রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৫ই বৈশাখ ১৪৩১


আবরারের হত্যাকে জায়েজের ‘পাঁয়তারা’ করছে মিডিয়া!


প্রকাশিত:
৯ অক্টোবর ২০১৯ ২২:০৭

আপডেট:
৯ অক্টোবর ২০১৯ ২২:০৮

নিহত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ

বিভিন্ন বিষয় বিভিন্নভাবে জায়েজ হয়। জায়েজ মানে বৈধ হয়। সমর্থন পায়। সেখানে কোনো ঝামেলা থাকে না। আপনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলছেন, বৈধ করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে। গাড়ি কিনেছেন, গাড়ি চালাবেন? ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে। তাহলে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ আপনাকে হয়রানি করবে না। যদিও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় বিভিন্ন সময়। থাক সে কথা।

তাহলে, এই যে ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স কিংবা গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হচ্ছে- এগুলো একেকটা জায়েজ পদ্ধতি। মানে ওই বিষয়ে আপনাকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ অনুমতিটা ওই বিষয় সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষ দেয়।

এবার আসি খুনের কথায়। খুন করা বা হত্যা কখনোই বৈধ নয়। কোনোভাবেই নয়। রাষ্ট্রীয় কিংবা সামাজিকভাবেও নয়। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতি এমন যে, খুন করা যেন বৈধ হয়ে উঠেছে! না উঠেনি। কিন্তু উঠেছে!

হত্যাকে বৈধ করা হচ্ছে ‘ট্যাগ’ দিয়ে। শিবির ট্যাগ দিয়ে। পিটিয়ে হত্যা জায়েজ করা হয়েছে ছেলে ধরা ট্যাগ দিয়ে। এছাড়া নানান ট্যাগ দিয়ে। ‘শিবির’ ট্যাগটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে যেন শিবির করলেই হত্যা বৈধ! হত্যা জায়েজ! মানে খুন করলেও কিছু হবে না। এটা একরকমভাবে খুনকে বৈধ করেছে। শিবির ট্যাগ লাগিয়ে হত্যা করা জায়েজ করেছে একটি গোষ্ঠী। আর এটাতে সামগ্রিকভাবে সমর্থন দিয়েছে রাষ্ট্র।

এটাতো গেল একটি দল কিংবা রাষ্ট্রের কথা।
অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে সকল হত্যা হয়েছে, মানে নানান ট্যাগ লাগিয়ে হত্যা- সেগুলোও একরকমভাবে হত্যাকে বৈধ করেছে। এগুলো দেখে দেখে মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে হত্যাকে। তাহলে এসব হত্যা জায়েজ হয়েছে একটি প্রক্রিয়ায়। সরাসরি জায়েজ নয়, পরোক্ষভাবে জায়েজ।

মানুষ, নানান দল কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র বিভিন্ন হত্যাকে জায়েজ করেছে! করুক। নানা কারণে এগুলোকে মেনে নিয়েছে মানুষ। কিন্তু মিডিয়াও হত্যাকে জায়েজ করছে। কীভাবে?

জায়েজ প্রকিয়াটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে আবরারের হত্যা। বলবেন, ধুর, এটা কোনো কথা হলো? হ্যাঁ হলো। হচ্ছেও তা-ই। হয়েছে। যে মিডিয়ার কল্যাণে আপনি-আমি আবরার হত্যার চুলচেরা বিষয় জানতে পেরেছি, সে মিডিয়াই আবরারের হত্যাকে জায়েজ করছে! শিবির সন্দেহে আবরারকে হত্যাকে করা হয়েছে। তার খুনের পর বেশকিছু মিডিয়ায় ‘শিবির’ খুঁজা হয়েছে। সেই গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরেছে, ‘সে শিবির করতো না। তার পরিবারের কেউ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত নয়। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।’

এ কাজটি করেছে দেশের প্রথম সারির একটি ইংরেজি দৈনিক, কয়েকটি বাংলা দৈনিক, কয়েকটি টিভি চ্যানেল। এছাড়া অন্যান্য অনলাইন পোর্টাল তো করেছেই।

গণমাধ্যমগুলোর এই যে, শিবির খোঁজা; এটা হত্যাকে জায়েজ করেছে। আবরারের খুনকে বৈধ করেছে! গণমাধ্যম বলেছে, ‘আবরার শিবির করতো না।’ তার মানে কি এই যে, শিবির করলেই খুন বৈধ? আবার মিডিয়াগুলো বলেছে, ‘তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।’ এর মাধ্যমে পক্ষান্তরে মিডিয়া এই বলছে যে, আবরার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ, সেহেতু তার বাঁচার অধিকার অধিকার আছে। শিবিরদের নেই।

এরকম ‘শিবির খোঁজা’ কিংবা ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত’ এই প্রকিয়ার মাধ্যমে মিডিয়াগুলো আবরারের হত্যাকে জায়েজ করেছে। তার খুনকে বৈধ করেছে। পরোক্ষভাবে। মানে, মানুষের মধ্যে একধরণের ধারণা তৈরি হয়েছে যে, শিবির করলেই পেটানো যায়, খুন করা যায়। কারণ, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমেই পৃথিবী দেখি। মিডিয়া যা বলে সেটাই বিশ্বাস করি। মিডিয়া যা বলে সেভাবে ধারণা তৈরি হয়। তাহলে, এ প্রকিয়ার মাধ্যমে আবরারের হত্যা জায়েজ করেছে মিডিয়া। ‘শিবির খোঁজা’ প্রকিয়াটি হচ্ছে হত্যা জায়েজ করতে মিডিয়ার পাঁয়তারা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এধরণের ‘শিবির খোঁজা’র প্রক্রিয়াটা কি মিডিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে? নাকি কেউ তাদেরকে করতে বলেছে? প্রশ্নটা মিডিয়াওলাদের কাছে। মিডিয়ার প্রভুদের কাছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হোক। ব্যবস্থা নেয়া হোক। না হলে, মিডিয়ার প্রতি আস্থা থাকবে না জনগণের।

এভাবে আবরারের হত্যাকে জায়েজ করার মতো মিডিয়ার ‘পাঁয়তারা’ বন্ধ হোক। মানুষ বাঁচুক, মানুষের পরিচয়ে। সবার উপরে মানুষ সত্য হোক।

 

লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক শেষ করে এখন স্নাতকোত্তর করছেন।

 

আরপি/এসআর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top