রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

ট্রেনের বগিতে বঙ্গবন্ধু, উচ্ছ্বসিত শিশুরা


প্রকাশিত:
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪২

আপডেট:
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩৯

ছবি: রেল জাদুঘর

‘আমি এই রেল জাদুঘর দেখে খুবই গর্বিত। এখানে অনেক কিছু দেখলাম, অনেক কিছু শুনলাম। কিভাবে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষায় পরিণত হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে দেশ স্বাধীন করলো সেসব শুনলাম’- কথাগুলো দশ বছরের শিশু ইয়াসিন সিদ্দিকীর।

রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকায় ইয়াসিনের দাদার বাড়ি। বাবার চাকরির সূত্রে বাস করেন নীলফামারীর সৈয়দপুরে। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সে। শীতকালীন ছুটি কাটাতে স্বপরিবারে তার রাজশাহী আসা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে রাখা রেল জাদঘর দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সী দর্শনার্থীরা। শুধু রেল ভ্রমণকারীরাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এখানে আসছেন অনেকেই। স্কুল পড়ুয়া সন্তানদের নিয়ে দলে আসছেন অনেকেই। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে উদ্যোগটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলেও আশা অভিভাবকদের।

দেখা যায়, বগির এক প্রান্তে বড় এলইডি মনিটরে ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান প্রচারিত হয়। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রয়েছে একটি বুক শেলফও। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ৬২টি বই স্থান পেয়েছে শেলফে। ১২টি টেবিলে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গৌরবের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ, হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ, বঙ্গবন্ধুর আদি বাড়ি, বঙ্গবন্ধুর সমাধিসহ মুক্তিসংগ্রামের দুর্লভ চিত্র। সজ্জিত রয়েঝে বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা পত্রও। আর জাদুঘরের বহিরাবণ সজ্জিত করা হয়েছে ‘৫২র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ‘৭১র মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ধারাবাহিক সংগ্রামের উপর চিত্রিত ম্যুরালের মাধ্যমে।

জাদুঘরের ভেতরে কানে হেডফোন লাগিয়ে শিশু ইয়াসিন সিদ্দিকী একটি এলইডি পর্দায় ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও তাৎপর্যের অডিও শুনছিল।

জানতে চাইলে ইয়াসিন বলে, বঙ্গবন্ধুকে বারবার গ্রেফতার করা হলো। ভাষা আন্দোলনকারীরা অনেক কষ্ট করেছিলেন রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য। আমরা তাদের জন্য অনেক গর্বিত।

সে আরও জানায়, অডিওর পাশাপাশি শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধের ছবিও দেওয়া আছে। বঙ্গবন্ধুকে প্রত্যেক বার জেলে পাঠানো হয়েছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারবে এই জন্য। তিনি জীবনের অর্ধেক জীবনই জেলে কাটিয়েছেন।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেল কলোনীর বাসিন্দা পারুল বেগম। অন্যদের মতো তিনিও এসেছিলেন রেল জাদুঘর দেখতে। এই গৃহীণি বলেন, ‘শেখ মুজিবুরের কোর্ট দেখলাম, চশমা দেখলাম, ভাষণ শুনলাম, আরও অনেক ছবি-ভিডিও দেখলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি-ভিডিও দেখলাম শুনলাম, অনেক ভালো লাগছে।’

জরুরি কাজে রাজশাহী এসেছিলেন ইবনে সিনা নামের এক কিশোর। পাবনা থেকে আসা এই কলেজ ছাত্রও বাদ যাননি জাদুঘর দর্শন থেকে। তিনি বলেন, ‘জাদুঘর দেখে ভালোই লাগলো। বঙ্গবন্ধুর আদি নিবাস, ৭ মার্চের ভাষণ, বিশেষ করে কানে হেডফোন দিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখা ও শোনা যাচ্ছে। এটা একেবারে চমকপ্রদ, অবাক হয়ে গেছি দেখে, খুবই ভালো লাগছে।’ 

ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকতা পলাশ হোসেন বলেন, জাদুঘরটিতে মূলত বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সাল থেকে তার শাহাদতবার্ষিকী ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর শৈশবকালীন জীবন ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবহুল যে রাজনৈতিক জীবনের সুন্দর দিকগুলো এখানে মনিটরের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিচ্ছবির মাধ্যমে তার বাড়ি, সমাধিস্থলসহ সব বিষয়গুলো ছোট শিশু ও নতুন প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জাদুঘরে ১২টি ডিজিটাল মনিটর রয়েছে। যেখানে হেডফোনের মাধ্যমে ছোট বাচ্চা ও নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে ছাত্ররা অনায়াসে বঙ্গবন্ধু জীবনী শুনতে পারবে। তার রাজনৈতিক জীবন, ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১’র যুদ্ধ সবগুলোই তুলে ধরা হয়েছে।

এই ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর দেশের সব স্টেশনে ধারাবাহিকভাবে ঘুরে বেড়াতে থাকবে। এর আগে ১৭টি স্টেশন ঘুরে গত ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এসেছে এই জাদুঘর। সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহীতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর ২৫ ডিসেম্বর জাদুঘরটিরাজশাহী থেকে নাটোরের দিকে নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে জয়পুরহাট হয়ে দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল অনলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। গত ১ আগস্ট গোপালগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রডগেজ জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উদ্বোধন করেছিলেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। আর চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে মিটারগেজ জাদুঘরটি প্রদর্শনের জন্য উদ্বোধন করেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top