তুরস্কে বন্যায় ৩৮ জনের প্রাণহানি
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ৩৮ জন মারা গেছেন বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে।
দেশটির একাধিক গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া আকস্মিক বন্যায় কৃষ্ণসাগর উপকূলের শহর কাস্টামনু, বার্তিন, কাস্টামনু, সিনোপ ও সামসুন এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও সেতুগুলো ধসে গেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উপকূলীয় শহরগুলোর সমুদ্র সৈকতে মানুষের মৃতদেহ ভেসে যেতে দেখা গেছে। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় মানুষ ভবনের ছাদে উঠে বসে আছে। উদ্ধারকর্মীরা হেলিকপ্টার নিয়ে তাদের উদ্ধার করে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাচ্ছে।
বন্যার প্রকোপে তুরস্কের উপকূলীয় শহরগুলো এখন রীতিমত ধ্বংসস্তুপ। উদ্ধারকর্মীরা আবাসিক ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে জীবিতদের উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে। সেখানে কেউ জীবিত রয়েছেন কি না তার অনুসন্ধান চলছে।
গত শুক্রবার তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফারেহত্তিন কোজ্জা টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, বন্যায় কাস্টামনু প্রদেশে ৩২ জন মারা গেছেন। আরেক উপকূলীয় শহর সিনোপে ছয় জন মারা গেছেন।
পরে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানানো হয়।
দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা হাসান বালতেজ্জে স্থানীয় হাল্ক টিভিকে বলেছেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা নিখোঁজ হওয়া প্রিয়জনদের খোঁজ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, বন্যায় অন্তত ৩২৯ জন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইপে এরদোগান বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছেন। গত শুক্রবার কাস্টামনু শহরে বন্যায় প্রাণ হারানো এক ব্যক্তির জানাজাতেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
তিনি এসময় দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা এই ধ্বংস্তুপ থেকে উত্তরণের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করব। আমাদের নাগরিকদের যা হারিয়েছে, তা আর ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু তবে প্রিয়জন হারানো মানুষগুলোক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নিশ্চয় আছে।’
দেশের এই সঙ্কটে এরদোগান তার দলের ২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানও স্থগিত করেছেন। এরদোগান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সরকার যত দ্রুত সম্ভব বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও সেতু পুনর্নিমাণ করবে।
তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষকে বন্যা উপদ্রুত এসব এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ছাত্রাবাসগুলোতে আশ্রয় শিবির অস্থায়ী খোলা হয়েছে। বন্যা শুরুর পর দেশটির ২০০টি গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপকূলীয় শহর বোজকুর্টের বাসিন্দা আরজু ইউজসেল স্থানীয় ডিএইচএ নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, তাদের আট তলা বাড়ি ধসে পড়ার পর তার দুই মেয়ে দাদা-দাদীসহ সেই ভবনের নিচে চাপা পড়েছে।
ওই শহরের আরও এক বাসিন্দা ইলমাজ এরসেভেনলি জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা বন্যার আগাম পূর্বাভাস না দেওয়ায় এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বোজকুর্টে বন্যার পানি যখন বাড়ছিল, তখন আমি গাড়ি চালিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে চেষ্টা করি। কিন্তু হঠাৎ পানির তোড়ে আমি গাড়িসুদ্ধ ভেসে যেতে লাগলাম। কোনোভাবে আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে একটা গাছ আকড়ে ধরলাম। আমি দেখলাম, আমার গাড়িটা ভেসে যাচ্ছে। গাড়িটা বাঁচাতে গিয়ে আমি প্রায় মারাই যাচ্ছিলাম।’
আরপি/এসআর-০৪
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: