রাজশাহী শুক্রবার, ২৯শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০

কারিগর সঙ্কটে বিলুপ্তির পথে বেত শিল্প


প্রকাশিত:
১৫ মার্চ ২০২২ ০৯:৫২

আপডেট:
২৯ মার্চ ২০২৪ ০২:২২

ছবি: সংগৃহীত

এক সময় বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নানা রকম হস্তজাত বা কুটির শিল্প। গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ভিত হিসেবে বাঁশ ও বেত শিল্পের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। গ্রাম বাংলার ঘরবাড়ি নির্মাণ, মৎস্য শিকারের সরঞ্জাম, কৃষি যন্ত্রপাতি, গ্রহস্থালি আসবাবপত্র, জ্বালানি থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল বাঁশ ও বেতের একক আধিপত্য।

বাংলার নগর জনপদেও ঘরে ঘরে বেতের তৈরি জিনিসের কদর ছিল চোখে পরার মতো। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেল্ফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, ফুলদানি, ডোল, সাজি, ঢাকনা, খারাই, কলমদানি, হাতপাখা, চালনী, চাটাই, খেলনা থেকে শুরু করে মাছ ধরার চাই, পলো, হাঁস-মুরগীর খাঁচা, শিশুদের ঘুম পাড়ানোর দোলনা, ড্রইং রুমের আসবাবপত্র তৈরিতেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো বেত। দেশের পাশাপাশি বিশ্ব পরিমন্ডলেও শক্ত অবস্থান করে নিয়েছিল শৌখিন, রুচিশীল ও স্বাস্থ্যকর এসব পণ্য।

তবে নানা সংকটে ক্রমশই বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে এ শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। কলকারখানা ও প্রযুক্তির বদৌলতে হারাতে বসেছে শিল্পটি। প্লাষ্টিক এবং অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর অতি ব্যবহারের ফলে নতুন প্রজন্মের কাছেও পরিচয় হারাতে বসেছে শিল্পটি। প্রয়োজনীয় উপকরণ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধুমাত্র জীবন জীবিকার তাগিদে বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।

সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও ক্রমেই কমছে বেত শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট লোকের সংখ্যা। রাজশাহী ছাড়া আশপাশের জেলায় বেতের পণ্য তৈরির কারখানা নেই বললেই চলে। তাই বেতের আসবাবপত্র কিনতে এ অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকেরা আসতো রাজশাহীতেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই দশক আগেও ১৫ থেকে ২০টি দোকান থাকা নগরীর বেতপট্টির দোকান সংখ্যা কমে নেমেছে অর্ধেকে। সময়ের ব্যবধানে বেতের আসবাবপত্র তৈরির ৮টি কারখানার স্থলে ২টি কারখানায় ধরে রেখেছে বেতপট্টি নামকরণের ইতিহাস। আধুনিক সভ্যতায় প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর দাপটে চাহিদাও কমেছে বেতের পণ্যের। পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকের অভাবে কারিগর তৈরি না হওয়ার কারণেই বেত শিল্পের এই দৈনদশা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে কথা হয় নগরীর বেতপট্টির বেত বিপণি’র স্বতাধিকারী মাহবুবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাম অনেক কম হওয়ায় সেদিকেই সবাই ঝুঁকছেন। আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগে যেখানে ১০ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হতো সেখানে এখন ৩ থেকে সাড়ে হাজার টাকার বিক্রি করায় কঠিন। দৈনিক ফলে বেচা বিক্রি কমে যাওয়ায় কারিগরদের বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই নতুন কোনো কারিগর তৈরি হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে এখন শুধুমাত্র বেতপট্টি ও ঘোড়া চত্বরেই বেতের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। বেতপট্টিতে দুইটি কারখানা ও চারটি দোকান এবং ঘোড়া চত্বরে তিনটি কারখানা ও ৭/৮টি দোকানেই টিকে আছে রাজশাহীর বেত শিল্প। বাঙালির এই শিল্প ধরে রাখতে ব্যক্তিগত কিংবা সম্মিলিত উদ্যোগ নেই বললেই চলে। এই শিল্পকে রক্ষায় সরকারে উদ্যোগ ও সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহবুবুর রহমান।

চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে বেতে আনতে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হয় বলে যুক্ত করলেন একই দোকানের আলম শেখ।

তিনি জানান, বর্তমানে বেতের জিনিসপত্র শখে রূপ নিয়েছে। তেমন বেচা-বিক্রি না থাকায় লোকসান ছাড়া লাভের মুখ দেখা দায়। তবে কারিগর ও মূলধন বাড়ানো গেলে বিক্রি বাড়তো বলে মনে করেন দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে বেতের কাজ করা এই কারিগর।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) রাজশাহীর উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) জাফর বায়েজিদ বলেন, সমস্ত শিল্পকে নিয়েই বিসিক কাজ করে।

বিসিক মূলত শিল্পের উন্নতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা তৈরি নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই আপাতত বিশেষ কোনো শিল্পকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

 

 

 

আরপি/এসআর-০৬



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top