রাজশাহীর আট জেলার মানুষের জন্য মাত্র ৪ জন ডুবুরি!
                                রাজশাহীর পদ্মায় নানা অব্যবস্থাপনার কারণে একের পর এক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এতে গত তিন বছরে পদ্মায় নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৮ জনের।
আর নদীপথে কর্মপরিধি বাড়লেও দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও উদ্ধার অভিযানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বাড়েনি রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলাসহ সংলগ্ন উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মাত্র চারজন ডুবুরি দিয়ে চলছে সব উদ্ধার কাজ।
কোথাও পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটলে এ চারজন ডুবুরিকেই ছুটে যেতে হয়। রাজশাহীর পুরো আট জেলাতেই তাদের কর্মপরিধি। আর একদিনে আলাদা আলাদা জেলায় একাধিক ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। অনেক সময় দ্বিগুণ পরিশ্রম করে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখতে হয় তাদের। আর এতে সময়ও বেশি লেগে যায়। এজন্য রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নদীসহ অসংখ্য জলাশয়ে ডুবে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার অভিযান দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জনবল কম থাকায় এতে তাদের কিছুই করার নেই।
এ কারণে স্বজন হারানো পরিবারগুলোর আহাজারি দীর্ঘ হচ্ছে। আর চারজন ডুবুরি দিয়ে এ অঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষের নদীপথের দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। আবার পর্যাপ্ত আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জামাদি না থাকায় উদ্ধার কাজেও প্রয়োজনের চেয়ে প্রচুর সময় লাগছে।
হালে বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় প্রতিনিয়তই ঘটছে নদীপথের দুর্ঘটনা। নদীপথে পণ্য পরিবহন, মাছ শিকার, বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন স্থানে নৌ-ভ্রমণ স্পট তৈরি হওয়ায় বেড়েছে নদীপথের দুর্ঘটনার সংখ্যাও। বিশেষ করে বর্ষাকাল এলে এ দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। কখনও কখনও একই দিনে বেশ কয়েক জায়গায় নদীপথে দুর্ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে বেগ পেতে হচ্ছে রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষকে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলাতেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন রয়েছে। এখন উপজেলা পর্যায়েও রয়েছে স্টেশন। কিন্তু জেলা কিংবা উপজেলা পর্যায়ে ডুবুরির পদ নেই। আছে শুধু বিভাগীয় শহরেই। তাও মাত্র চারজন।
গত দুই বছরে এ অঞ্চলের নদী বা জলাশয়ে পরিচালিত হয়েছে প্রায় আড়াইশোটি ডুবুরি অভিযান। এতে উদ্ধার করা হয়েছে অসংখ্য মরদেহ। চলতি বছরেই প্রায় অর্ধশতাধিক উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে হয়েছে তাদের। এক একটি উদ্ধার কাজ করতে তিন থেকে চার দিনও লেগে যায়। অনেক সময় উদ্ধার কাজ শেষ না করেই অভিযান বন্ধ করতে হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীতে পদ্মানদীতে নৌ-দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত তিন বছরে রাজশাহীতে নৌ দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর পদ্মায় নৌ-দুর্ঘটনায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) বিবিএ তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম সূচনা ও তার চাচাতো ভাই রিমন নিহত হন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন- জনবল কম হওয়ার কারণে ডুবুরিদের যেমন বেশি কষ্ট করতে হয় তেমনি অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয় না। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ চার ডুবুরিকে। একদিনে যখন কয়েক জেলা থেকে উদ্ধার কাজে ডুবুরিদের প্রয়োজন হয় তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে। মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব যাদের কাঁধে পড়ে তখন তাদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে যেতে হয়।
জানতে চাইলে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি দলের লিডার নুরুন্নবী বলেন, চারজন সদস্য নিয়ে আমাদের পুরো রাজশাহী বিভাগে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে হয়। বিভাগের বাইরের জেলাগুলো থেকেও ডাক আসে। কখনও কখনও একদিনে একাধিক ডাক আসে। তখন আমরা অনেক নিরুপায় হয়ে যাই।
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে একটা উদ্ধার কাজ শেষ না হতেই আরেকটি উদ্ধার অভিযানে যেতে হয়। তবুও জীবনবাজি রেখে আমরা মানুষের জীবন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জানতে চাইলে রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহীর সহকারী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ডুবুরি সংকট নিরসনে বিভাগের জেলাগুলোতে ডুবুরি নিয়োগের জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। সেটি বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। লোকবল বাড়লে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
আরপি/ডিজে
বিষয়: ডুবুরি দুর্ঘটনা ফায়ার সার্ভিস

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: