রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


সৈকতে ফের ভেসে এল মৃত তিমি


প্রকাশিত:
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:০৯

আপডেট:
১০ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১১

কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে ফের ভেসে এসেছে একটি মৃত তিমি। শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোর ৬টায় এটিকে বালিতে আটকে থাকতে দেখা যায়।

এর আগে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুরের জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসে বড় একটি মৃত তিমি। এটি একইদিন রাত ১টায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। গবেষণার জন্য হাড় ও অন্য প্রত্যঙ্গ সংগ্রহের জন্য পুঁতে ফেলা স্থানটি সংরক্ষণ করছে সমুদ্র ও মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট।


শুক্রবারের মৃত তিমির পাওয়া যায় যে স্থান থেকে তা থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দক্ষিণে ক্ষুদ্র তিমির মরদেহটি পাওয়া যায়। ২৫-৩০ ফুট লম্বা এ তিমিটিও অর্ধগলিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর কুমার সাহা।

তিনি জানান, শুক্রবার ভেসে আসা মৃত তিমির দেহাবশেষ সৈকতের বালিয়াড়িতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। জোয়ারের পানিতে আবার ভেসে যাওয়া থেকে দেহটি আটকাতে বন বিভাগের শতাধিক কর্মী চেষ্টা চালায়। এসময় প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী এবং উৎসুক জনতাও এতে সামিল হয়।

এরপর ভেটেনারি সার্জনরা ময়নাতদন্ত করার পর এক্সকেভেটরের সাহায্যে মরদেহটি পুঁতে ফেলা হয়।

রেঞ্জ কর্মকর্তা আরো জানান, শনিবার ভোর ৬টায় একই সৈকতের ভিন্ন পয়েন্টে আরো একটি মৃত তিমির দেহাবশেষ বালিয়াড়িতে উঠে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, এটিও আগে মরে ভাসতে ভাসতে তীরে উঠে এসেছে। দুর্গন্ধ বেশি ছড়ানোর আগেই গতকালের মতো এটিও পুঁতে ফেলার উদ্যোগ চলছে।


বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পিএইচডি ফেলো মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান, শুক্রবার তীরে উঠে আসা মরা প্রাণীটি ব্রাইড হোয়েল প্রজাতির ও এটি প্রাপ্ত বয়স্ক। নীল তিমি গ্রুপের একটি প্রজাতি হল ব্রাইড হোয়েল। এটি আমাদের বঙ্গোপসাগরেরই বাসিন্দা।

তিনি আরও জানান, তিমি সাধারণত দলবেধে চলে। কোনো কারণে দলছুট হলে অনেক সময় তিমি মারা যায়। এটি এবং শনিবারে তীরে আসা তিমিটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

এসব তিমি অন্তত ১০-১২দিন আগে মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তিমিগুলোর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও অজানা রয়েছে।

জানা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমির ছবির সঙ্গে প্রায় সকলেই পরিচিত হলেও বাস্তবে মাছটি দেখেছেন দেশের খুব কম মানুষই। এমনকি সমুদ্র উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের মানুষও কদাচিৎ দেখেছেন এ মাছটি।

শুক্রবার দুপুরে সামুদ্রিক জোয়ারের সঙ্গে ভেসে আসে ৪৫ ফুট দীর্ঘ মৃত নীল তিমি। শনিবার সকালেও এসেছে আরো একটি তিমির নিথর দেহাবশেষ। ঘটনাগুলো স্থানীয়রা জানতে পারলে বাস্তবে তিমি দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে।

গণমাধ্যম ও ফেসবুকের বদৌলতে খবরটি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার শহর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ এমনকি চকরিয়া থেকেও উৎসুক মানুষ হিমছড়ি সৈকতে এসে হাজির হয়। ঘটনাস্থলে আসেন জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর, বনবিভাগ, র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউট ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

ময়নাতদন্তের জন্য আসেন জেলা প্রাণী সম্পদ ও ওয়াইল্ড লাইফ বিভাগের সার্জনসহ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সাংবাদিক আহমদ গিয়াস বলেন, এর আগে ১৯৯০ সালের এই সময়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ভেসে এসেছিল একটি মৃত নীল তিমি। যেটি আকারে ছিল প্রায় ৬৫ ফুট। সেই তিমির কঙ্কাল সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, তিমির দেহাবশেষের প্রয়োজনীয় অংশ সমুদ্র ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের পরামর্শে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাংস পঁচে গেলে হাড়গুলো তুলে যেন সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য পুঁতে ফেলা অংশটি ঘিরে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শনিবার ভেসে আসা তিমির দেহাবশেষও একই পদ্ধতিতে পুঁতে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

 

 

আরপি / আইএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top