রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৮ই মার্চ ২০২৫, ৪ঠা চৈত্র ১৪৩১


মাতৃভাষার প্রতি যত্নশীল হই


প্রকাশিত:
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪৬

আপডেট:
১৮ মার্চ ২০২৫ ০০:৩৮

রাজশাহী পোস্ট

বাংলা ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিরল। ভাষার দাবিতে আন্দোলন, প্রাণ বিসর্জন এবং বিজয় এই গৌরবময় ইতিহাসের অংশীদার আমরা। ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজকের বাংলাদেশে মাতৃভাষার প্রতি সেই যত্ন, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মায়ানমারের কিছু অংশে বাংলা ভাষার বিস্তৃতি রয়েছে। জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আমাদের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে। এত অর্জন সত্ত্বেও, নিজ দেশে বাংলা ভাষার অবস্থা কতটা সম্মানজনক, সেটি ভাবার বিষয়।

বাংলা ভাষা আজ দ্বন্দ্বে জর্জরিত। একদিকে আমরা মাতৃভাষার প্রতি গর্ব করি, অন্যদিকে ভাষার বিকৃতি ঘটাচ্ছি নিজেরাই। উচ্চারণে শুদ্ধতা নেই, বানানে অগোছালো অবস্থা, আর ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার অনুপ্রবেশ এতটাই প্রকট যে অনেক ক্ষেত্রে বাংলা শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলকে বাংলা ভাষার যথাযথ প্রয়োগ নেই। শুধু কথ্য ভাষাতেই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা দৃশ্যমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা শুদ্ধ বাংলা শেখার সুযোগ পাচ্ছে না। ইংরেজি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে গিয়ে বাংলা ভাষার প্রতি উদাসীনতা তৈরি হচ্ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরের নথিপত্রেও ভুল বাংলা লেখা হচ্ছে, যা হতাশাজনক।

বছরের অন্য সময় বাংলাকে অবহেলা করে শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া যথেষ্ট নয়। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের মনোযোগী হতে হবে প্রতিদিন। শুদ্ধ বাংলা চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে পরিবার থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত। সরকারের দায়িত্ব কেবল আইন প্রণয়ন করাই নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও জরুরি। বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাথমিক স্তর থেকেই বাংলা ভাষার ওপর জোর দিতে হবে, মিডিয়ায় ভাষার শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে, বিজ্ঞাপন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বাংলার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

একটি জাতির ভাষা তার সংস্কৃতি ও পরিচয়ের অংশ। যদি আমরা নিজেরাই আমাদের ভাষাকে যথাযথ মর্যাদা না দিই, তাহলে এর গৌরবময় ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিস্মৃত হতে পারে। ভাষা আন্দোলনের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারে যত্নশীল হওয়ার এখনই সময়। আসুন, আমরা আমাদের মাতৃভাষার প্রতি আরও যত্নবান হই।

 

নুসরাত নাঈম সাজিয়া
শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী 

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top