যুক্তরাষ্ট্র তাদের ব্যর্থতা বলে না কেন, জিজ্ঞাসা প্রধানমন্ত্রীর

সংগৃহিত
মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এর কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাবকে যুক্তরাষ্ট্রই ট্রেনিং দিয়েছে, তারা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে র্যাব তেমনি করছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। এছাড়া আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত বছর ডিসেম্বরে পুলিশের এলিট ফোর্ট র্যাব এবং বাহিনীটির কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে এই সফরে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমা দেশটির কড়া সমালোচনা করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা তারা কতটুকু তুলবে জানি না, তবে যাদের দিয়ে এদেশের সন্ত্রাস দমন হয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া? এটাই প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ? ৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছর তো তারা রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশেরই কিছু লোক স্থানীয়ভাবে সেখানে থাকে। তারা সেখানকার সিনেটরদের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। এসব তথ্য দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। যারা এসব করে তারা কিন্তু এক একটি অপকর্ম করেই দেশ ছাড়া। র্যাবের ওপর তারা যখন নিষেধাজ্ঞা দিলো, আমার প্রশ্ন হচ্ছে র্যাব সৃষ্টি করেছে কে? এটি তো যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে হয়েছে। তারাই তো র্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। র্যাবের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, হেলিকপ্টার, আইটি সিস্টেম সবই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া। যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, অভিযোগ জানায়, তখন তো বলা লাগে যেমন ট্রেনিং দিয়েছে তেমনই কাজ করছে। এখানে আমাদের করার কী আছে?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ট্রেনিং যদি ভালো হতো তাহলে তো একটু কথা ছিল। দ্বিতীয় কথা, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা সংস্থা র্যাব, পুলিশ যেই হোক, তারা যদি কোনো অপরাধ করে তার কিন্তু বিচার হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ইচ্ছামতো গুলি করে মারলেও বিচার হয় না।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সীদের কেবল সন্দেহের বসে গুলি করে হত্যা করে। যার বিচার হয় না। সম্প্রতি একটি বিষয় নিয়ে দেশটিতে আন্দোলন হলে একটি ঘটনার বিচার হয়েছে। তবে এমন অনেক ঘটনায় দেশটিতে ঘটছে। যেখানে দোষী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিচারের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।’
গুম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গুম খুন নিয়ে কথা বলে। গুমের হিসাব নিয়ে দেখা গেল, সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে। তারপর থেকেই তো চলছে। আমরা যখন তালিকা চাইলাম ৭৬ জনের নাম পাওয়া গেল। এরমধ্যে এমনও আছে, আরেকজনকে শায়েস্তা করতে মাকে লুকিয়ে রেখেছে। কেউ বোনকে লুকিয়ে রেখেছে। আবার দেখা গেছে ঢাকা থেকে খুলনা চলে গেছে। তালিকায় এমনও নাম আছে, ভারতে পলাতক। এটা কেমন করে হয়? এমনও হয়েছে যে তালিকায় নাম আছে কিন্তু লুকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই বিষয়গুলো আমরা তাদের সামনে তুলে ধরেছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এরকম গুমের ঘটনা যখনই ঘটে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে বের করে। গুম যত বড় করে দেখানো হয়, খুঁজে পাওয়া যদি বড় করে দেখানো হতো তাহলে বাংলাদেশের বদনাম হতো না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন কবে তুলবে জানি না, কিন্তু স্যাংশন দিয়ে যে ক্ষতিটা তারা করেছে তা হলো, যাদের দিয়ে আমরা দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া অর্থ কী? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া। আমার এটাও প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে তারা কি সন্ত্রাস দমনে তারা নাখোশ? যুক্তরাষ্ট্র ৪০ বছর তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, সেই তালেবানের হাতেই রেখে চলে আসল আফগানিস্তান। নিজেদের ব্যর্থতার কথা তারা বলে না। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের মদদ দিলো। এখন আবার ইউক্রেন যুদ্ধে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, স্যাংশন দিয়ে যাচ্ছে। স্যাংশন দিয়ে সব মানুষের ক্ষতি হচ্ছে।'
আরপি/ এসএইচ
বিষয়: প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র র্যাব
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: