্দ্র এলাকায় কৃষকরা চাষাবাদের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করছে। আর বৃষ্টি না হওয়ায় ধান রোপণেও বিলম্ব হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top