রাজশাহী সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ


প্রকাশিত:
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৩১

আপডেট:
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:৩৮

 

গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরের বছর ২০১৫ সালে মেয়াদ শেষ হয় বর্তমান কমিটির। এরপরে পার হয়েছে চার বছর। তবুও মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির নেতারা বসে আছেন মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে।

এতে করে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকলে পদ জুটছে না বহু মেধাবী ছাত্র নেতার। এতে করে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা। তাদের এই হতাশা ও দীর্ঘ আশা নিয়ে ক্রমেই রাজনীতির মাঠে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, এবং একসময় থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন তারা।

২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রকি কুমার ঘোষকে সভাপতি, মাহমুদ হাসান রাজিবকে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পাঁচ জনসহ মোট ১৬১ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তৎকালীন সময়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তার সময়ে দুর্দান্ত সক্রিয়; বলতে গেলে চাঙ্গা সময় পার করেছে মহানগর ছাত্রলীগ। নগরে আওয়ামীলীগের সহযোদ্ধা হিসেবে রাজপথে নানা সময় সংগঠনটির বলিষ্ট ভূমিকা প্রসংশিত ছিল।

তবে মেয়াদ উত্তীর্ণের পর থেকেই খেই হারিয়ে ফেলে নগর ছাত্রলীগ। ছয় মাস পর থেকেই ধীরে ধীরে সে সংগঠনের কর্মস্পৃহা ও জৌলুস হারিয়েছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ শেষ হবার ৯০ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি করার নির্দেশনা থাকলেও ২০১৯ সালে এসেও তা কার্যকর করা হয়নি।
এরমধ্যে সাবেক এ কমিটির পদধারী অনেক নেতাই ছাত্রলীগ করার শর্তাবলীর অনেক নিয়মই ভঙ্গ করেছেন। গঠনতন্ত্রের ৫ এর ক উপ-ধারা অনুযায়ী বিয়ে করলে সংগঠন ছাড়তে হয়। কিন্তু সম্প্রতি সাড়ম্বরে বিয়ে করেছেন সভাপতি রকি কুমার ঘোষ।

দেশের ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই ছাত্র সংগঠন তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাখাতের উন্নয়ন এবং ছাত্রদের অধিকার আদায়ে অতীতে ও বর্তমানে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। অথচ চার বছর আগে মেয়াদ ফুরোলেও নতুন নেতৃত্ব পায়নি নগর ছাত্রলীগ। সংগঠনের কার্যক্রম প্রায় নিস্প্রভ ও নিস্তেজ। এমন নাজেহাল অবস্থার অবসান ঘটাতে নগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি চান পদপ্রত্যাশীরা।

এসকল বিষয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষের সাথে কথা হয়। নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি ঘোষণার জন্য একাধিকবার বর্তমান মেয়র সাহেবকে বলা হয়েছে। মেয়র সাহেব তার সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী কমিটি দেবেন। সম্মেলনের জন্যও আমরা বারবার চেষ্টা করেছি; ঢাকাতেও যোগাযোগ করেছি, কোন কাজ হয়নি। তবে চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে সম্মেলন হওয়ার কথা। এর জন্য আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারি বরাবর আবেদন করেছি। শুধু আমরা চাইলেই হবে না আমাদের অভিভাবক লিটন ভাইকেও চায়তে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সময় শেষ হয়েছে অনেক আগেই। আমরা পদ ছাড়ার জন্য তৈরি আছি। ছাত্রলীগ ছেড়ে অন্য কোন সংগঠন করতে হবে। রাজনীতি আমার রক্তে, আমার নেশা। তবে ছাত্রলীগ করার বয়স নেই, তাই ছাত্রলীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চায়। লিটন ভাই যদি আওয়ামী লীগে পদ দেয় করব, পদ না দিলে বসে থাকব। তবুও রাজনীতি ছাড়ব না। সম্মেলনের মধ্যে চলতি মাসেই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান এই ছাত্রনেতা।

মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজীবও একই কথা বলেন।

সাবেক কিংবা নতুন আওয়ামীলীগের স্বার্থে যেকোন সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ বা নতুন নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ও সচল থাকতে চান পদ প্রত্যাশীরাও। তবে রাজনীতিতে এগিয়ে চলা ও দলকে চাঙ্গা রাখতে অনেকেরই মনে স্বপ্ন বেঁধেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্রসংগঠনে একটা পরিচয়। এ কারনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের গন্ডি পেরিয়ে এবারে হয়তো সংগঠনকে নিয়ে নিজের চিন্তার স্বাক্ষর রাখতে পারবেন মহানগরে।

অন্যদিকে, নতুন কমিটিতে আবারো সুযোগ পেলে অনেকেই দীর্ঘদিনের অভিঙ্গতার প্রতিফলন দেখাতে চান। পাশাপাশি রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগকে গতিশীল করার লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে এই মেয়াদোত্তীর্ণ, অছাত্র, বিবাহিত, গঠনতন্ত্র বিরোধী কমিটি বাতিল এবং সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন অনেক ছাত্রনেতা।

গঠনতন্ত্র মেনে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ নতুন কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাবে এমনটা চাওয়া নেতাকর্মীদের।

আরপি/ এএন



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top