আরইউজের মানববন্ধন
আট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম এবং রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলীসহ আট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে)। এ দাবিতে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপি আরইউজের উদ্যোগে মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
মানববন্ধন চলাকালে আরইউজে সভাপতি কাজী শাহেদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহেদুর রহমান ২০১৫ সালের অক্টোবরে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মহানগরীর মতিহার থানা পুলিশ মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এরপর দৈনিক যুগান্তরের রাবি প্রতিনিধি মানিক রাইহান বাপ্পীকে গ্রামের বাড়ি থেকে এরই মধ্যে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া বাকি সাতজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে বাপ্পির মুক্তি এবং দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বক্তারা বলেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সভাপতি। মামলার আসামী অন্য সাংবাদিকরাও প্রগতিশীল চেতনার ধারক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। উন্নয়নের চলমান ধারা বাধাগ্রস্ত করতে সাংবাদিকদের বেকায়দায় ফেলে সরকারকে সমালোচিত করার চেষ্টা চলছে। মামলাটির সঠিক তদন্ত হলে সাংবাদিকরা অব্যাহতি পাবেন।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে ‘কালা কানুন’ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে কালা কানুন কেন? এই দেশে কাল আইনের দরকার নেই। সাংবাদিকরা জাতি গঠনে কাজ করেন। কালা কানুনে যদি তাদেরই হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই তিনি যেন আইনটি বাতিল করেন। কারণ, তিনি ছাড়া আর কোন অভিভাবক নেই।
মামলা দায়েরের কঠোর সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার উপযুক্ত স্থান বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। কিন্তু কাজী জাহেদুর রহমান মামলা করেছেন থানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। রাবির যে শিক্ষক আইসিটি আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সেই শিক্ষকই আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে অপপ্রচারের জন্য এই আইনে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। তিনি নিজেই আইন মানেন না। আর তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন তাতে পুলিশ প্রভাবিত হয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ধিক্কার জানাই।
বক্তারা তদন্তকারী কর্মকর্তার সমালোচনা করে বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের আগে তদন্ত কর্মকর্তা বিবাদীদের সঙ্গে কথা বলেননি। সম্পূর্ণ একপেশে মনোভাব নিয়ে তিনি বাদীর কথামতো অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। কিন্তু মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিরোধ করা যায় না। অতীতে কখনও এটা সম্ভব হয়নি। আগামীতেও হবে না।
বক্তারা বলেন, সরকার বার বার সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছে আইসিটি আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো। একজন শিক্ষক আইসিটি আইনে শুধু সম্পাদকদের বিরুদ্ধেই মামলা করেননি, তিনি নিজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন। তার মধ্যে যদি শিক্ষকসুলভ কোন আচরণ থাকে, তাহলে তিনি আজই মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছে নিজের সন্তানের মতো। কিন্তু কাজী জাহেদ কেমন শিক্ষক, তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।
মামলার বাদী কাজী জাহেদের কঠোর সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, শিক্ষক কাজী জাহেদ আইসিটি আইনের মামলায় ৭১ দিন কারাগারে ছিলেন। আমরা তখনও এই কালো আইন বাতিল করার দাবি জানিয়েছিলাম। এখন তিনিই এই কালো আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি করছেন। আমরা মনে করি তার নৈতিক স্থলন ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কোন সাংবাদিক এই প্রথম তার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি মামুন-অর-রশিদ, আরউজের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম, রাজশাহী মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সহসভাপতি নিলুফার ইয়াসমিন নিলা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন রাজশাহী জেলা শাখার সহসভাপতি সেলিনা বেগম, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরাফাত রহমান, রাজশাহী কলেজ রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি বাবর মাহমুদ প্রমুখ।
কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে উপস্থিত হয়েছিলেন- রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহিদী, রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৌফিক আলী ভাদু, রাজশাহী সংবাদপত্রকর্মী পরিষদের সভাপতি রেজাউল করিম রেজা, ওয়েবের রাজশাহীর সভাপতি আনজুমান আরা লিপি, রাজশাহী বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী আবদুল মালেক। এছাড়া কর্মসূচিতে রাজশাহীর বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত দেড় শতাধিক সাংবাদিক অংশ নেন।
আরপি/এসকে
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: