রাজশাহী শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১


কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনে মিললো 'টর্চার সেল'


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২২ ০৬:৪৮

আপডেট:
৯ আগস্ট ২০২২ ০৬:৫৭

সংগৃহিত

কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে একটি 'টর্চার সেলের' সন্ধান মিলেছে। সেখানে আটকে রাখা পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশিয় অস্ত্রসহ অপকর্মে ব্যবহৃত নানা উপকরণ। ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে দালাল সন্দেহে ১১ জনকে আটকও করেছে পুলিশ।

রবিবার (৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে সোমবার (৮ আগস্ট) ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকা সংলগ্ন আবাসিক কটেজ জোন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।


তিনি বলেন, রবিবার মধ্যরাতে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকা সংলগ্ন আবাসিক কটেজ জোন কথিত টর্চার সেলে কয়েকজন পর্যটককে দুর্বৃত্তরা জিন্মি রেখেছে খবরে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। এতে সাইনবোর্ডবিহীন সন্দেহজনক 'শিউলি' নামের কটেজটি ঘেরা করলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে প্রবেশ পথের দরজা তালাবদ্ধ করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

সেখান থেকে উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে ইফাজ উদ্দিন ইমন (১৭), একই এলাকার বেলাল আহমদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫) এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকার নুর মোহাম্মদের দীল মোহাম্মদ (১৭) ও চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার ফয়েজ আহমেদ এর ছেলে মো. ইমরান (১৯)।


ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, এদের মাঝে দীল মোহাম্মদ ও ইমরান উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। তারা রবিবার সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য 'শিউলি' নামের একটি আবাসিক কটেজে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া উদ্ধার হওয়া অপর দুইজন কক্সবাজার শহরে মায়ের চিকিৎসা করতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ওই কটেজে উঠেছিল।

আটক দালালরা হলেন, মো. আলমগীর (৪৫), মো. সেলিম (২০), আকাশ দাস (২৩), মো. জোবায়ের (২৮), মো. মামুন (২২), নাজির হোসেন (২৮), সেকান্দর আলী (২৮), মো. সোহেল (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম(৩৩), মো. জসিম (২৭), মো. পারভেজ (২৫)। পুলিশ জানিয়েছে, শিউলি নামের কটেজটির মালিককে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে কটেজটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে মো. রহিম ও লোকমান নামের দুই ব্যক্তি।

পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল বলেন, নানাভাবে বলার পরও দরজার তালা না খোলায় তালা ভেঙ্গে পুলিশ সদস্যরা ভেতরে প্রবেশ করে। কটেজটির কক্ষগুলোতে তল্লাশি করে দুর্বৃত্তদের কাউকে না পেলেও পালিয়ে যাওয়ার গোপন পথের সন্ধান পায় পুলিশ। এসময় একটি কক্ষে আটকে রাখা অবস্থায় দুই শিশু ও দুই পর্যটককে উদ্ধার করা হয়। কটেজে তল্লাশি করে একটি ছুরি, একটি লোহার রড ও আপত্তিকর কাজে ব্যবহৃত নানা উপকরণ জব্দ করা হয়।

উদ্ধার হওয়াদের বরাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, রবিবার রাতে কক্সবাজার শহরের আবাসিক কটেজ জোনে কম ভাড়া কক্ষের খোঁজ নিচ্ছিলো ভুক্তভোগীরা। এসময় চলাচলের রাস্তায় অবস্থানকারী লোকজন কম ভাড়ায় কক্ষ ভাড়া দেওয়ার কথা বলে সাইনবোর্ডবিহীন শিউলি নামের কটেজটিতে নিয়ে যান।

পরে তারা (ভুক্তভোগী) কটেজের ভেতরে গিয়ে দেখতে পায়, কক্ষগুলো পর্যটকদের থাকার মত পরিবেশ নেই। এসময় কটেজে ৫/৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারীকে দেখতে পায়। এরপর ওই নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করে প্রতারকরা। এ সময় হাতিয়ে নেওয়া হয় তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন। পরে আরও টাকার জন্য স্বজনদের জানাতে তাদের (ভুক্তভোগী) উপর নির্যাতন চালান হয়।

রেজাউল বলেন, হোটেল-মোটেল জোনে দেড়-শতাধিক আবাসিক কটেজ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত ২০-৩০টি কটেজ রয়েছে সাইনবোর্ডবিহীন। সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা মূলত সাইনবোর্ডবিহীন কটেজগুলোকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। এরকম আরও কয়েকটি কটেজ টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহারের তথ্য রয়েছে পুলিশের। দূর্বৃত্ত চক্রের সদস্য পর্যটকসহ সাধারণ মানুষকে নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে জিন্মি করে আসছিল। পরে শিউলি কটেজের আশপাশে অভিযান চালিয়ে দালাল সন্দেহে ১১ জনকে আটক করা হয় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

রেজাউল জানান, আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করা হয়েছে এবং তাদেরকে সদর মডেল থানায় সোর্পদ করা হয়েছে।

 

আরপি/ এসএইচ-০৮



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top