রাজশাহী শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


নিরব অশ্রু


প্রকাশিত:
১০ আগস্ট ২০১৯ ১২:২৬

আপডেট:
১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৪৪

ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম:

সকালে রুম মেটের ডাকা ডাকিতে তিশার ঘুম ভাঙ্গে। কিরে তিশা সকাল ০৮ টা বাজে এখনও তুই শুয়ে ঘুমোচ্ছিস। ক্লাশে যাবি না, সকাল ০৯ টায় প্রথম ক্লাশ। শুনেছি স্যার নাকি খুবই বদরাগী। সময় মতো ক্লাশে না গেলে ধরে বসে যা ইচ্ছে তাই বলে কথা শুনিয়ে দেয়। প্রথম দিন কথা শুনতে মোটেও ভালো লাগবেনা। রুমমেট কেয়ার ডাকে উঠছিরে বলে তিশা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। কেয়া তাকে ধাক্কা মেরে এক প্রকার জোর করেই বিছানা থেকে টেনে তুলে। কলেজে আজ তাদের প্রথম দিন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর শহরের একটি নামী কলেজে ভর্তি হয়ে তারা মেয়েদের হোষ্টেলে উঠেছে ।


তিশা ১৭ বছরের এক তন্বী তরুনী। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের সন্তান বলে অত্যন্ত জেদী। নজরকাড়া সুন্দরী হওয়ায় রাস্তাঘাটে প্রায়ই তাকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে তার বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। কিন্তু বাবা-মা এত অল্প বয়সে বিয়ে দিতে রাজী নয়। তাই তাকে শহরে পাঠাতে চায়নি। কিন্তু তিশা জেদের বশে শহরে এসে ইংরেজী বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছে। প্রপোজ করে ব্যর্থ হওয়ায় এক ছেলে তাকে গেয়ো বলে মন্তব্য করায় তার এই জেদ। অসম্ভব সৌন্দর্য্যরে কারণে স্কুল ও কলেজ জীবনে বহু ছেলে পিছনে ঘুরে তাকে অহেতুক জ্বালিয়েছে। আর এ তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বাবা-মা কেউ চায়নি সে শহরে পড়াশুনা করুক। গ্রামে তারা মেয়েকে আগলে রেখেছেন কিন্তু শহরে দেখবে কে?
কিন্তু তিশা নাছোড় বান্দা সে শহরে পড়াশোনা করবেই। অগত্যা বাবা এসে মেয়েকে শহরের একটি সরকারী কলেজে ভর্তি করিয়ে যান। মেয়েকে হোষ্টেলে তুলে দিয়ে ঠিকমতো পড়াশুনা এবং সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়ে গ্রামে ফিরে যান। হোস্টেলে তার রুমমেট কেয়া নামের একটি মেয়ে।

আজ প্রথম ক্লাশ। কেয়ার ডাকে তিশা ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে এবং নির্ধারিত সময়ে কেয়াকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। ক্লাশে সে কেয়ার ডান পাশে বসে। তার বাম পাশে একটি ছেলে। তিশা খেয়াল করে কলেজে আসার পথে এমনকি ক্লাশে ঢোকার পর সবার দৃষ্টি তার দিকে। তার সাথে আলাপ করার জন্য সবার মাঝে রীতি মতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রায় সবাই আগ বাড়িয়ে যেচে তার সাথে পরিচিত হতে থাকে। তিশা হাই হ্যালো বলে কাটিয়ে নেয়। ব্যতিক্রম শুধু তার পাশে বসা ছেলেটি। সে একবারও তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেনি বরং সে তিশার গায়ে যাতে ছোয়া না লাগে সেজন্য খুবই আড়ষ্ট হয়ে বসে।

নির্ধারিত সময়ে স্যার আসেন। পরিচয় পর্বের মাধ্যমে ক্লাশ শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। পাশে বসা ছেলেটি মনযোগ সহকারে স্যারদের বক্তব্য শোনে। একবারও তিশার দিকে তাকায়নি এবং কথা বলার চেষ্টাও করেনি। এতে তিশার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। কারণ সুন্দরী বলে তার প্রচণ্ড আত্মঅহংকার এবং গর্ব রয়েছে। মনে মনে সে ছেলেটির প্রতি বিরক্ত হয়ে উঠে। কিন্তু প্রথম দিন তাই বেশী দূর এগোয় না।

এক সপ্তাহ হয়ে গেছে। অনেকের সাথেই তিশার পরিচয় হয়েছে। কিন্তু ছেলেটি একবারের জন্য তার সাথে পরিচিত হবার জন্য আসেনি। দূর থেকে সে তাকিয়ে দেখেছে। ছেলেটি বেশ লম্বা চওড়া। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। মাথা ভর্তি কাল চুল যা ব্যাক ব্রাশ করা। পরনে সাধারণ মানের শার্ট আর প্যান্ট। চোখে পুরু লেন্সের চশমা। দেখতে এবং চালচলনে অত্যন্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা বলে না। দুপুরে মধ্যাহৃ বিরতির সময় এদিক সেদিক আড্ডা বা ঘোরাফেরা না করে লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করে সময় কাটায়।

তিশা বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে আলাপ করার চেষ্টা করেও তেমন সাড়া পায়নি। এই তো সেদিন লাইব্রেরীতে তার পাশে তিশা প্রায় আধা ঘণ্টা বসে থাকার পরও সে মুখ তুলে তাকায় না। পাশে কে বসলো তা দেখার চেষ্টাও করে না। এতে তিশা রেগে তার বই বন্ধ করে বলে, আপনি মনে হয় খুব অহংকারী। নিজেকে কি ভাবেন? তিশার এই কথায় ছেলেটি থতমতো খেয়ে জ্বি আমাকে বলছেন। হ্যাঁ মশাই আপনাকে বলছি। এখানে আপনি ছাড়া আর কে আছে যে তাকে বলবো। ছেলেটি আগ্রহ না দেখিয়ে তিশাকে বলে, জ্বি ম্যাডাম বলুন। কি নাম আপনার? জ্বি মোঃ আতিকুর রহমান আতিক। নাম বলার ধরন দেখে তিশা হেসে ফেলে। বলে, আমি তো পুরো নাম শুনতে চাইনি। ছেলেটি বলে, ক্ষমা করবেন, ভুল হয়েছে।
ছেলেটি পুনরায় বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করতে চাইলে তিশা ক্ষেপে যেয়ে বলে, আপনি মানুষ না ফেরেশতা। একটি সুন্দরী মেয়ে আপনার পার্শ্বে বসে কথা বলতে চাইছে আর আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন? ম্যাডাম মাফ করবেন আগে আমার পড়াটা শেষ করে নেই। পরে না হয় আপনার সাথে কথা বলবো। আরে ধুর গেয়ো কোথাকার বলে তিশা প্রচণ্ড রেগে চলে যায়।

এরপর কয়েকমাস হয়ে গেছে। আতিকের সাথে তিশার অনেকবার দেখা হয়েছে। চোখাচোখি হতেই আতিক চোখ নামিয়ে পাশ কেটে চলে গেছে। কোন প্রশ্ন করলে তিশার দিকে না তাকিয়ে নির্লিপ্ত থেকে মার্জিতভাবে উত্তর দিয়েছে। কখনো এগিয়ে এসে যেচে কথা বলেনি। কথাবার্তা নম্র এবং ভদ্র। চলাফেরার ধীর স্থির এবং শান্ত স্বভাবের। সে খুব গরীব ঘরের সন্তান। তার পিতা প্রাইমারী স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক। সংসার চালাতে ছুটির দিনে বাবার সাথে তাকেও মাঝে মাঝে জমিতে কাজ করতে হয়। এ কারণে অনেকেই তাকে অবহেলার চোখে দেখে। এজন্য সে কারো সাথে মিশতে চায় না। তাছাড়া মেয়েদের সাথে তার কথা বলার অভ্যেস নেই। এ ব্যাপারে সে খুবই লাজুক। তাই সে তিশা সহ সব মেয়েদেরকেই এড়িয়ে চলে। এসব না জেনে তিশা ভাবে আতিক তার সৌন্দর্যের মূল্যায়ন না করে তাকে গুরুত্ব ও পাত্তাই দিতে চায় না। তাই সে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মনে মনে ফন্দি আটে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। তিশা তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা আতিকের নামে একটি প্রেমপত্র নিজেই কম্পোজ করে এনে ক্লাশে গোপনে তার বইয়ের মধ্যে রেখে দেয়। ক্লাশ আরম্ভ হলে তিশা সেই প্রেমপত্র তার বইয়ের ভিতর থেকে বের করে টিচারকে বলে, স্যার দেখুন, আতিক আমাকে উদ্দেশ্য করে একটি প্রেমপত্র লিখে আমার বইয়ের ভিতরে রেখেছে। ক্লাশে হুলুস্থুল পড়ে যায়। তিশার অভিযোগের প্রেক্ষিতে টিচার এসে সবার সামনে তার বই থেকে আতিকের লেখা প্রেমপত্র উদ্ধার করে আতিককে প্রচন্ডভাবে বকাবকি এবং অপমান করেন। আতিক বারবার অস্বীকার করার পরও কেউ তার কথা বিশ্বাস করে না।

আতিকের প্রতি তিশার দুর্বলতার কারণে অনেকেই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত ও ক্ষিপ্ত ছিল। সুযোগ পেয়ে তারা যা তা বলে অপমান করতে থাকে। অনেকে তাকে লক্ষ করে তীর্যক ও ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে। কেয়া নামের মেয়েটি তাকে লক্ষ করে বলে, দেখে মনে হয় ভিজা বিড়াল, মাছটি উল্টো করে খেতে জানেনা। অথচ তলে তলে এত কাণ্ড। কেউ বা তার বংশ এবং বাপ মায়ের প্রতি কটাক্ষ করে। বিভিন্ন ধরণের কুটুক্তি, আপমানজনক কথাবার্তা এবং প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে লজ্জায় আর অপমানে আতিক কেঁদে ফেলে। তার কান্না দেখে পুরো ক্লাশের ছেলে মেয়েরা জোরে জোরে টিটকারী মারতে থাকে। দুর থেকে এসব দেখে তিশা আনন্দিত হয়ে মনে খুবই তৃপ্তি পায়। এক পর্যায়ে টিচার আতিককে ক্লাশ থেকে বের করে দেয়।

তিশার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঐদিন বিকালে কলেজের প্রিন্সিপ্যাল আতিককে নোটিশ করে তার রুমে ডেকে নেন। কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আতিককে কলেজ থেকে বহিষ্কার করেন। আতিক প্রিন্সিপ্যালের রুম হতে বের হতেই তিশার সাথে দেখা। এই প্রথম সে তিশার দিকে করুণভাবে তাকিয়ে বিনীতভাবে বলে, ম্যাডাম আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি। তবে কেন আপনি আমার এত বড় ক্ষতি করলেন? আমি কি এই মিথ্যা অপমানের ভার সইতে পারবো? তিশা সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে মুখে বক্র হাসি হেসে কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে, আমাকে গুরুত্ব না দেওয়ার জবাবটা পছন্দ হয়েছে তো? আতিক তিশার দিকে অসহায় ভাবে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। এ সময় তার দুচোখ পানিতে ভরে যায়। তাকে লক্ষ করে কলেজের চারিদিক থেকে ছেলে-মেয়েরা হাসাহাসি করে অবিরাম টিটকারী মেরেই যাচ্ছিলো।
আতিক হোষ্টেলে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে বিছানাপত্র গুছিয়ে বিষন্ন মনে বাহিরে আসে। সে খেয়াল করে হোষ্টেলে তার রুমমেটও তার সাথে কথা না বলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চোখে মুখে ক্ষোভ আর বিরক্তি। আতিক মনে মনে খুব দুঃখ এবং ব্যথা পায়। ভাবে প্রিয় রুম মেটও তাকে ভুল বুঝেছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে খুব জোরে একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সে অটোরিক্সায় গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। হৃদয়ে বেদনা জাগিয়ে ভাবে বাড়ীতে বাবা-মায়ের কাছে সে কি জবাব দেবে। শাশ্বত সুন্দর মায়াময় জগতে মিথ্যা অভিযোগে সে আজ দিশেহারা। তাইতো সব স্বপ্ন হারিয়ে সে ফিরে চলেছে। আনমনে সে সকালের ঘটনা ভেবেই চলে। কিন্তু কোন কুল কিনারা পায়না।

অটোরিক্সা গ্রামে ঢুকতেই হঠাৎ দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি ট্রাক ব্রেক ফেল করে অটোরিক্সাকে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে। ফলে আতিক রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুত্বর আঘাত পেয়ে তৎক্ষণাত প্রাণ হারায়। সংবাদ পেয়ে আতিকের বৃদ্ধ পিতা ঘটনাস্থলে এসে ছেলের এ করুণ পরিণতি দেখে জোরে জোরে কেঁদে প্রলাপ বকতে থাকেন। তিনি অসময়ে ছেলের বাড়ীতে আসার কারণ বুঝে উঠতে পারেন না। আতিককে বাড়ীর পার্শ্বে নিজ ভিটায় কবর দেওয়া হয়। আতিক মৃত্যুবরণ করে মিথ্যা অপবাদের লজ্জা ও অপমানের তীব্র অথচ অসহনীয় জ্বালা হতে পরিত্রাণ পেয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর হতে বিবেকের তাড়নায় তিশা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভাবে তার ভুলের জন্য একটি নিষ্পাপ ছেলের জীবন নষ্ট হতে চলেছে যা ক্ষমার অযোগ্য। সে তার সহপাঠীদের কাছে প্রকৃত ঘটনা বলে তাদের পরামর্শে প্রিন্সিপ্যাল এর কাছে যায়। আতিক নিরপরাধ জানিয়ে তার কৃত কর্মের জন্য তিশা ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রিন্সিপ্যালকে সবিনয়ে অনুরোধ করে। প্রিন্সিপ্যাল তিশাকে প্রথমবারের মতো মার্জনা করে আতিককে ফিরিয়ে আনার জন্য বলেন। ইতোমধ্যে তিশা আতিককে ভালবেসে ফেলে। সেদিনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে হোষ্টেলে তার রুমে বসে সারারাত ধরে আতিককে একটি দীর্ঘ প্রেমপত্র লিখে সকালে দু’বন্ধু সহ একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আতিকের গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

