রাসিক নির্বাচন: বিএনপি-জামায়াতের ভোটে নজর জাতীয় পার্টির
 
                                ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। বিএনপির মতো জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচনের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। তবে শুরু থেকেই নির্বাচনের মাঠে সরব জাতীয় পার্টি (জাপা)। সরকারের বিরোধীতার স্বার্থেই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী লাঙ্গলকে বেছে নিবেন বলেও মনে করে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও রাসিক নির্বাচনের লাঙ্গলের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন।
জাপা নেতা স্বপন বলেন, বিএনপি এবং জামায়াতের ভোট রাজশাহীর জন্য অত্যন্ত ফ্যাক্টর, শুধুমাত্র ফ্যাক্টর না। তাদের ভোট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমরা চেষ্টা করবো, তাদের ভোট কালেকশন করার জন্য। আমাদের চেষ্টা ছাড়া তো কিছুই নেই। আমরা চেষ্টা করবো যদি তাদের ভোটগুলো নিয়ে আসতে পারি। আমার মনে হয় ভোটের পরিবেশ যদি ভালো হয় তারা মাঠে আসবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কারো সাথে যোগাযোগ করি নাই। কেউ যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তখন তাদের সাথে কথা বলা যায়। আগ বাড়িয়ে তো কারো সাথে কথা বলতে যেতে পারি না। তারা তো ওপেন ডিক্লারেশন দিয়েছে, ‘আমরা কোনো নির্বাচন করবো না।’ সেহেতু আমরা আমাদের মতো করেই সামনে অগ্রসর হচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
রাজশাহী নগর জাতীয় পার্টির এই আহ্বায়ক বলেন, আমিসহ রাজশাহী থেকে দুজন মেয়র পদে দলীয় ফরম কিনছিলাম। গত ২ মে আমার মনোনয়ন চূড়ান্ত করে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন করার অনুমতি দেওয়া হয়। পার্টি থেকে সকল নেতা-কর্মীকে সাথে নিয়ে নির্বাচনের কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আগামী সোমবার বা মঙ্গলবারের দিকে নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন তুলবো।
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জাপার এই প্রার্থী বলেন, আমাদের যারা নেতাকর্মী আছে আমরা সকলেই মাঠে থাকবো। অনেক আগে থেকেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। যেহেতু প্রার্থী চূড়ান্ত ছিল না তাই নির্বাচনী কাজ শুরু করা যায় নি। তবে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিভিন্ন গ্রুপ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ও মহল্লায় প্রচারণা চালাবে। লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবে তারা।
রাজশাহীতে দলের বিভাজনের প্রশ্নে জাপার ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, রাজশাহীতে জাতীয় পার্টির বিভাজন বলে কিছু নেই। রাজশাহীতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি, সকলের মতামত নিয়েই মনোনয়ন তুলেছি আমরা। ঐক্যবদ্ধভাবে ইলেকশন করার চিন্তা-ভাবনা থেকেই এটা করা হয়েছে। জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভাজন নেই, কোনো কোন্দল নেই, তৃনমূল থেকে নেতাকর্মী পর্যন্ত সবাই এক অবস্থানে আছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা একাগ্র মনে মাঠে থাকবে বলে আশা করছি। কেননা আমার বিজয় মানে নেতা-কর্মীদেরই বিজয়। বিজয় ছিনিয়ে আনবো এই চিন্তা-ভাবনা আমাদের ভেতরে কাজ করছে।
নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে স্বপন বলেন, নির্বাচনের মাঠ নিয়ে আমাদের যেটা চিন্তা-ভাবনা সেটা হলো—নির্বাচনে নামার অর্থই তো হলো বিজয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা করা। যেহেতু মাঠে বিএনপি এখনও আসে নাই, সেজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করবো। নির্বাচনে তাদের ভূমিকা কি হবে, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিবে কি না সেসব আমরা এখনও জানি না। ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনে থাকছে তবে তারাও মাঠে নামেনি। আমরা টুকটাক করে মাঠে নামছি। আর শক্তিশালী ক্যান্ডিডেট তো একজন আছেনই (আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন)। সে হিসেবে ভোটের মাঠে আমাদের তিনজনকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সেক্ষেত্রে যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা দরকার আমরা সেভাবেই করবো।
লাঙ্গলের এই প্রার্থী আরও বলেন, নগরবাসী একটা শাসন (মেয়র লিটন) তো দেখলো ১০ বছর। ১০ বছরে রাজশাহীর জন্য উনিও ভালো কিছুই করেছেন। বৃহত্তর রাজশাহীর জন্য তার কাজগুলো খুবই ভালো। যেহেতু তার (মেয়র লিটন) প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আমরা মাঠে নামবো বা নামছি। আমাদের রাজশাহীর মূল সমস্যাটাই হলো বেকারত্ব। আমরা চাইবো এই রাজশাহীর বেকারত্ব দূর হোক। আমার মূল লক্ষ্যই থাকবে এই বেকারত্বকে দূর করে তরুণ সমাজকে সুন্দর-সুষ্ঠ পথে ফিরিয়ে আনার জন্য।
আমাদের মেয়র পদে ছাড়াও প্রায় ৮-১০টা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোটামুটি প্রস্তুত করতেছি। তারা মনোনয়ন তুলবে, আমাদের সাথেই ভোটের মাঠে থাকবে। নেতা-কর্মী যারা আছেন তারাও সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করবে। তবে মনোনয়ন উত্তোলনের শেষ দিনেই বোঝা যাবে কত জন প্রার্থী হয় বলেও জানান জাপার মেয়র প্রার্থী স্বপন।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত একটাই, এই অবৈধ সরকার ও অবৈধ নির্বাচন কমিশনের আওতায় আমরা কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবো না। তত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সকল দল নিয়ে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে অংশ নেবো।
নিজেরা আড়ালে থেকে কাউকে প্রার্থী করা হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এরকম কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের দলে যারা পদ-পদবি নিয়ে থাকে, যারা দল করে তারা কেউ নির্বাচনে যাবে না। আর যেখানে বিএনপি নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না সেখানে ওই ধরনের কোনো ছলনায় বিএনপি বিশ্বাস করে না।
বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ভাই ও নগর বিএনপির সাবেক নেতা সাঈদ হাসানের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন প্রসঙ্গে মিনু বলেন, না, দলের কেউ অংশগ্রহণ করবে না। এরকম অনেক কথাই শোনা যায়।
জাপা বা হাতপাখার প্রার্থীকে ভোট প্রদানের প্রশ্নে রাসিকের সাবেক মেয়র বলেন, রাজশাহীর কোনো ভোটার ভোট কেন্দ্রেই যাবে না। অতীতে যেমন বিভিন্ন জীবজন্তু সেন্টারে থাকতো, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকরা, পুলিশ ঘুমিয়ে থাকতো তাই হবে।
আরপি/এসআর

 
                                                    -2021-02-04-13-35-01.jpg) 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: