রাজশাহী বৃহঃস্পতিবার, ২৮শে মার্চ ২০২৪, ১৫ই চৈত্র ১৪৩০


জেলা পরিষদ নির্বাচনে আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের


প্রকাশিত:
১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:১৯

আপডেট:
১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২০

ফাইল ছবি

জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণে দেরি আর কয়েক ঘণ্টা। রাত পোহালেই একযোগে আরম্ভ জেলা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি নির্ধারণের এই নির্বাচন। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ভোট মানেই চায়ের কাপে আলোচনা-সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্কের ঝড় তোলা। পাড়া-মহল্লায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে রাগারাগি কিংবা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা অনেক পরিচিত ঘটনা।

তবে পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় রাজশাহীতে এই নির্বাচনে আগ্রহ নেই সাধারণ জনগণের। নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র, প্রার্থী ও ভোটার সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ভোটের আমেজ নেই বললেই চলে। এমনকি আগামীর জনপ্রতিনিধিদের কাছে চাওয়া-পাওয়া কিংবা প্রত্যাশাও নেই অনেকের।

তথ্যমতে, সোমবার (১৭ অক্টোবর) দেশের ৫৭টি জেলা পরিষদে একযোগে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি কেন্দ্রেই সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) চলবে ভোটগ্রহণ। নির্দলীয় এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রতিটি উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে চলবে ভোট গ্রহণ।

নির্বাচন নিয়ে ভাবনা জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক। স্থানীয় প্রতিনিধিদের নির্বাচনে এখানকার প্রতিনিধিত্ব পালাবদল হয়। তাই এ নির্বাচনের ফলে সাধারণ মানুষের খুব বেশি কিছু আসে যায় না।

একইসাথে ভোটের জাকজমকপূর্ণ পরিবেশ ছোটকালে যা দেখেছি তা এখন জাদুঘরে। জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত কোথাও ভোটদানের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। অনেকে ঘৃণায় ভোট কেন্দ্রে এগোয় না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান তরুণ সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি চায়। নিজেদের কর্মের নিশ্চয়তা চায়, নিরাপত্তা চায়, ঘুষ-দূর্নীতি যে সরকার রোধ করতে পারবে তারা তাকেই চায়।

এদিকে রোববার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী নগরীতে রিকশা চালাচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ মকবুল হোসেন। জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব নির্বাচন-টির্বাচন দিয়ে কিছু হবে না? ভোটের আগের প্রতিশ্রুতিগুলোও নির্বাচনে জেতার পরদিন উল্টে যায়। আজ জিনিসপত্রের এতো দাম, কই কেউ (নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি) তো এক টাকা কমাতে বলে না!

তিনি আরও বলেন, যেই নির্বাচনে জেতুক আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। কেউ কারো খোঁজ রাখবে না। আর এটা তো এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ভোট দিবে, আমরা প্রার্থীর কাছে কিছু চাইলেই কি না চাইলেই কি?

এই নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর কাছে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে কথা হয় রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমানের সাথে।

তিনি বলেন, আসলে জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকে না, তারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হয়। আর এই পরিষদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তেমন কোনো আর্থিক অনুদান দেয় না। তারা রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্বাস্থ্য সেবা এসব খাতে বরাদ্দ দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এভাবে কোনো বরাদ্দ দেয় না।

তিনি আরও বলেন, জেলার অন্তর্গত সকল প্রতিষ্ঠানের দেখভাল করার দায়িত্ব জেলা পরিষদের। আর শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এটি ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে যাবে না। তাই শিক্ষার জন্য আগামীতে যিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হবেন সেটা রাজশাহীতে হোক বা অন্য যে কোনো জায়গায় হোক, তারা যেন অন্তত বার্ষিক বরাদ্দের কিছু অংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করে।

অসহায় বা অস্বচ্ছল অনেক পরিবার রয়েছে, জেলা পরিষদ তাদের একটি বৃত্তি প্রদান করতে পারে। যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভৌত কাঠামো, বিশুদ্ধ পানি, নিরাপদ স্যানিটেশন নেই সেগুলো নিয়ে তারা কাজ করতে পারেন বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ।

জানতে চাইলে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, আসলে জেলা পরিষদ কিন্তু বড় একটা জায়গা। বিগত দিনে এখানে দৃশ্যমান কিছু দেখি নি। এখন নতুন যিনি আসবেন তিনি যদি সবাইকে নিয়ে বসেন, আলোচনা করে কাজ করেন সকলেই উপকৃত হবেন।

তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদ এমন একটা জায়গা যারা ইউনিয়নের মেম্বারদের সাথেও কানেক্টেড। আমাদের যে বিষয় জানা সম্ভব না, জেলা পরিষদের দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের সেটা জানা সম্ভব। কোন ইউনিয়নের কি অবস্থা তারা সেটা জানতে পারেন। কৃষি, বাণিজ্যসহ সব বিষয়ে তাদের জানা থাকে। সব শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করার জায়গা এটা। তারা এসব কাজ করলে সরকার এমনিতেই উপকৃত হবে। সবাইকে নিয়ে যেন সম্মিলিতভাবে যে কোনো সমস্যার সমাধান খোঁজে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

এ বিষয়ে নারী উদ্যোক্তা ও হেঁশেল ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্টর স্বত্তাধিকারী সোনিয়া খাতুন  বলেন, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীর কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন নারীর উন্নয়ন নিয়ে কাজ করেন। নারীদের সুশিক্ষা ও ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে নারীদের কাজের আগ্রহ বাড়বে। নারীরাও যে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা পালন করতে পারে সেই বিষয়ে উদ্ধুদ্ধ করা দরকার।

জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্টরা যেহেতু গ্রাম পর্যন্ত কানেক্টেড তাই চাইবো তারা যেন গ্রাম পর্যায়েও নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ একজন নারীর উন্নয়ন মানে একটা এলাকার উন্নয়ন, একটা এলাকার উন্নয়ন মানে একটা গ্রামের উন্নয়ন, একটা গ্রামের উন্নয়ন মানে একটা শহরের উন্নয়ন আর একটা শহরের উন্নয়ন মানে সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে রাজশাহী জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এই নির্বাচনে জেলায় মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩০ জন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, তিনটি সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৭ জন ও অন্যরা ৯টি সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জেলার নয় উপজেলার নয়টি ভোটকেন্দ্রের ১৮টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ১৮৫ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন একজন, কারাগারে রয়েছেন একজন ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে আছেন একজন। রাজশাহীর প্রতিটি ভোট কেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানায় নির্বাচন অফিস।

তবে রাজশাহীর এই নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে নির্বাচনী উত্তেজনা। স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আখতার ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে ক্রমেই।

সপ্তাহখানেক আগে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামানের কর্মীরা মোহনপুর উপজেলার ধুরইলে পোস্টার লাগাতে গেলে বাধার মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে গ্রাম পুলিশের এক সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটে, যা শেষমেশ মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তবুও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী দুই প্রার্থীই।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের দাবি, বিভিন্ন টালবাহানা করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতারুজ্জামান আখতার ও তার সমর্থকরা। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে উল্টো আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায় চাপাচ্ছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তারুজ্জামান আখতার।

নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৯ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি উপজেলা মিলনায়তনে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক এসব সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আরপি/ এসএইচ ১৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top