দুপুরে পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়তেই একজন বৃদ্ধলোক দরজা খুলতেই তিশা তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। তিনি নিজেকে আতিকের বাবা বলে পরিচয় দেন। আতিক কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই তিনি হু হু করে কেঁদে উঠে বলেন, আতিক আর নাইরে মা। সে আমাদের ছেড়ে চিরদিনের মতো না ফেরার দেশে চলে গেছে। কয়েকদিন আগে কলেজ থেকে অটোরিক্সায় আসার পথে সে গাড়ী দূর্ঘটনার প্রাণ হারিয়েছে। শুনে তিশা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার বন্ধুরাও কাঁদতে থাকে। এর মধ্যে আতিকের বাবা পরিচয় জেনে তাদেরকে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে আতিকের ঘরে বসতে দেন। ঘরটি সুন্দরভাবে পরিপাটি করে সাজানো। শোকেছে অনেক মেডেল এবং ক্রেস্ট। দেওয়ালে আতিকের সুন্দর একটি ছবি টাংগানো। ছবিটি তিশার দিকে তাকিয়ে যেন বিদ্রুপ করে বলছে, আমাকে শেষ করে কি খুব শান্তি পেয়েছেন? আতিকের বাবা সবাইকে আপ্যায়নের জন্য বাসার ভিতরে যান। নিষেধ সত্ত্বেও কারো কথা শুনেন না।

কিছুক্ষণ পর আতিকের বাবা এসে জানান, তিনি স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। আতিক তার একমাত্র সন্তান। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাশের ফাস্ট বয়। জীবনে কোন দিন দ্বিতীয় হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক উভয় পরীক্ষাতেই গোল্ডেন এ প্লাস পায়। শোকেছের উপর রক্ষিত সমস্ত মেডেল এবং ক্রেস্ট সে পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার জন্য পুরস্কার হিসাবে পেয়েছে। ভাল ছেলে বলে এলাকায় তার প্রচুর সুনাম। ছোট বড় সবই তাকে ভালবাসতো। ছুটির দিনে সে জমিতে গিয়ে তাকে সাহায্য করতো। আমরা ছিলাম তার গর্বিত বাবা-মা। তাকে হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা। মৃত্যুর পর থেকে তার মা শয্যাগত। আমি কোন রকমে বেঁচে আছি। এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে তিনি কাঁদতে থাকেন। পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
অনেক্ষণ কাঁদার পর দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে আরও জানান, আতিকের খুবই ইচ্ছা ছিল ইংরেজীতে পড়াশুনা করে সে শিক্ষা ক্যাডারে বি.সি.এস দিয়ে সরকারী কলেজের শিক্ষক হবে। কিন্তু সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আতিকের পিতার কথা শুনে সবাই অনবরত চোখে পানি ফেলতে থাকে। বিশেষ করে তিশা নিজেকে অপরাধী ভেবে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে। তার ভুলের জন্য কতবড় কাণ্ড ঘটে একটি মূল্যবান জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। সাথে সাথে একটি সোনার সংসারও ধ্বংস হতে চলেছে।

বিকেলে ফেরার পথে আতিকের বাবা বাড়ী সংলগ্ন আতিকের কবরটি দেখিয়ে দেন। তিশা মাথায় কাপড় ঢেকে খুব ধীর পায়ে কবরের পাশে যেয়ে অঝোর ধারায় চোখের পানি ফেলতে থাকে। এ সময় সে আতিককে লেখা প্রেমপত্রটি সযত্নে কবরের পাশে রেখে নিরবে কেঁদে বলে, তোমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আমি অমার্জনীয় অপরাধ করেছি। তোমার মৃত্যুর জন্য আমি এককভাবে দায়ী। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার হৃদয়ে শুধু তুমি অমর হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আসার সময় তিশা পিছন ফিরে বারবার আতিকের কবর দেখতে থাকে। দুচোখে ছিল নিরব অশ্রু।
লেখক: সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top