রাজশাহী মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল ২০২৪, ৪ঠা বৈশাখ ১৪৩১


শাকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনলেন প্রযোজক


প্রকাশিত:
১৬ মার্চ ২০২৩ ০৩:৪৯

আপডেট:
১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০১

ফাইল ছবি

শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাসের অভিযোগ এনেছেন রহমত উল্লাহ নামের এক প্রযোজক। তিনি বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ এনেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর।

বুধবার (১৫ মার্চ) এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে এ অভিযগ করেছেন রহমত উল্লাহ নামের ওই প্রযোজক।

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রযোজক রহমত উল্লাহ নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমাটির প্রযোজক। এ ছবিতে কেন্দ্রিয় চরিত্রে ছিলেন শাকিব। রহমত উল্লাহ জানিয়েছেন, এই ছবি কেন্দ্র করেই ঘটনা ঘটেছে। সিনেমাটিতে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ (মামলা নং: NSW Police reference no: E ৬২৪৯৪৯৫৯) এবং পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধন চলচ্চিত্রের শুটিং সম্পন্ন করতে অথবা লগ্নিকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় নিরুপায় হয়ে অভিযোগ করেছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন সিনেমাটির প্রযোজক।

অভিযোগপত্রে ওই প্রযোজক উল্লেখ করেছেন, “২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক সিনেমার কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের চলচ্চিত্রে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুক্তি পেলে সেটি হতো অস্ট্রেলিয়ায় অভিনীত প্রথম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র। আমার এবং এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আশা ছিল সিনেমাটির হাত ধরে অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কে নতুন একটি অধ্যায় রচিত হবে। শাকিব খান একজন বিখ্যাত অভিনেতা। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সঙ্গে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, আজ পর্যন্ত এই সিনেমার কাজ তিনি শেষ করেননি।”

এরপর অভিযোগপত্রে শাকিবের যাবতীয় অসাদাচরণ তুলে ধরেছেন রহমত উল্লাহ। সেখানে তিনি লিখেছেন,

১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।

২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছামতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই-এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সবার বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।

৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনও কখনও একাধিকবার। এই সব যৌনকর্মীদের মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক আমাদেরকেই দিতে হতো।

৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার স্বীকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান। এরপর থেকে শাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।

এরইমধ্যে রহমত উল্লাহর ওই অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (মামলা চলমান) নিপুণ আক্তার। এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতিসহ প্রযোজক, পরিচালক, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশনে ওই প্রযোজক অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ তো আসলে যে কেউই যে কারো নামে করতে পারে। তবে সেই অভিযোগের সত্য মিথ্যা যাচাই করা না পর্যন্ত কিছুই বলতে পারব না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগটি এসেছে তিনি দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। এখানে তথ্য যাচাইবাছাই করা খুব জরুরি।’

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির শুটিং শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। এতে শাকিবের বিপরীতে ছিলেন শিবা আলী খান। ৬০ শতাংশ দৃশ্যধারণ সম্পন্ন এ সিনেমায় খল চরিত্রে ছিলেন মিশা সদাগর। ছবিটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন আশিকুর রহমান। শাকিবের বিরুদ্ধে প্রযোজক রহমত উল্লাহর আনীত অভিযোগ ব্যাপারে আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি তাকে। সেইসঙ্গে শাকিবেরও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

 

 

আরপি/এসআর-০৪



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top