রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


পুরুষের নিরব কান্না কেউ শোনে না


প্রকাশিত:
২০ নভেম্বর ২০১৯ ২৩:২০

আপডেট:
২৯ নভেম্বর ২০১৯ ২২:৪৮

পুরুষ নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকার রাস্তায় বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশনের সদস্যরা

পুরুষদের পক্ষে নানা ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন
বিশ্বের অনেক দেশে কিছু বেসরকারি সংগঠন ১৯শে নভেম্বর 'আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস' পালন করে।

বাংলাদেশে এই উপলক্ষে গতকাল ঢাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে 'বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন' নামে একটি সংগঠন।

ঢাকায় মানববন্ধনের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জেও কর্মসূচি পালন করেছে এই সংগঠনটি, যাদের দাবি 'বাংলাদেশে পুরুষরাই বেশি নির্যাতিত হয়।

আর সে কারণে তারা মনে করেন 'পুরুষ নির্যাতন' প্রতিরোধে আইনি সুরক্ষা থাকা দরকার।

সংগঠনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলম  বলছেন তারা মৌখিক ভিত্তিতে জরিপ করেছেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে।

"আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে আশি ভাগ পুরুষই নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার। বিশেষ করে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েও তারা তা বলতে পারেননা। এছাড়া মামলা বা প্রতারণা শিকার তো অনেকেই হচ্ছেন"।


যৌতুক এবং নারী নির্যাতন বিরোধী আইন পুরুষদের নির্যাতনে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে
শেখ খায়রুল আলম বলছেন তিনি নিজেও ব্যক্তিগত জীবনে 'ভুয়া' যৌতুক মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছেন,হয়রানির শিকার হয়েছেন।

"এক মামলায় জামিন নেয়ার পর আবার নারী নির্যাতনের মামলা করেছিলো। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই অভিযোগের তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। তারপর আমি ৭৭ দিন হাজত খেটেছি, বিনা অপরাধে," বলছিলেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার অধিবাসী ইমরান হাসান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন বিয়ের নামে তিনি প্রতারণার শিকার হয়ে উল্টো মামলার মুখে পড়েছেন।

"আমি বিয়ে করেছিলাম ২০১৮ সালে। মেয়ে ছিলো আমেরিকান নাগরিক। তথ্য গোপন করে সে আমাকে বিয়ে করেছিলো। পরে সে আরেকজনকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যায় এবং সেখান থেকে দশ লাখ টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে আমি ডিভোর্স দিলে আমার নামে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা করে। আমার বাবা, মা ও আমার নামে ওয়ারেন্ট করালো। শেষে খোরপোশের মামলা। এখনো মামলা চলমান আছে। আরও কয়েকটি থানায় আমার নামে অভিযোগ করেছে।"

আবার মাজেদ ইবনে আজাদ নামে আরেকজন বিবিসিকে বলেন তিনি প্রেম করে দু:সম্পর্কের এক মামাতো বোনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু এক বছর পর তার সেই স্ত্রী তাকে পরিত্যাগ করেছে।

"সে আরেকজনকে বিয়ে করার জন্য গোপনে আমাকে ডিভোর্স দিলো। তার সাথে আগে থেকেই তার সম্পর্ক ছিলো। সে যদি তাকেই বিয়ে করবে তাহলে আমার সম্মান নষ্ট করলো কেনো। এমনকি আমার বিরুদ্ধে পরে পর্ণগ্রাফীর মামলা করেছে। আমি পুলিশকে জানিয়েছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।"

'বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন' এর সভাপতি শেখ খায়রুল আলম বলছেন নারীদের যেমন আইনি সুরক্ষা আছে পুরুষদেরও নির্যাতন থেকে সুরক্ষার জন্য তেমন আইন দরকার।

 

শেখ খায়রুল আলম বলছেন তারা চান প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও যৌতুক আইনের সংশোধন করা হোক।

"এখন অভিযোগ করলেও সত্য মিথ্যা যাচাই না করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। ফলে এটি পুরুষদের হয়রানির একটি হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।"

তিনি বলেন নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া দরকার ও কেউ মিথ্যা মামলা করেছে প্রমাণ হলে তার কঠিন শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা থাকা উচিত।

"কেউ বিনা অপরাধে জেল খাটালে ক্ষতিপূরণসহ শাস্তি দিতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যাবেনা। এবং কোনোভাবেই সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া শাশুড়ি, ননদ, শ্বশুর বা দেবরকে আসামি করা যাবেনা।"

তার দাবি অনেক ক্ষেত্রেই বাবা মাকে পরিত্যাগের জন্য অনেক স্ত্রী চাপ দিয়ে থাকেন যা একজন পুরুষের জন্য বড় মানসিক নির্যাতন। তাই এটি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

সমাজ কি এড়িয়ে যাচ্ছে ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক সালমা আক্তার বিবিসিকে বলছেন পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হতে পারেন, তবে কতটা হচ্ছেন তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি বা গ্রহণযোগ্য তথ্য উপাত্ত এখনো নেই।

"তবে মনে রাখতে হবে আমাদের সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। এখানে কিন্তু ব্যক্তি পুরুষের কথা বলা হচ্ছেনা। অনেক পুরুষই সমতার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তবে সমাজে কিছু প্রচলিত ধারণা আছে যেমন পুরুষের কান্না করা মানায়না বা বিয়ের সময় বলা হয় ছেলে কি করে আর মেয়ে দেখতে কেমন। এগুলো পুরুষতান্ত্রিকতারই ফল।"


সালমা আক্তার বলেন, "পুরুষরা নির্যাতনের শিকার হলে সেটিও মানবাধিকার ইস্যু। তবে দেখতে হবে কি কারণে হচ্ছেন। তিনি কি পুরুষ দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছেন নাকি নারীর দ্বারা। শুধু নারী হওয়ার কারণে অনেক নারী যেমন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। তেমনি পুরুষ যদি পুরুষ হওয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হন তাহলে এটাও জেন্ডার ইস্যু।"

তিনি বলেন একই সাথে দেখতে হবে পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলে সেটি কি কারণে হচ্ছেন। সেটি কি অর্থনৈতিক নাকি অন্য কোনো কারণে। কারণ ও ধরণ বের করে সেভাবেই সেটিকে বিবেচনা করতে হবে।

"তবে সমাজে পুরুষ নির্যাতনের বিষয়টিকে পুরোপুরি ফেলে দেয়া যাবেনা। এর অস্তিত্ব স্বীকার করেই দেখতে হবে কতটা ব্যাপক ও এর কারণ ও ধরণ কি। তাহলেই বোঝা যাবে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কারণ কোনো ধরনের সহিংসতাকেই এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়।"

রংপুরে 'বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন' এর আইনি পরামর্শক রিজওয়ানা আখতার শিরিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন পুরুষকে পেয়েছেন যাদের নির্যাতিত বলেই তার কাছে মনে হয়েছে।

"এমন অনেক ঘটনা পাচ্ছি যেখানে পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছেন। কিন্তু লজ্জায় বা ভয়ে বলতে পারছেন না। লোক হাসাহাসির ভয়ও কাজ করে তাদের মধ্যে। সম্প্রতি একটি ঘটনা পেয়েছি যেখানে স্ত্রী পরকিয়া করতে গিয়ে স্বামীর টাকা পয়সা নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়ে উল্টো নির্যাতন ও দেনমোহরের মামলা করেছেন। এমন নানা ধরণের ঘটনা আমরা এখন পাচ্ছি। এসব কারণেই আইনি সুরক্ষার দাবি জোরালো হচ্ছে যাতে পুরুষ অকারণে ভিকটিম না হন।"

 

সূত্র: বিবিসি

 

আরপি/এএস



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top