৭ মামলার আসামীর সাথে আঁতাত না করায় ওয়াহিদার উপর হামলা
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৭ মামলার আসামী ও ২নং পালশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ময়নুল ইসলাম মাষ্টারের অবৈধ কাজে বাধা দেওয়ায় সেদিন রাতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ ওয়াহিদা খানমের উপর হামলা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণ।
সূত্র জানায়, ইউএনও ওয়াহিদা খানম আইনি পদক্ষেপে কঠোর অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে ঘোড়াঘাট উপজেলাবাসীকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ভূমিদখল,পুকুর চুরিসহ সকল প্রকার অন্যায় ও অপকর্ম নির্মূলে ছিলেন বদ্ধপরিকর। যার ফলশ্রুতিতে ইউএনও'র প্রতিপক্ষ হয় স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু অসৎ ব্যক্তিবর্গ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাফে খন্দকার শাহানশাহর গোপন যোগসাজশেই ঘটে উপজেলার সকল অপকর্ম।
উপজেলার ডুগডুগি বাজারের বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সমগ্র ঘোড়াঘাট উপজেলায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে এই আওয়ামী লীগ নেতা শাহানশাহ।
জনশ্রুতি আছে শাহানশাহ সিন্ডিকেটের অন্যতম এক প্রভাবশালী নেতা ময়নুল ইসলাম মাষ্টার। সরকার দলীয় এই নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, জমি দখল, আসামি ছিনতাই, মাদকব্যবসাসহ ৭টি মামলা।
ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদে কর্মরত এক ব্যক্তি জানান, সর্বশেষ উপজেলার ডুগডুগি বাজারে হাতেম আলী নামের এক ব্যবসায়ীর পাকা দোকান ঘর ভেঙে দখলে নেয় ময়নুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।এবিষয়ে গত ২৭ আগস্টে ইউএনও বরাবর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১সেপ্টেম্বর ইউএনও কর্তৃক ময়নুল মাষ্টার বরাবর একটি নোটিশ প্রদান করা হয়।নোটিশ অনুযায়ী, পরদিন ২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ময়নুল মাষ্টারকেও সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, এ নোটিশ পেয়ে ময়নুল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাফে খন্দকার শাহানশাহর কাছে যায়।এরপর তাদের পক্ষ থেকে ইউএনও বরাবর গিয়ে এই কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চাপ প্রয়োগ করেন।
উল্লেখ্য, সেদিন দিবাগত রাতেই ইউএনওর উপর হামলা চালানো হয়। এরপর থেকেই নিজেদের আড়াল করে রেখেছে শাহানশাহ সিন্ডিকেট।
এদিকে ময়নুল মাষ্টারের মামলার বিষয়ে ঘোড়াঘাট থানার অফিসার ইনর্চাজ আমিরুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ ও ডিএমপি’র ঢাকা সবুজ বাগ থানায় মোট ৭ মামলা রয়েছে। ২০০৬ সালে ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-১, ২০১১ সালে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা নং-২৩, ২০১৬ সালে নবাবগঞ্জ থানার মামলা নং-১, ডিএমপি ঢাকা সবুজ বাগ থানার মামলা নং-৮, ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৬, ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৭ ও সর্বশেষ ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং-২৩।
এর মধ্যে মামলা নং-১, ২ ও ৩নং ক্রমিক নং মামলা গুলো বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন এবং বাকিগুলো তদন্তাধীন। ৭ টি মামলার মধ্যে সবুজ বাগ থানার মামলা সে কর্কেন নামক মাদক পাচারের মামলায় জড়িত।
এছাড়া অপহরণ ও মাদক সহ মারামারি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ মামলা ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার ধুলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্পী ও ক্ষুদ্র মেরামত কাজের জন্য ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত টাকা ২০১৯ সালে আগষ্ট মাসে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান মন্ডল কাজ শুরু করলে ময়নুল মাষ্টার ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে। ৩ লক্ষ মধ্যে ২০/০৮/২০১৯ইং তারিখে ৭৫ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে আসে। গত ১৪/০২/২০২০ইং তারিখে প্রধান শিক্ষককে মারপিট করে আবারোও ৬৫ হাজার টাকা নেয়। এসময় তার মারপিটে প্রধান শিক্ষক ৫ দিন ঘোড়াঘাট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। বাকি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার জন্য ২০/২/২০২০ইং তারিখে ময়নুল মাষ্টার প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে আসে ডুগডুগী বাজারে বাবু নামের এক চায়ের দোকানে আটক করে ১০০টাকা মুল্যের ৩টি নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ঘোড়াঘাট থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এজাহারটি গত ৩০/০৩/২০২০ইং তারিখে মামলা হিসেবে রেকর্ড ভুক্ত করা হয়। যাহার মামলা নং-২৩। এসব ঘটনায় গত মার্চে দিনাজপুর ডিবি পুলিশ ডুগডুগীহাট বাজার থেকে ময়নুল মাষ্টারকে গ্রেফতার করে ঘোড়াঘাট থানায় সোপর্দ করে।পরবর্তীতে জেল হাজতে পাঠানো হলেও কিছুদিন পরেই ছাড়া পায় এই আসামি।
ওসি আমিরুল ইসলাম আরও বলেন, অভিযুক্ত ময়নুল মাষ্টারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি,পুকুর দখল,রাস্তার গাছ কাটা,গুচ্ছগ্রামে নির্মান কাজে চাদা বাজি স্থানীয় ২নং পালশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবিরুল ইসলামকে মারধর, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, ককেন ব্যবসা, পুলিশি এ্যাসোল্ট, মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা সহ বিভিন্ন অপকৃতির মামলা রয়েছে।
আরপি/আআ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: