রাজশাহী শনিবার, ৯ই নভেম্বর ২০২৪, ২৬শে কার্তিক ১৪৩১


বরেণ্য চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলামের জন্মদিন


প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:০২

আপডেট:
৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

মোরশেদুল ইসলাম। দেশের বরেণ্য একজন চলচ্চিত্রকার। তার নির্মিত সিনেমায় ফুটে উঠে বাংলাদেশের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মাটি ও মানুষের গল্প এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। দীর্ঘ চলচ্চিত্রজীবনে তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক কালজয়ী সিনেমা। অর্জন করেছেন দেশে-বিদেশে অনেক স্বীকৃতি ও অর্জন।

আজ এই গুণী চলচ্চিত্রকারের জন্মদিন। ১৯৫৭ সালে পুরোনো ঢাকার লালবাগের উর্দূ রোডে এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শিক্ষাজীবনের শুরু করেন পুরনো ঢাকার চাঁদনীঘাট এলাকার একটি প্রাইমারি স্কুলে।

এরপর তিনি ভর্তি হন এক সময়ের বিখ্যাত নবকুমার ইনস্টিটিউশনে। এখানে তিনি সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ওয়েস্টার্ন হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন। পরে পরিবারের ইচ্ছায় তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এর দুই মাস পর আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে ভর্তি হন।

১৯৮৪ সালে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আগামী’ পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাত্রা করেন মোরশেদুল ইসলাম। এটি তাকে ১৯৮৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা পরিচালকের স্বীকৃতি এনে দেয়। নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ১০ম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য ‘রৌপ্য ময়ূর’ অর্জন করেন।

১৯৯৩ সালে সেলিম আল দীন রচিত চাকা গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেন কালজয়ী সিনেমা ‘চাকা’। এটি একটি লাশ বহনকারী গরুর গাড়ি এবং গাড়োয়ানের গল্প। চলচ্চিত্রটি মানহাইম-হেইডেলবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক জুরি পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর ডানকার্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ‘গ্রাঁ প্রিঁ’ ও শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক জুরি পুরস্কার অর্জন করে।

১৯৯৬ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’ অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দীপু নাম্বার টু’ সিনেমা। দুই কিশোরের দুঃসাহসিক ভ্রমন ও দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষার পটভূমি নিয়ে এই ছায়াছবির গল্প। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। এটি ঢালিউডের ইতিহাসে অন্যতম একটি সফল সিনেমা হিসেবে অভিহিত।


পরের বছর তার নিজের লেখা কাহিনী নিয়ে নির্মাণ করেন ‘দুখাই’। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রাম এই ছায়াছবির উপজীব্য বিষয়। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ নয়টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

২০০৪ সালে জনপ্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘দূরত্ব’। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালে লন্ডনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে।

২০০৬ সালে মাহমুদুল হক রচিত উপন্যাস খেলাঘর অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘খেলাঘর : উড়ষষযড়ঁংব’। এটি ২০১২ সালে সার্ক চলচ্চিত্র উৎসব-এ প্রদর্শিত হয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক জুরি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া একই বছর নয়াদিল্লিতে আয়োজিত ৩য় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।

২০০৯ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত ‘প্রিয়তমেষু’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘প্রিয়তমেষু’। দুই নারীর প্রতিবাদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রের গল্পে। এটি ২০১২ সালে সার্ক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রটি ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ সাতটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।

২০১১ সালে মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এক কিশোরের যুদ্ধে অবদান চিত্রিত হয়েছে এই ছায়াছবিতে। চলচ্চিত্রটি ২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত ৩য় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১৩ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া ২০১৫ সালে চলচ্চিত্রটি জয়পুরহাটে আয়োজিত ১ম শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।

২০১৫ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন ‘অনিল বাগচীর একদিন। এই বছর চলচ্চিত্রটি কলম্বো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং ব্যাংককের ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। ২০১৬ সালে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব প্রদর্শিত হয় এবং জুরি স্পেশাল মেনশনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া একই বছর মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।

 

আরপি/টিএস-০৫



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top