রাজশাহী শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


দশ টাকার ভাড়া নিয়ে

রিকশাচালককে কিল-ঘুষি-লাথি, শেষে রড দিয়ে হত্যা


প্রকাশিত:
৪ আগস্ট ২০২১ ১৭:১০

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ২৩:১৭

প্রতীকী ছবি

এ কেমন বর্বরতা! মাত্র ১০ টাকার ভাড়ার দ্বন্দে একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব? হ্যা, অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক এরপর কিল-ঘুষি-লাথি ও এক একপর্যায়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক আব্দুল হালিমকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন ফজলুল হক নামের এক ব্যক্তি। ফজলুল হককে একমাত্র আসামি করে রাজধানীর আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত আবদুল হালিমের ছোট ভাই মোহাম্মদ ওমর ফারুক। আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নিহত আব্দুল হালিমের ছোট ভাই ওমর ফারুক বলেন, আমার ভাই আব্দুল হালিম শুধু আসামিকে বলেছিল, ‘একজন যাত্রী নিয়ে এতদূর এসেছি আমি। আমার কোনও লাভ হবে না ৫/১০ টাকার জন্য এমন কেন করছেন আপনি।’ একপর্যায়ে ভাড়া নিয়ে দুজনের তর্কবিতর্ক হয়। আসামি ফজলুল হক ভাইকে কিল-ঘুষি দেয়। এরপর ভাইকে লোহার রড দিয়ে কানের নিচে আঘাত করে। ভাইয়ের মাথা থেকে মগজ বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমার ভাইটা চলে যায়।অল্প সময়ে ভাই হারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ভাইয়ের মৃত্যুতে পরিবারের সবাই ভেঙে পড়েছি। ভাইয়ের দুই ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। ছোট দুইটা ছেলে মেয়ে এখনও ছোট কিছুই বোঝে না বারবার বলে বাবা কোথায়? আবার কান্না করে বাবার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ভাবির অবস্থা তেমন একটা ভাল না। ভাইকে হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। রিকশাচালক হয়েছে এটাই কি তার ভুল ছিল? এর জন্যই কি তার এভাবে চলে যেতে হলো?

ওমর ফারুক আরও বলেন,৫/১০ টাকা ভাড়া নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মাঝেমধ্যেই যাত্রীরা এভাবে চড়-থাপ্পড় দিয়ে নির্যাতন করে । এগুলো যদি জনগণ ও সরকারের নজরে আসতো। নির্যাতনকারীদের দি আগে থেকেই আইনের আওতায় এনে তাদের বিচার করতো তাহলে আর এভাবে আমার ভাইকে হারাতে হতো না। আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করার জন্য আমরা আইনের কাছে আসামির সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে যে ভিকটিমকে আসামি ফজলুল হক ভাড়া নিয়ে প্রথমে তর্ক-বিতর্কের পরে চড় থাপ্পড় কিল-ঘুষি দেয়। এক পর্যায়ে আসামি ভিকটিমের রিকশায় থাকা একটি রড নিয়ে তার মাথায় আঘাত করে । যার ফলে তার মাথা থেকে মগজ বের হয়ে যায়। আমরা লাশটিকে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই আমরা দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।

এর আগে সোমবার ( ২ আগস্ট ) ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসানের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম আসামি ফজলুল হককে হাজির করেন। এসময় আসামি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি ফজলুল হকের জবানবন্দি রেকর্ড করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে ভিকটিমের ছোট ভাই ওমর ফারুক উল্লেখ করেন, আব্দুল হালিম(৪০) পেশায় একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। গত ২ আগস্ট ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে আব্দুল হালিম অটোরিকশা নিয়ে ভেড়ামারার উদ্দেশে বের হন। এরপর সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে বাগবাড়ি মাদ্রাসা স্ট্যান্ড ধেতে যাত্রী ফজলুল হককে রিক্সায় তুলে ৮টার সময় আশুলিয়া থানাধীন ইউসুফ মার্কেটের তিন রাস্তার মোড় সংলগ্ন মঞ্জুর ইলেকট্রনিক অ্যান্ড হার্ডওয়ার দোকানের সামনে পৌঁছে দেন। এরপর ফজলুল হক ভাড়ার টাকা নিয়ে ভিকটিমের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করে। একপর্যায়ে ফজলুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে চালক আব্দুল হালিমকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। এতে রিকশাচালক রাস্তার ওপর পড়ে যান। পরে ফজলুল হক রিকশা থাকায় লোহার রড দিয়ে আব্দুল হালিমকে মাথার ডান পাশে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন রিকশাচালক হালিম।

এ ঘটনায় ফজলুল হককে একমাত্র আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top