শার্শা-কাশিপুর ভয়ঙ্কর এক সড়ক
যশোরের শার্শা উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের স্মৃতি বিজড়িত শার্শা কামারবাড়ি মোড় থেকে কাশিপুর বাজার পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার সড়কটি বর্তমানে ভয়ঙ্কর সড়কে পরিনত হয়েছে। বেহাল দশা, ছোট-বড় গর্তসহ ইটের সোলিং উঠে গিয়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
গত কয়েক বছর ধরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলেও দুর্ভোগ লাঘবে এখনো কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও এই সড়কে চলাচলকারী কয়েক লক্ষ মানুষ। অবস্থা এতই নাজুক যে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কারণে সড়কটি ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
শার্শা উপজেলার সঙ্গে নিজামপুর, ডিহি, লক্ষণপুর ইউনিয়নসহ পাশের উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক এটি। এই সড়ক দিয়ে দুইটি কলেজ, বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ চলাচল করে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কার না করায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে অনেক আগেই বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছিল। এরপর সড়কটির খানাখন্দগুলো বন্ধ করা হয় পিচের ওপর ইটের সলিং দিয়ে। ইটের সলিংগুলোও এখন নষ্টের পথে। ফলে বিপদ ও ভোগান্তির শেষ নেই। হালকা বৃষ্টিতে পণ্যবাহী যানবাহন খাদে আটকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বিপাকে পড়ছেন বিভিন্ন স্থানে কাজে যাওয়া পথচারী সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী এবং উপজেলা ও জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা।
প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ে বিকল হচ্ছে ছোট-বড় যানবাহনগুলো। রাস্তার খানাখন্দ ও গর্তের কাদাপানি ছিটকে পথচারী, শিক্ষার্থী ও দোকানে বসা জনসাধারণকে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে মোটরসাইকেল, ভ্যান, ইজিবাইক এবং থ্রি-হুইলার খাদে উল্টে ও কাদায় পিছলে দুর্ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কের এমন বেহাল দশা হলেও সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
শার্শা-কাশিপুর সড়কের স্বরূপদহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে কবরস্থানের পাশে, গোড়পাড়া কুমার বাড়ি ছাড়িয়ে, গোড়পাড়া উত্তরপাড়া বনমান্দার মোড় সাইনদ্দির বাড়ি, গোড়পাড়া মোল্লা বাড়ি মসজিদ, তেবাড়িয়া ইউনুচের বাড়ি, দুদু মিয়ার রাইস মিল, সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ গেট, শাড়াতলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। শাড়াতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় প্রায় ভারী যানবাহনে উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে।
সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী জানায়, শাড়াতলা থেকে নিজামপুর আসতে যেখানে সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের রাস্তা সেখানে রাস্তার বেহাল দশায় ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। আবার কলেজে যেতে রাস্তার অবস্থা খারাপ জানিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে গাড়িচালকরা। দেশের উন্নয়ন হলেও শার্শার উত্তরের এই সড়কটির গত কয়েকবছরে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, যা খুবই হতাশাজনক। এই সড়কের কারণে উপজেলার উত্তর শার্শার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে।
নারী পথচারীরা জানান, এই সড়ক দিয়ে কোনো অন্তঃসত্তা নারী স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না। অসুস্থ রোগীরা দূরের হাসপাতালে যেতে যেতেই মৃত্যুর মুখে পড়েন। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার খুবই প্রয়োজন। না হলে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা দুর্ঘটনার সঙ্গে মৃত্যুর মিছিলও দীর্ঘ হতে থাকবে।
শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী এম এম মামুন হাসান এ বিষয়ে জানান, সড়কটির শার্শা থেকে গোড়পাড়া, গোড়পাড়া থেকে ব্যাংদাহ এবং গোড়পাড়া থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মোট তিনটি ভাগে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ইউকেয়ার প্রকল্পের ডিপি অন্তর্ভুক্ত। ড্রইং ডিজাইনের কাজ চলছে। সেটি শেষ হলে খুব শিগগির টেন্ডার হবে এবং তার পরেই কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ণ চন্দ্র পাল জানান, সড়টি উন্নত ও প্রশস্ত করে তৈরি হবে। যার ফলে এই সড়ক দিয়ে পাশের ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর, মহেশপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের পথ সুগম হবে। পাশাপাশি দুর্ভোগ থেকে মুক্তি এবং এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে করছি।
আরপি/ এসএইচ ১১
বিষয়: যশোর উপজেলা সড়ক দুর্ঘটনা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: