রাজশাহী বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১


ইরানের সিদ্ধান্তে চলছে ২০ দল?


প্রকাশিত:
১ জুলাই ২০২০ ১৭:২০

আপডেট:
২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:২০

ছবি: প্রতীকী

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট চলছে! এমন কানাঘুষা চরছে জোটের শরিক নেতাদের মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে, জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে প্রভাবিত করে অনৈক্য সৃষ্টি এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন ইরান। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ২০ দল এখন ইরানের সিদ্ধান্তে চলছে?

সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশের ১৫ দিন পর গত ২৬ জুন ২০ দলীয় জোট বাজেট বাস্তবসম্মত নয় এবং এ বাজেটে হতাশা বাড়াবে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেয়। ওই বিবৃতি নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেয়। কারণ কয়েকটা দলের শীর্ষ নেতাদের নাম বাদ দিয়েই ওই বিবৃতি দেয়া হয়।

জোট সূত্র জানায়, এমনিতেই ২০ দলীয় জোট নিয়ে রয়েছে নানা রসাত্মক আলোচনা। এরই মাঝে ২০ দলের বিবৃতিতে তিনটি দলের শীর্ষ নেতাদের নাম না থাকায় আলোচনা আরও বাড়িয়েছে। অনেকই মনে করেন, ২০ দল ও দলীয় প্রধানদের নাম যে জোটপ্রধান দল (বিএনপির নেতারা) জানে না সেটাই প্রমাণিত হলো এই বিবৃতিতে। এমনকি জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও এই বিষয়ে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।

জোটের শরিক এক শীর্ষ নেতা সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খানের কাছে নেতাদের নাম বাদ যাওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে ব্যাখা দিয়ে বলেন, সবার নাম মনে না থাকার কারণে লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ইরানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সে নাম দেয়নি। যার কারণে তাদের নাম বাদ পড়েছে। নজরুল ইসলাম খানের এই উত্তরে জোটে এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে ইরান-ই কী জোটের ব্যাপারে চূড়ান্ত সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?

তিনি আরও বলেন, নজরুল ইসলাম খান যদি এভাবে ইরান-নির্ভর হয়ে পড়েন তাহলে বলতে হবে, নজরুল ইসলাম খানকে প্রভাবিত করে ইরান জোটের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি এবং বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।

জোটের শরিক অপর এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, জোটের বিবৃতিতে মানবপাচারকারী ও পাসপোর্ট জালিয়াতিতে জড়িত অভিযুক্ত একজনের নাম থাকলেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী মুফতী মুহম্মদ ওয়াক্কাস, সাবেক হুইপ ও এলডিপি (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী, মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, মরহুম জাতীয় নেতা শফিউল আলম প্রধানের কন্যা জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নাম নেই, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


অন্যদিকে সাম্যবাদী দলের কমরেড সাঈদ আহমেদের নাম রয়েছে যিনি কিনা গত নির্বাচনের পর থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে দফায় দফায় ভাঙন, নিয়মিত বৈঠক না হওয়া এবং অধিকাংশ শরিক দলের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এমনিতেই মৃত প্রায়। এর মধ্যে জোট শরিক অধিকাংশই রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘ভাই, কার নাম থাকল, আর কার থাকল না, সেটা নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। এ জোটের কোনো আবেদন নেই রাজনৈতিক অঙ্গনে। ২০ দলীয় জোট এখন রাজনৈতিক টোকাইদের জোটে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে এখন ২০ দল নয়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের-ই কিছুটা আবেদন রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাগার থেকে মুক্তির পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে কথা বললেও ২০ দল নিয়ে কোনো কথা বলেছেন বলে আমার জানা নেই।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, আমরা জোট থেকে বের হয়নি, আমাদের বেরও করা হয়নি। আমরা জোটে আছি। কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে আমাদের নাম বিবৃতিতে যায়নি।

কমিউনিকেশন গ্যাপ কাদের দিক থেকে, বিএনপি না আপনাদের— এমন প্রশ্নে তাসমিয়া বলেন, করোনার কারণে আমরা একটি সেফটি ডিসটেন্সে আছি, এ কারণে হয়তো কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে।

এলডিপি (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি। হয়ত মুদ্রণজনিত কারণে আমাদের নাম বিবৃতিতে যায়নি।

বিবৃতিতে নাম থাকা জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, নেতাদের নাম বাদ পড়াটা যদি ইচ্ছাকৃত হয়ে থাকে তবে তা দুঃখজনক। কিন্তু এটা যদি অনিচ্ছাকৃত হয় তবে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল যেন না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি থাকবে। পাশাপাশি জোটের ঐক্য আরও মজবুত করতেও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে ২০ দলের সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অন্যদিকে ইরান বলছেন, জোটে কে থাকবে, না থাকবে— এটা দেখার এখতিয়ার জোটের প্রধান শরিক বিএনপির।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top