রাজশাহী মঙ্গলবার, ৭ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


‘জনদায় থাকলে মন্ত্রীরা এত বেফাঁস কথা বলতেন না’


প্রকাশিত:
২৩ আগস্ট ২০২২ ২১:০৪

আপডেট:
২৩ আগস্ট ২০২২ ২১:০৬

ফাইল ছবি

সামনে নির্বাচন। উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। তবে মাঠের চেয়ে বাক্যবাণই উত্তাপ ছড়াচ্ছে বেশি। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবুল মোমেনের একাধিক মন্তব্য ‘আগুনে ঘি ঢালা’র মতো।

এসব মন্তব্যে আলোচনা-সমালোচনায় যেমন বিদ্ধ হচ্ছেন মন্ত্রী, তেমনি সরকারও বিব্রত। বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বইছে। বিরোধীশক্তিও লুফে নিয়েছে এ সুযোগ। তারাও একের পর এক বাক্যবাণে বিঁধছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন মন্তব্য নিয়ে বিশিষ্টজনেরা কী ভাবছেন? বিষয়টি নিয়ে মতামত গ্রহণ করা হয় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, সাবেক নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের।

ড. শাহদীন মালিক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘একজন রাজনীতিক সারাদিন নানান কথা বলেন। এর মধ্যে দু-একটি কথা বেফাঁস হতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। ভুল হতেই পারে।’

‘কিন্তু বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল মোমেন এত পরিমাণ বেফাঁস এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, জনগণের প্রতি সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই। জনদায় থাকলে মন্ত্রীরা এত বেফাঁস কথা বলতেন না। মুখ ফসকে এভাবে জনগণের সঙ্গে তামাশা করে কথা বলা যায় না।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘এক দেশ আরেক দেশকে প্রভাবান্বিত করতে চাইবেই। বড় দেশগুলো ছোট দেশগুলোকে সব সময় বাগে আনতে চায়। কূটনৈতিক ধারা সাধারণত এমনই হয়। এটি রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা। রাশিয়ার ওপর ইউরোপ-আমেরিকা নানান নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ পাশে থাকুক, তা যুক্তরাষ্ট্র চাইতেই পারে। তারা চাপও দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ তার ভূমিকা কীভাবে সহনশীল রাখবে সেটাই আসল বিষয়। ভূ-রাজনীতে এসব স্বাভাবিক ঘটনা। ভারতকে আমরাও পাশে চাই নানা ইস্যুতে। যেমন মিয়ানমার ইস্যুতে ভারতের সহায়তা চাইছে বাংলাদেশ এবং এটি দীর্ঘদিন থেকেই।’

‘কিন্তু অন্তরালের বিষয় এভাবে প্রকাশ্যে এনে বলে দেওয়াটা একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট কারণ দাঁড় করায়। আমরা ধরেই নিলাম যে, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন, তা হয়তো তথ্যনির্ভর না। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেবারে জনসম্মুখে বলে দিলেন যে, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ‘মিথ্যা’ কথা বলেছেন। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকজন কূটনীতিক সম্পর্কে এভাবে বলতে পারেন না। বলা যায় না। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তার এই দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারেন যে কেউ।’

তার এমন কথাবার্তার জন্য দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া দরকার। আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা যা বলছেন, তা আরও অবাক করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের না এমন কথাও শোনালেন। তাহলে তিনি কোন দলের? তার সরে দাঁড়ানো বা সরিয়ে দেওয়া দরকার। ভারতও হয়তো অস্বস্তি বোধ করছে এমন বেফাঁস মন্তব্যে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য জনঅধিকারকে দ্বিধায় ফেলেছে। যোগ করেন শাহদীন মালিক।

ব্রি. জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে আমি আসলে কিছু বলতে চাই না। এগুলো নিয়ে আমি আসলে আলোচনা করি না।’ ‘মন্ত্রী কী বলেছেন, না বলেছেন, তা সাধারণ মানুষ এখন ভালো করে জানেন। মন্ত্রীরা অসংলগ্ন কথা বলছেন, মানুষ শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ভারত একটি বড় দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক শক্তি আছে। এই সত্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রভাবশালী দেশ পাশের দেশগুলো প্রভাব রাখবেই।’

‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সত্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব রাখে বা রাখতে চায়। এর প্রমাণ হচ্ছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং যখন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ প্রয়োগ করেন। একটি ধারণা এখন প্রতিষ্ঠিত যে, ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং ক্ষমতায় যেতে হলে ভারতের হস্তক্ষেপ জরুরি। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল বাস্তবতা মনে করেন।

সূত্রঃ jagonews24

আরপি/ এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top