রাজশাহী বুধবার, ২৩শে এপ্রিল ২০২৫, ১০ই বৈশাখ ১৪৩২

দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা পেলেন ঋত্বিক সম্মাননা পদক


প্রকাশিত:
৫ নভেম্বর ২০২১ ০৮:০১

আপডেট:
৫ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় রাজশাহীতে ঋত্বিক ঘটকের ৯৬ তম জন্মদিনে দেশের বিশিষ্ট দুই চলচ্চিত্র নির্মাতা পেলেন ‘ঋত্বিক সম্মাননা পদক-২০২১’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের বসতভিটায় তার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই সম্মাননা পদক দেয়া হয়। এছাড়াও তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঋত্বিক চলচ্চিত্র উৎসবের।

এবারের ঋত্বিক সম্মাননা পদকপ্রাপ্তরা হলেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের অধ্যাপক জুনায়েদ আহমদ হালিম ও চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু সাইয়ীদ।

রাজশাহী ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহীর সমাজসেবী ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী।

ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন- রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাটি, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসব পরিচালক শাহরিয়ার চয়ন। এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফ হায়দারসহ রাজশাহীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে ঋত্বিক ঘটকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজশাহীর খেলাঘর আসরের অংশগ্রহণে সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও চলচ্চিত্রাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে ঋত্বিক সম্মাননা পদক তুলে দেয়া হয়।

এরপর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, উপমহাদেশের অন্যতম চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক কুমার ঘটক আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু এই কিংবদন্তি নির্মাতা তার কাজের মধ্যে দিয়ে এই উপমহাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে আজ চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার নির্মিত চলচ্চিত্র আজ এক বিস্ময়। এই রাজশাহীতেই রয়ে গেছে তার স্মৃতিবিজড়িত পূর্ণ বসতবাড়ী। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে।

উল্লেখ্য, ঋত্বিক কুমার ঘটক একজন খ্যাতিমান বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় এই চলচ্চিত্রকার অভিনয় ও চিত্রনাট্যেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ১৯২৫ সালের এই দিনে তিনি রাজশাহী নগরীর মিয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে দেশভাগ ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে আনায় ঋত্বিকের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।

ছাত্রাবস্থাতেই লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ঋত্বিক। তবে সে সময় নাটক ও পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র তার জীবনে বিশেষ প্রভাবক ভূমিকা রেখেছিল। তার পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমলগান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ‘যুক্তি তক্কো গপ্পো’ ছবিটি ঋত্বিক ঘটকের নিজের লেখা কাহিনি অবলম্বনে তৈরি। তবে তার প্রথম তৈরি ছবি ‘নাগরিক’ আর্থিক কারণে মুক্তি পায়নি। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও দুটি উপন্যাস, বেশ কিছু নাটক, কিছু ছোটগল্প এবং চলচ্চিত্র ও শিল্পকলাবিষয়ক প্রবন্ধ রচনা করেছেন ঋত্বিক। সম্পাদনা করেছেন ‘অভিধারা’ ও ‘অভিনয় দর্পণ’ নামে দুটি পত্রিকা।

শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ঋত্বিক ভারত সরকারের দেওয়া সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার ও সেরা পরিচালকের সম্মাননা অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্রকার প্রয়াণ হয়।

 

 

আরপি/এসআর-১৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top