রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

গান বাজনা আর মেলা ছাড়াই দুর্গাপূজার প্রস্তুতি


প্রকাশিত:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:০০

আপডেট:
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩৯

ছবি: শেষ মুহুর্তের কাজে ব্যস্ত প্রতীমা শিল্পীরা

আসছে শারদীয় দুর্গাপূজা। সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ব্যস্ত সময় পার করছে সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১১ অক্টোবর থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বলে জানা গেছে। করোনার কারণে এবারও দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ফিকে হতে চলেছে। পূজার সেই চিরচেনা এলাহী কাণ্ড সবার অগোচরেই লুকিয়ে থাকবে। প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, মেলা, গান বাজনাসহ সবকিছুতেই দুর্গোৎসবের সেই চির পরিচিত আমেজ পাওয়া দুষ্কর।

মহামারী করোনার প্রকোপে মহালয়া থেকে শুরু করে শারদীয় পর্যন্ত উৎসবের প্রতিটি ধাপেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশনা। করোনার ছোবলে এবারও বসছে না মেলা। আত্মীয় কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘোরাঘুরি বা আড্ডা দেওয়াতেও প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়েছে কোভিড-১৯।

পঞ্জিকা অনুযায়ী ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। ঘোটকে করে মর্ত্যলোকে এসে পালকিতে ফিরবেন দেবী দুর্গা। ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে দেবী দুর্গাকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের এবারের আনুষ্ঠানিকতা।

সেই হিসেবে প্রায় ১৫ দিনের মতো সময় রয়েছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে হবে দুর্গাপূজা সে অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়েই নগরীজুড়ে চলছে দেবী বন্দনার প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরির কাজও চলছে ধুমছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।

রাজশাহী নগরীর মন্দির ও পাল বাড়িগুলো ঘুরে ব্যস্ততার চিত্র মিলেছে চোখে পড়ার মতো। প্রতীমা শিল্পীরা দিন-রাত নিরলস কাজ করছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষের আশায়। বসে থাকার জো মিলছে না তাদের। শিল্পীদের শৈল্পিক ছোঁয়ায় খড়, মাটি, পাট আর কাঁদায় তৈরি প্রতিমা ইতোমধ্যে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বাকি রয়েছে পরিপাটি করে সাজানোর শেষ কাজটুকু।

নগরীর মিয়াপাড়ার ধর্মসভা, গণকপাড়ার বৈষ্ণবসভা, ঘোড়ামারা, শেখেরচক, কুমারপাড়া ও মিয়াপাড়া এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। কেউ আউড় দিয়ে প্রতিমা তৈরির প্রাথমিক কাজ করছে, কেউ মাটি দিয়ে আউড়ের উপর আবরণ দিচ্ছে, কেউ আবার সেই মাটিকে সুন্দর, মসৃণ ও আকর্ষণীয় করার জন্য তুলির আঁচর দিচ্ছে।

কারিগররা বলছেন, এবছর প্রতিমা তৈরির তেমন অর্ডার নেই। করোনার কারণে প্রায় সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় খুব একটা জাঁকজমকপূর্ণ হচ্ছে না। বাঁশ, সুতা, কাঠের দাম তুলনামূলক রেশি হওয়ায় অন্য বারের মতো আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ দলবদ্ধভাবে কাজ সম্পন্ন করছেন।

নগরীর কুমারপাড়া এলাকার প্রতিমা কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, এক মাস আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ১৮টি প্রতিমা তৈরি করেছি। সবাই বলে করোনার কারণে হাতে টাকা নেই। ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার উপরে কেউ দামও বলে না।
আয়োজকরা জানান, গতবারের মতো এবারও পূজায় স্বাস্থ্যবিধির উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে কতজন দর্শককে একসঙ্গে মণ্ডপে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে, কীভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেসব দিকে নজর রাখার পাশাপাশি পূজার পদ্ধতিতেও পরিবর্তন হতে পারে। গতবারের চেয়ে এবারের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বেড়েছে মন্ডপের সংখ্যা।

মন্দির ধোয়া-মোছার কাজও চলছে জোরেসোরে। নগরীর বেশ কয়েকটি মন্দির ঘুরে দেখা যায় শেষ মুহুর্তের ধোয়া-মোছায় ব্যস্ত সময় পার করছে রক্ষণাবেক্ষণকারীরা। এ বিষয়ে ফুদকী পাড়া কালি মাতার মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণকারী চুমকি রানি বলেন, আর কয়েক দিন পরেই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ধোয়া-মোছার কাজও শেষ প্রায়।

সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, করোনা সংক্রমণ একেবারে নির্মূল না হওয়ায় এবারও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। নগরীতে সর্বমোট ৭৩ টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করাটাই আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। প্রত্যেকের মুখে মাস্ক পরিধান ও স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিতের পাশাপাশি একসঙ্গে ভিড় না করে ধারাবাহিকভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা হবে।

পূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা প্রস্তুতি জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, নগরীর সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো রয়েছে। ইতোমধ্যে পূজা মন্ডপের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই পূজা উদযাপন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহন করা হবে।

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিশেষ করে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দুরত্ব মানাতে আমরা সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবো। এছাড়াও কীভাবে মন্ডপ এলাকার ভিড় নিয়ন্ত্রন করা যায় সেসব বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

 

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top