রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১১ই বৈশাখ ১৪৩১


বাড়ছে পাম অয়েলের দাম


প্রকাশিত:
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:২৪

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:৫৯

ফাইল ছবি

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার জনপ্রতি বার্ষিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে ১৮ দশমিক ৪ কেজিতে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে জনপ্রতি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১৫.৩ কেজি। গত চার বছরে দেশে ভোজ্য তেলের ব্যবহার ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ২২.২ লাখ টন থেকে ২০১৯ সালে ৩০.৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যদিও করোনা অতিমারিকালে এর ব্যবহার ১.৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৩০.৩ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দেশে প্রচলিত সব ভোজ্য তেলের মধ্যে পাম অয়েলের ব্যবহার সর্বোচ্চ ৫৫-৬০ শতাংশ।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে ভোজ্য তেল ও চর্বির ব্যবহার প্রবণতা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, করোনা অতিমারির কারণে ইদানিং পাম অয়েল আমদানিতে কিছুটা নিম্নগতি পরিলক্ষিত হলেও ব্যবহারের মাপকাঠিতে এটি এখনো শীর্ষ স্থানে রয়েছে। সর্বাধিক ব্যবহূত ভোজ্য তেল হওয়া সত্ত্বেও পাম অয়েলকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যার মধ্যে একটি হলো এর ইমেজ সংকট। এই সংকট উত্তরণে কার্যকর প্রথাগত মিডিয়া ও সামাজিক মিডিয়ায় ক্যাম্পেইন পরিচালনা দরকার। বাজারে খুব কমসংখ্যক পাম অয়েল ব্র্যান্ড না থাকার কারণে এটি ততটা দৃশ্যমান নয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।

পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশসমূহের আন্তঃসরকারি সংগঠন কাউন্সিল অব পাম অয়েল প্রোডিউসিং কান্ট্রিজ (সিপপ্স) ওয়েবিনারটির আয়োজন করে। বাংলাদেশ ভার্সনটির লক্ষ্য ছিল পাম অয়েলের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার, এর গুণগত বৈশিষ্ট্য, বর্ধিত ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটাতে এবং এসডিজির গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষ্য অর্জনে এর ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা। ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল কাউন্সিলের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও নেপাল) এ কে এম ফখরুল আলম।

আন্তর্জাতিক ভোজ্য তেল বাজারে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমদানিকৃত পাম অয়েলের ওপর অনেকখানিই নির্ভরশীল। দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর আমদানি চাহিদাও বাড়ছে। ওয়েবিনারটি সঞ্চালন করেন অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক সেফটি কম্যুনিকেশন্স অফিসিয়ালস (এপকো)-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াশ কনসাল।

সিপপ্সের নির্বাহী পরিচালক এবং বিশিষ্ট ভোজ্য তেল বিশেষজ্ঞ ড. ইউসফ বাসিরন বলেন, পাম অয়েল শিল্পে বাংলাদেশের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেশটি সর্ববৃহৎ পাম অয়েল আমদানিকারকদের একটি। পাম অয়েলের গুণগত মান, খাবারের স্বাদ এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে এর ভূমিকার কারণে অনেক বাংলাদেশি খাবারেই এটি বহুলভাবে ব্যবহূত হচ্ছে যেমন বিরিয়ানি, খিচুড়ি ইত্যাদি। ঘরে রান্নাবান্না ছাড়াও পাম অয়েল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প এবং হোটেলগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়। পাম অয়েল সর্বাধিক স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর এবং সাস্টেইনেবল ভোজ্য তেল। পাম অয়েল শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন হবে সাস্টেইনেবল অনুশীলনভিত্তিক, যার মূলে রয়েছে পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতি বিষয়ক ভাবনা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্মল হোল্ডারদের জন্য উন্নত জীবন এবং পরিবেশ সুরক্ষার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা হবে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া খাদ্য এবং কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সেন্টারের প্রধান ড. পুষ্প গিরিওনো তার বক্তব্যে জানান যে, পাম অয়েলে স্যাচুরেটেড এবং আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সমান ভারসাম্য বিদ্যমান। তিনি আরো জানান যে, ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পাম অয়েল স্ট্রেস ও ডিএনএ ড্যামেজ প্রতিরোধে সক্ষম। বিশ্বব্যাপী ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতা নিরসনেও পাম অয়েলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের সিনিয়র ব্যবস্থাপক ফয়সাল মাহমুদ পাম অয়েল বিপণনে ‘কম্যুনিকেশন্স’-এর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ভোক্তাদের মধ্যে পাম অয়েলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং এর উপকারিতা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সম্মিলিত ও টেকসই উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি পাম অয়েলের সঠিক ইমেজ সৃষ্টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

সিপপ্সের উপ-নির্বাহী পরিচালক ডুপিটো ডি-সিমামোরা বলেন, ‘উৎপাদনকারী ও ভোক্তা উভয় দেশগুলোকেই ভোজ্য তেলের সাস্টেইনিবিলিটি নিশ্চিত করতে হবে।’ পাম অয়েলের ইমেজ সংকট কাটাতে তিনি ডিফেন্সিভ না হয়ে অফেন্সিভ হওয়ার পরামর্শ দেন।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top