রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

রাত পোহালেই এইচএসসি পরীক্ষা, রাজশাহীতে ঝরেছে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী


প্রকাশিত:
৬ নভেম্বর ২০২২ ০৪:৪৮

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৪৩

ফাইল ছবি

আগামীকাল রোববার (৫ নভেম্বর) সারাদেশে একযোগে শুরু হতে যাচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। তবে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতায় বিভাগের আট জেলার প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যা বোর্ডের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ২০ শতাংশ।

একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করলেও তারা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করে নি। করোনা মহামারীতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট ও বাল্যবিবাহের কারণে তারা ঝরে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার পরিবারের অর্থনৈতিক হাল ধরতে বাধ্য হওয়ায় শিক্ষা জীবনের ইতি টানতে হয়েছে অনেককে। তবে কারণ অনুসন্ধানে মানসম্মত গবেষণার প্রয়োজন বলে অভিমত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, চলতি বছর বিভাগের আট জেলা থেকে রাজশাহীর বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিবে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ৩৬ জন ছাত্র ও ৬০ হাজার ৯৮৯ জন ছাত্রী।

এছাড়াও বিজ্ঞান বিভাগের ৩৪ হাজার ৬ জন, মানবিক বিভাগের ৮০ হাজার ৯৬৪ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১৩ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৭৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বোর্ডের ২০১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

চলতি ব্যাচের একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধিত মোট শিক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৮ জন। এদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯০৯ জন। অর্থাৎ ৩০ হাজার ২৫৯ জন শিক্ষার্থী ফরম পূরণের বাহিরে রয়েছে। এদের মধ্যে ছাত্র ১২ হাজার ৫৪৪ জন ও ছাত্রী ১৭ হাজার ৭১৫। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীই ফরম পূরণের বাহিরে রয়েছে। যাদের ঝরে পড়া শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

শিক্ষার্থী ঝরে পড়া প্রসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, এটা একটা গবেষণার বিষয়। বোর্ড থেকে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার মনে হয় কোনো পদ্ধতিও নেই আমার জানামতে। আর শিক্ষার সাথে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান যুক্ত যেটা আর কোনো বিভাগে নেই।

প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ না করেই অর্থের জন্য কাজে ঢুকে যায়। আবার কিছু শিক্ষার্থী অনেক পরে টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। পাশাপাশি বিয়ের কারণে অনেক মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না বলেও জানান তিনি।

রাজশাহী কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়াকুব আলী নিশান বলেন, মূলত করোনার কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বা প্রাইভেটে তেমন উপস্থিত হতে না পেরে একাদশের পাঠই শেষ করতে পারে নি। ফলে এক বছর গ্যাপ দিয়ে এক ব্যাচ নিচে যেতে বাধ্য হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরিবারের চাপে পড়ে অনেকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে, যে জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে না। এছাড়াও করোনার কারণে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে অনেক পরিবারে। যেজন্য তাদের ইচ্ছে থাকলেও হয়তো পরিস্থিতির কারণে পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয় নি।

জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান বলেন, করোনার সময় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এছাড়াও বড় একটা অংশের বিবাহ হয়ে যাওয়ায় অনেক ছাত্রী ঝরে গেছে। করোনার মধ্যে অনিশ্চয়তার কারণে এই সংখ্যাটা আরও বেশি হয়েছে। আর স্বভাবতই বিয়ে হয়ে গেলে তারা লেখাপড়ায় ফিরে আসতে পারে না।

এছাড়াও দুই বছরের করোনায় প্রান্তিক শ্রেণির অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পড়াশোনা চালানো অভাবের কারণে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক ছেলে কৃষি কাজে জড়িয়েছে। আবার কেউ অন্য কোনো কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করেছে। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে এগুলো কিন্তু প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করা হয় নি। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। এই উদ্যোগ নিলে যারা পড়তেছে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যেতো।

দীর্ঘ প্রায় ৭/৮ মাস পর পরীক্ষা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে চাইলেই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান এই তালিকাটা করতে পারতো। একইসাথে এতো বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণও জানা যেতো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান চাইলেই বের করতে পারতো, যে কেন একটা ছেলে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকছে। তাহলে হয়তো ঝরে পড়ার সংখ্যাটা কিছুটা কমানো যেতো বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

প্রসঙ্গত, ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ ডিসেম্বর। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আসর।

পরীক্ষার সূচী অনুযায়ী, এইচএসসির প্রতিটি পরীক্ষার সময়কাল ২ ঘণ্টা। সকালের পরীক্ষা বেলা ১১টায় শুরু হয়ে চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আর বিকেলের পরীক্ষা দুপুর ২টায় শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

প্রথমে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরীক্ষা ও পরে সৃজনশীল (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমসিকিউ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় ২০ মিনিট ও সৃজনশীল পরীক্ষার সময় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। তবে প্রতিটি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।

 

 

আরপি/এসআর-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top