রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


পোস্টমর্টেম না করে লাশ নিয়ে পালালেন কেন, বাদশার প্রশ্ন


প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৫২

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৯

ছবি: রাজশাহী পোস্ট

রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য, রামেক হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাবির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, পোস্টমর্টেম না করে লাশ নিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন? তাহলে বলতে পারি, হত্যা করে আপনারা এনেছিলেন, আর পরিবারকে হুমকি দিয়ে আপনারা পোস্টমর্টেম ছাড়াই ডেড বডি নিয়ে গেছেন। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছি। আমরা চাই, কবর থেকে ডেড বডি তুলে পোস্টমর্টেম করা হোক। একইসাথে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবিও জানান তিনি।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মূল ফটকের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন সংসদ সদস্য।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, আগামী ২৬ তারিখে এই হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ বসব। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করছি, এর একটা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে গোয়েন্দা বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া, দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করা ও তাদের হামলায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের যারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আহত হয়েছে এর বিচার দাবি করছি। সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশেরও দাবি করেন তিনি।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, গভীর রাতে প্রতিকূল মুহুর্তে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাদের স্বাস্থ্য সেবার উদাহরণ করোনাকালীন সময়ে তাদের ভূমিকা। তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারের পদক পেয়েছে। এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ঘাড়ে একটি মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে বাদশা বলেন, ‘পত্রিকায় বলছে, ‘মগজ হবিবুর রহমান হলে আর আহত ব্যক্তি হাসপাতালে।’ যার মগজ পড়ে আছে হবিবুর রহমান হলে সেই রোগীর পালস কি ইমার্জেন্সিতে পাওয়া যেতে পারে? এটা কি হতে পারে? এটা মিথ্যাচারীতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি বলি, যারা হত্যাকারি তারাই তুলে নিয়ে এসে এখানে নাশকতা চালিয়েছে, ইন্টার্ন চিকিৎসক, মহিলা চিকিৎসক ও নার্সদের উপর পর্যন্ত আক্রমণ করেছে। রোগীদের চিকিৎসা সেবাকে বিপর্যস্ত করেছে। এটা প্রমাণিত যে, শাহরিয়ারকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার পালস ছিল না, এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে বলেও দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।’

প্রশ্ন রাখেন, ‘পোস্টমর্টেম না করে লাশ নিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন? তাহলে বলতে পারি, হত্যা করে আপনারা এনেছিলেন, আর পরিবারকে হুমকি দিয়ে আপনারা পোস্টমর্টেম ছাড়াই ডেড বডি নিয়ে গেছেন। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করেছি। আমরা চাই, কবর থেকে ডেড বডি তুলে পোস্টমর্টেম করা হোক।’

পুলিশের উদ্দেশ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা বলেন, ‘সেই রাতে যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছিল তাদের সবার ভিডিও ফুটেজ বহু জায়গায় আছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা হোক, তারা কে? কি তাদের পরিচয়? তারা কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল? কেন ইন্টার্নি চিকিৎসকদের উপর হামলা চালিয়েছে? সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।’

হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের এই হাসপাতাল শুধু রাজশাহী জেলার মানুষের চিকিৎসা করে না। পার্শ্ববর্তী দশটি জেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করে এই হাসপাতাল। এই হাসপাতালকে ভেঙেচুরে বিপর্যস্ত করতে চেয়েছে।’

‘যারা হামলা চালিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বের করে নিয়ে এসে তাদের মুখ থেকেই স্বীকারোক্তি আদায় করা হোক, এই হত্যাকারী কে? অন্যায়কারী কে? কেন তারা এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছিল' সেই প্রশ্নও রাখেন বাদশা।

মানববন্ধনে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, বিএমএ রাজশাহী শাখার সভাপতি ও রামেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. নওশাদ আলী, স্বাচিপ রাজশাহী শাখা সভাপতি প্রফেসর ডা. খলিলুর রহমান, রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী আহত হন। অন্য শিক্ষার্থীরা উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।

তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ৪০ মিনিট বিলম্বে এসে গুরুতর আহত রাবি শিক্ষার্থীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড ও পরিচালকের কক্ষের সামনের অংশে ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে কর্মবিরতি ঘোষণা করে রামেকে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

পরে হামলাকারীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে শুক্রবার সকালে কর্মস্থলে ফিরেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার না করায় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ও চিকিৎসকরা আজকের এই কর্মসূচি পালন করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সম্মিলিতভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top