রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


বিদ্রোহী প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তায় বিফলে আ.লীগের কৌশল


প্রকাশিত:
১৬ জানুয়ারী ২০২০ ২৩:০১

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০৭

ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে অতীতে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। তাই এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী ঠেকাতে কৌশল এঁটেছিল ক্ষমতাসীন দলটি। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীদের বুদ্ধিমত্তার কাছে পরাভূত হয়েছে দলের এ কৌশল।

জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার বোর্ডের বৈঠকের দিন মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারীদেরও গণভবনে ডাকা হয়। সেখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে নির্দিষ্ট একটি ফরমে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ওই ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন ঠিকই। তবে দুরভিসন্ধি আঁচ করতে পেরে ফরমে ইচ্ছাকৃতভাবেই বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা ও ওয়ার্ড নম্বর ভুল লেখেন অনেকেই। পরে দলের পক্ষ থেকে যখন ফরমটিকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়, তখনই ধরা পড়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাল্টা এ কৌশল। ফরমে উল্লেখিত ভুল তথ্যের কারণে প্রত্যাহার হয়নি তাদের মনোনয়ন।

বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য বলেন, গণভবনে সব মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছ থেকে আমরা স্বাক্ষর নিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু তাদের অনেকেই নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষরে ইচ্ছা করে গরমিল করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনে তালিকা জমা দেয়ার সময় আমরা তাদের কৌশল ধরতে পারি। তখন আর কিছু করার ছিল না। এ ধরনের শতাধিক ঘটনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় সমর্থনের বাইরে যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন, তাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো। তাদের যদি নির্বাচন করতেই হয়, তাহলে দলীয় পদ ছেড়ে দিতে হবে। দলীয় পদ রাখতে হলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের কাউন্সিলর পদে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে শতাধিক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত ৫০টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী থাকার কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা আশা করছেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। এজন্য উত্তর ও দক্ষিণের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন তারা।

গত মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দলের নেতারা। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আমরা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বসেছিলাম। আমরা তাদের বলেছি, যারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন, আগামীতে নগরের বিভিন্ন কমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। সেখানে কয়েকজন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার মৌন সম্মতিও দিয়েছেন। তারা বলেছেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এখন দেখা যাক কী হয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্র তলব করার পরও কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কথা আমরা শুনেছি এবং বলেছি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে তারা যেন নির্বাচন থেকে সরে যায়। আর দলীয় পদে থেকে যদি শেষ পর্যন্ত তারা প্রার্থী থাকেন, তাহলে তাদের দলীয় পদ ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে। আগামীকাল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে আবারো বৈঠক করা হবে বলেও জানান নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, একক প্রার্থী নিশ্চিতে কাজ চলছে। আশা করি ২০ জানুয়ারির মধ্যেই অনেক ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে দাঁড়াবেন। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব বৈঠকে শুধু বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিভিন্ন থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি তাদের বলেন, দল যাকে সমর্থন দিয়েছে, তার সমর্থনে কাজ করতে হবে। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বহিষ্কার করা হবে। শুধু প্রার্থী নন, তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

আরপি/এমএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top