রাজশাহী রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


এবার ফেলে দেয়া কাগজ থেকে জন্মাবে গাছ, হবে ১১ রকমের ফসল!


প্রকাশিত:
৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ২০:২৭

আপডেট:
১৯ মে ২০২৪ ০৭:০৭

বনকাগজ। ছবি : সংগৃহীত

 

বিয়ে কিংবা কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাওয়া একটি আমন্ত্রণ পত্র কিছুদিন পর আর খোঁজ থাকে না। আর পরিত্যাক্ত কাগজটি আপনি মাটিতে ছুড়ে ফেলার কিছুদিন পর যদি দেখতে পান সেখান থেকে গজিয়েছে নানা রকম ফসল তাহরে নিশ্চিত অবাক চোখে তাকিয়ে থাকবেন!

এমনই চমকপ্রদ ঘটনাকে বাস্তব রুপে সামনে এনেছেন মাহবুব সুমন ও তার শালবৃক্ষ টিম। এই দলটি ‘বনকাগজ’ নামে এক ধরনের কাগজ তৈরি করেছেন। এই কাগজটি মাটিতে ফেলে দিলে সেখান থেকে জন্মাবে ১১ রকমের ফসল! প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টার পর জনসম্মুক্ষে বনকাগজ সামনে এনেছেন তারা।

৬ ডিসেম্বর তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আয়োজিত সুন্দরবন বিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে জাতীয় কনভেনশনের পরিচয় পত্রটি করা হয় ‘বনকাগজ’ দিয়ে। অতিথিদের বুকে ঝুলানো পরিচয় পত্রে ছিলো ১১টি ফসলের বীজ! এমন বীজ সম্বলিত কাগজ পেয়ে আগত অতিথিরা শুধু চমকেই যাননি অনেকেই উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। বাড়ি ফিরে মাটিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন এই বীজ!

বনকাগজ থেকে যেভাবে জন্মাবে গাছ :

বনকাগজের মধ্যে ৮ রকমের সবজি, সবজি ফল আর তিন রকমের ফুলের বীজ আছে। রোপণের বিশেষ কোন নিয়ম নেই। মাটির উপর কাগজটা আস্ত অথবা ছিড়ে কুটি কুটি করে ফেলে দিলেই হল। সেই মাটিতে যদি পর্যাপ্ত আদ্রতা থাকে তাহলে ৮/৯ দিনের মধ্যে গাছ দেখা যাবে। আর মাটি আদ্র হলে কাগজটাকে মাটির উপর রেখে একটু ভিজিয়ে দিলেই হল। যেমন করে জমিতে সবজির বীজ ছিটিয়ে দেয়া হয় তেমন করেই। জমিতে সবজির বীজ ছিটালে সেটা মাটির নীচে চলে যায় না। উপরে থেকেই আলো, বাতাস আর পানির সাহায্যে এটাতে অঙ্কুরোদগম হয় এবং পাখি খেয়ে না ফেললে সেটা থেকে গাছ বড় হতে থাকে।

একটি বনকাগজ ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। অর্থ্যাৎ একটি বনকাগজের ভেতরে থাকা বীজ একবছর পর্যন্ত সতেজ থাকবে। ১ বছরের ভেতর এটি মাটিতে ফেললে সেখান থেকে ফসল হবে।

 

বনকাগজ প্রকল্প :

কাগজের ভেতরে থাকবে ফসলের বীজ এই ধারনা থেকেই তা বাস্তবায়নে উঠে পরে লাগেন নবায়নযোগ্য জ্বালানী বিষয়ক গবেষক ও এক্টিভিস্ট মাহবুব সুমন। তিনি এই কাগজটির নাম দেন ‘বনকাগজ’।

মাহবুব সুমন তুলে ধরেন এই বনকাগজ তৈরির পেছনের গল্প। এই বনকাগজ তৈরির আইডিয়া, গবেষণা, পরীক্ষাসহ কাজটি সফল ভাবে শেষ করে আনতে এক বছর সময় লেগেছে।

মাহবুব সুমন বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি দেশে এই ধরনের কাগজ তৈরি নিয়ে কাজ হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত ১১টি ফসলের বীজ কেউ দিতে পারেনি। আমরাই প্রথম যারা একসাথে এতোগুলো ফসলের বীজ দিয়ে কাগজটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’

এটি তৈরি করতে কেমন সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে? উত্তরে সুমন জানান, বনকাগজের প্রকল্পটি এখনো ‘আন্ডার প্রসেস’। এই মুহূর্তে তাদের খরচটা একটু বেশি লাগছে। একটি সাধারন কার্ডের চেয়ে এর খরচ প্রায় চারগুন পরে। তবে এই খরচ অর্ধেকেরও কম করা সম্ভব। শিগগিরই খরচ কমিয়ে সাধারন মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে পারবেন বলে তাদের বিশ্বাস।

এই মুহূর্তে সময়ও একটু বেশি লাগছে তুলনা মূলক। দুই ঘণ্টায় একজন এ ফোর সাইজের ৫টি বনকাগজ তৈরি করতে পারবে। কাজটি খুবই সর্তকতার সাথে তৈরি করতে হয় যাতে এর বীজগুলো নষ্ট না হয়।

বনকাগজ তৈরির সাথে সাথে একটি শালবৃক্ষের গল্পও সামনে এসেছে। এই শাল বৃক্ষ একদল মানুষের একটি প্রতিষ্ঠান যারা দূষণ মুক্ত সবুজ পৃথিবীর গল্প বুনতে চায়। এই শালবৃক্ষ দলের সবাই পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাথে বিভিন্নভাবে যুক্ত।

শালবৃক্ষ মূলত দূষণমুক্ত নবায়ন যোগ্য জ্বালানি নিয়ে কাজ করে। একই সাথে ‘দূষণমুক্ত রিসাইক্লেনিং’ প্রকল্প নিয়ে তাদের কাজ। এই প্রকল্পেরই একটি অংশ হচ্ছে ‘বনকাগজ’ প্রকল্প।

 

শালবৃক্ষের উদ্যোক্তা ও বনকাগজ তৈরির কারিগর মাহবুব সুমন বলেন, ‘বনকাগজ তৈরির কাজটি অনেক কঠিন ছিল। আমার একার পক্ষে এই কাজটি শেষ করা সম্ভব হতো না। পুরো কাজটিতে আমাকে নানাভাবে সহায়তা করেছে সায়দিয়া গুলরুখ, কামরুল হাসান, ইকরামুনেসা চম্পা। আর তাদের নিয়েই তৈরি ‘শালবৃক্ষ’ টিম। এই দলের সকলের প্রচেষ্টার ফসল আমাদের এই বনকাগজ।’

সুমন শালবৃক্ষ প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই দৈনন্দিন জীবনে মানুষ যে সব পন্য ব্যবহার করে সেসব পণ্য থেকে পরিবেশ দূষণ ও ক্ষতি কমিয়ে আরো পরিবেশ বান্ধব হিসেবে সেগুলো গড়ে তোলা। পরিবেশ থেকে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টাটা আমাদের সব সময়ই থাকবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করা।’

 

 

আরপি/এমএইচ


বিষয়: বনকাগজ


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top