রাজশাহী শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৮ই বৈশাখ ১৪৩১


নিউজিল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর জয়


প্রকাশিত:
৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:০৮

আপডেট:
২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:০৮

ছবি: সংগৃহীত

স্কোরকার্ড বলবে, মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে ১০১ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল। যেখানে সফরকারীরা ৩১ রানে হারিয়েছে নিজেদের শেষ ৬ উইকেট। যা পুরোপুরি সত্য। কিন্তু স্কোরকার্ডে কখনও লেখা থাকবে না, এই ১০১ রানের জয় পেতে কতটা উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে নিউজিল্যান্ড দলকে।

ম্যাচ বাঁচানোর জন্য শেষদিন ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পুরোটা সময় পার করতে হতো পাকিস্তানকে। দিনের শুরুতেই ফিরে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আজহার আলি। পঞ্চম উইকেটে ম্যারাথন জুটি গড়েন ৬৩.২ ওভারের ম্যারাথন জুটি গড়েন অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অভিজ্ঞ ফাওয়াদ আলম।


কিন্তু দিনের খেলা ২৬ ওভার বাকি থাকতে সাজঘরে ফিরে যান রিজওয়ান। সেঞ্চুরিয়ান ফাওয়াদ উইকেটে থাকলেও, তখনই যেন নিশ্চিত হয়ে যায় পাকিস্তানের পরাজয়। শেষ উইকেটে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন দুই টেইলএন্ডার নাসিম শাহ এবং শাহিন শাহ আফ্রিদি। কিন্তু দিনের ৪.৩ ওভার বাকি থাকতে আউট হয়ে গেছেন নাসিম, নিউজিল্যান্ড পেয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরির সঙ্গে রস টেলর, হেনরি নিকলস ও বিজে ওয়াটলিংয়ের ফিফটিতে ৪৩১ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় নিউজিল্যান্ড। জবাবে পাকিস্তান অলআউট হয় ২৩৯ রানে। কিউইরা পায় ১৯২ রানের বড় লিড, যার সঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে করা ১৮০ রান মিলে পাকিস্তানের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭৩ রান।

এ রান তাড়া করতে পাকিস্তানের হাতে ছিল ১২৮ ওভার। যার মধ্যে চতুর্থ দিন বিকেলেই তারা ৩৭ ওভার খেলে হারিয়ে ফেলে ৩টি উইকেট, স্কোরবোর্ড জমা পড়ে ৭১ রান। ফলে আজ (বুধবার) ম্যাচের শেষদিন সমীকরণ দাঁড়ায় ম্যাচ জেতার জন্য নিউজিল্যান্ডের নিতে হবে ৭টি উইকেট, পাকিস্তানের প্রয়োজন ৩০২ রান। কিংবা তারা সারাদিন খেললে ম্যাচ হবে ড্র।

এমন অবস্থায় দিনের খেলা শুরু করে তৃতীয় ওভারেই অভিজ্ঞ আজহারের উইকেট হারায় পাকিস্তান। ট্রেন্ট বোল্টের বোলিংয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ার আগে ১২০ বলে ৩৮ রান করেন আজহার। তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো সহজ জয়ই পেতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। তবে ভিন্ন চিন্তাই ছিল ফাওয়াদ ও রিজওয়ানের মনে।


তারা দুজন মিলে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশনের বাকি সময়, দ্বিতীয় সেশনের পুরোটা সময়েও বিপদ আসতে দেননি তারা। জয়ের জন্য মেরে খেলার চেষ্টা করেননি দুজনের কেউই, তবু রান আসছিল নিয়মিতই। শেষ সেশনে অবস্থা এমন দাঁড়ায়, ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৬ ওভারে ১৫৮ রান করলেই ম্যাচ জিতে যাবে পাকিস্তান।

কিন্তু সেই সেশনের ঘণ্টাখানেক পেরুনোর আগেই রিজওয়ানকে আউট করে জুটি ভাঙেন ২৬তম জন্মদিন পালন করা কাইল জেমিসন। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে পাকিস্তান অধিনায়ক খেলেন ১৯১ বলে ৬০ রানের ইনিংস। এর আগেই এগার বছরের ব্যবধানে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি তুলে নেন ফাওয়াদ।

২০০৯ সালে নিজের অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন ফাওয়াদ। ১১ বছর পর ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও দ্বিতীয় ইনিংসে পেলেন দ্বিতীয়বারের মতো তিন অঙ্কের দেখা। কিন্তু এরপর আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি তিনি। আউট হয়েছেন নেইল ওয়াগনারের এক বাউন্সারে। তার আগে করেছেন ২৬৯ বলে ১০২ রান।

ফাওয়াদ ফিরে যাওয়ার উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইয়াসির শাহ (০), ফাহিম আশরাফ (১৯) ও মোহাম্মদ আব্বাস (৮)। চোখের পলকেই যেন ৪ উইকেটে ২৪০ থেকে ৯ উইকেটে ২৬১ রানের দলে পরিণত হয় পাকিস্তান। শেষ উইকেটে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য তাদের খেলতে হতো আরও ৭৪টি বল।

সেই মিশনে মোটেও ভেঙে পড়েননি শেষ দুই ব্যাটসম্যান নাসিম ও শাহিন। কিউই বোলারদের গোলার সামনে খেলছিলেন দেখেশুনে, কাটিয়ে দিয়েছিলেন ৪৬টি বল। কিন্তু দিনের যখন বাকি আর ২৮টি বল, তখনই মিচেল স্যান্টনারের নিরীহ দর্শন এক ডেলিভারিতে আউট হন নাসিম। নিজের বোলিংয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের ফল নিশ্চিত করেন স্যান্টনার।

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সমান ২টি করে উইকেট নিয়েছেন পাঁচ বোলার টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নেইল ওয়াগনার, কাইল জেমিসন এবং মিচেল স্যান্টনার। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির সঙ্গে অসাধারণ অধিনায়কত্বের সুবাদে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন স্বাগতিক দলনেতা কেন উইলিয়ামসন।

 

আরপি / এমবি-৩



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top