রাজশাহী সোমবার, ৩১শে মার্চ ২০২৫, ১৮ই চৈত্র ১৪৩১


প্রতিবাদী মুখোশের আড়ালে সুবিধাবাদীর উত্থান


প্রকাশিত:
২ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:৩১

আপডেট:
৩১ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৫

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবাদ মূলত অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুমকি স্বরূপ। যা যুগের বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সকল অদৃশ্য বাঁধাকে ভেঙে দেয় এবং নতুন আশার সূর্যকে উদিত করে।অনিয়মকে ভাঙতে সৃষ্টি হয় প্রতিবাদের আর সেখান থেকে জন্ম নেয় একজন নির্ভীক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিবাদী ব্যক্তির।

প্রতিবাদ হওয়া উচিত অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। কিন্তু কেন জানি আজকাল প্রতিবাদের বিষয়বস্তু এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যেখানে শুধু মাত্র নিজস্বার্থে আঘাত লাগলেই আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশ পায়। আর এই নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিবাদী হয়ে উঠার মনোভাবের কারণে বর্তমানে সমাজের বা দেশের মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন।

যদি আমরা উদাহরণ স্বরূপ কিছু বিষয়ের দিকে আলোকপাত করি দেখা যাবে দৈনন্দিন জীবনের চলাফেরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুটি কয়েক সুবিধা লাভের জন্য আমরা অনৈতিক পথ অবলম্বন করি। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকি।মনের মধ্যে এমন মনোভাব ধারণ করে রাখি যে আমার সাথে তো কোনো অন্যায় হচ্ছে না বা আমি তো ভালো আছি এবং আমার যতটুকু সুবিধা দরকার ততটুকু সুবিধা নিয়ে ভালো আছি।

কিন্তু সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে আমরা এটা ভুলে যায় যে আমি আজকে যে সুবিধা ভোগ করছি হয়তো একদিন আসবে যে দিন আমার এই সুবিধা লাভের অধিকার নাও থাকতে পারে।
আর যখন কর্মফল বাস্তবতার পরিক্রমায় এক দিন আমাদের জীবনে চলে আসে তখন অতীতে অন্যের সাথে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আমার সাথেই ঘটতে থাকে।

আর ঠিক সেই মুহূর্তে নিজস্বার্থে আঘাত লাগার ফলে উত্থান ঘটে একজন প্রতিবাদী ব্যক্তির যে একসময় নিজ সুবিধা ভোগের জন্য নিশ্চুপ ছিলো। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায় কে অন্যায় মনে করেননি। ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়নি। কিন্তু সুবিধা ভোগের সময় সে পাহাড় সমান অন্যায়ের বিপক্ষে কথা না বললেও আজকে নিজের স্বার্থে সামান্য আঘাত লাগলেও সে একজন প্রতিবাদী হয়ে উঠে। নিজেকে এমন ভাবে সকলের সামনে প্রতিবাদী হিসেবে তুলে ধরে মনে হয় যেন চিরকাল সে অন্যায়ের বিপক্ষে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী একজন প্রতিবাদী ব্যক্তি।

কিন্তু প্রতিবাদের বিষয়টি হওয়া উচিত নিরপেক্ষ এবং সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে যেখানে কোনো অন্যায় স্থান পাবে না। নিজের দুর্বলতা অন্যায়ের বিপক্ষে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না, স্বজনপ্রীতি থাকবে না।একজন সত্যিকারের প্রতিবাদী ব্যক্তি সেই যে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়ায় ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয়।

দিন শেষে প্রশ্ন থেকেই যায়, আমরা নিজেদের জায়গা থেকে কতটুকু অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ করতে সক্ষম? আমাদের চারিপাশে যে সকল প্রতিবাদী ব্যক্তি রয়েছে সবাই কি সত্যিকারের প্রতিবাদী নাকি সুবিধাবাদী ব্যক্তি? যারা কিনা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিবাদী মুখোশ ধারণ করে আছে।

 

মো: মুজাহিদুল ইসলাম
সম্মান প্রথম বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

 

 

আরপি/আআ 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top