রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


রাজশাহীসহ পাঁচ সিটির নির্বাচনে নানামুখী চাপে আ.লীগ


প্রকাশিত:
১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩১

আপডেট:
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০০:১১

ফাইল ছবি

পাঁচ সিটির নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। বিএনপি বা নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে চাপে পড়বে আওয়ামী লীগ। এদিকে, আওয়ামী লীগে অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন বলে দলের মধ্যেও বিদ্রোহী প্রার্থীর আশঙ্কা আছে। যদিও দলটির কেন্দ্র থেকে সাধারণ নির্দেশনা আছে কেউ সিদ্ধান্তের বাইরে গেলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু সিটি নির্বাচন নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পৃষ্ঠপোষকদের পর্দার আড়ালের তৎপরতা থামবে বলে মনে হচ্ছে না।

অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও সিলেটে বিএনপির মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন। তিনি এখন লন্ডনে আছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে দেখাও করেছেন। শেষ পর্যন্ত আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে গেলে অন্য চার সিটিতেও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। আর সেরকম হলে আওয়ামী লীগকে ঘরে-বাইরে সমান চাপের মুখোমুখি হতে হবে।

আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট। খুলনা ও বরিশালে ১২ জুন এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ভোট। পাঁচ সিটিতে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান আওয়ামী লীগের ৪১ জন। তারা দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে তাদের মনোনয়নের আবেদন জমা দিয়েছে। আগামীকাল শনিবার (১৫ এপ্রিল) মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে।

অবশ্য এরই মধ্যে তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত। রাজশাহীতে বর্তমান মেয়র এই এইচ এম খায়রুজ্জামানের মনোনয়ন মোটামুটি নিশ্চিত। খুলনায় বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক আর বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন শেষ পর্যন্ত পেতে পারেন। কিন্তু সিলেট ও গাজীপুরের অনিশ্চিত।

এদিকে, গাজীপুর এখন চলছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে। জাহাঙ্গীর আলম সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। এখানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ প্রার্থী ১৭ জন। পাঁচ সিটির মধ্যে গাজীপুরেই আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী। জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। অন্যদিকে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের টানা দুইবারের মেয়র। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগ এমনিতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তারপরও সিলেটে মনোনয়নয় চান আওয়ামী লীগের ১০ জন। এখানেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এর বাইরে রাজশাহীতে তিনজন, খুলনায় চারজন এবং বরিশালে সাতজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন। তাই প্রত্যেক এলাকায়ই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা আছে। আর বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি দাঁড়ানোর অনুমতি পান তাহলে পাঁচ সিটিতে নির্বাচনের চিত্র পুরো পাল্টে যেতে পারে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এবং জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে প্রার্থী দেবে বলে জানা গেছে। এর আগে সিটি নির্বাচনে সমঝোতা হয়েছিল। ফলে এবার ঘরে-বাইরে সবদিক থেকে চাপের মুখে পড়তে পারে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর নির্বাচনের পথেই হাঁটবেন। তিনি ১৬ এপ্রিল দেশে ফিরবেন বলেও জানা গেছে। সিলেটের নেতাকর্মীরা তার ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এদিকে, বুধবার লন্ডনে এক ইফতার পার্টিতে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে তারেক রহমান আমাকে একটি সিগন্যাল দিয়েছেন।’ তবে কী সেই সিগন্যাল, তা দেশে ফিরেই জানাবেন তিনি। বিএনপি সিলেটের মেয়র পদটি হারাতে চায় না। তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করার সময় এই বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ‘আমরা দলীয়ভাবে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাচ্ছি না। তবে কেউ যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তাহলে দল তার ব্যাপারে কী অবস্থান নেবে তা এখনো ঠিক হয়নি।’

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা দলগুলো এবং জাতীয় পাটি জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটিতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চায়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘এবার সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। আমরা চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে না এলেও আমাদের ধারণা তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র থেকে কাউন্সিলর সব পর্যায়েই থাকবে। এটাকে আমরা কোনো চাপ বা চ্যালেঞ্জ মনে করছি না। ভোটারেরা যাকে বেছে নেবেন তাকেই আমরা স্বাগত জানাব।’

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনোনয়ন চান। মনোনয়ন চাইতে তো কোনো বাধা নেই। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন বলে আমাদের আশা। আর যদি কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হন তাদের ব্যাপারে দল কতটা কঠোর হবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি। ধরে নিতে পারেন এখন পর্যন্ত আগে আমরা বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যে ব্যবস্থা নিয়েছি তাই নেওয়া হবে।’

বিষয়টিতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, ‘বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আর অংশ নেবে না। সেটা সিটি নির্বাচন হোক আর জাতীয় নির্বাচন হোক। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান তাহলে তাদের পরিণতি উকিল আবদুস সাত্তারের মতো হবে। দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’

সিলেটের আরিফুল হক চৌধুরী প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। তিনি তো লন্ডনে বলেছেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে তা তিনি মেনে নেবেন।’

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 

 

আরপি/এসআর-১২



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top