বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা, প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

রাজশাহী কলেজের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কলেজ মাঠ, পদ্ম পুকুর এলাকা ও বিভিন্ন ভবনের আশপাশে বহিরাগতদের অবাধ উপস্থিতি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। ধূমপান, উচ্চ শব্দে গান বাজানো, টিকটক ভিডিও তৈরি থেকে শুরু করে মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতিতে চলাচল—এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়লেও ক্যাম্পাসের নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্লাস চলাকালীন সময়েও বহিরাগতদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কলেজ মাঠে সকাল থেকেই বহিরাগতদের খেলাধুলা এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে আগে দুপুর ২টার পর মাঠ উন্মুক্ত করা হতো। এছাড়া পদ্ম পুকুরে বহিরাগতদের মাছ শিকার, শিক্ষার্থীদের থ্রেট দেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানান ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার্থী বা কর্মচারীরা বহিরাগতদের কোন কিছু তো বাধা দিতে গেলে নানান ধরনের হুমকির মুখে পড়তে হয়। ফলে তারাও বহিরাগতদের বাধা দিতে পারছেন না। এতে করে প্রশাসনকে দায়ী করছেন তারা।
এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বহিরাগতদের মাছ ধরতে বাধা দিলে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকে ব্যক্তিগত ক্ষতি করার হুমকি দেয়, ফলে বাধা দেওয়া সম্ভব হয় না।
এছাড়া বহিরাগতদের বাইক নিয়ে বেপরোয়া গতিতে ক্যাম্পাসে চলাফেরা শিক্ষার্থীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
রাজশাহী কলেজকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় মসজিদের পেছন দিকটি ধূমপায়ীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে, অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো নজরদারি নেই।
আব্দুল হাকিম নামের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজের গণিত ভবনের পেছনের অংশে ধূমপান করতে প্রায়ই কয়েকজনকে দেখা যায়, যা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এছাড়া কলেজের মসজিদের পেছনে অবাধে চলে মাদক ও ধূমপান। শুধু ধূমপানই নয়; কলেজের নিয়ম শৃঙ্খলা কোন কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। প্রশাসন বারবার পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। এখনো প্রকাশ্যে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে ক্লাস চলাকালীন ঘুরে বেড়ায়। এবং শিক্ষার্থীদের হুমকি ধামকি দেয়া থেকে শুরু করে নানান ঝামেলা সৃষ্টি করে যা আগে কখনো এরকম দেখা যায়নি। অবাধে চলে মোটরসাইকেল শোডাউন। ক্লাস চলাকালীন মোটরসাইকেল ভেতরে ঢুকান নিষিদ্ধ থাকলেও চলে অবাধে, প্রশাসন এতে কোন নজর দেন না।
তিনি আরো বলেন, কলেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই আগের মত। যেখানে একটা সময় দেখা যেত কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে কোন কাগজ পড়ে থাকলে শিক্ষার্থীরা তুলে ফেলতেন সেই পরিবেশটা ছিল কিন্তু সেই পরিবেশটা আস্তে আস্তে হারিয়ে গেছে। এর পুরো দায়ী প্রশাসনের। প্রশাসনের অবহেলা এবং দূরদর্শিতা কম থাকার কারণে এ ধরনের অপরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে। কলেজ এভাবেই চলতে থাকলে সামনে কলেজ প্রশাসন হুমকির মুখে থাকবে। তাই আমি চাইবো প্রশাসন এখন থেকেই এ বিষয়গুলো উপর নজর দেবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
রাজশাহী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. হবিবুর রহমান বলেন, কলেজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান রোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর মনিটরিং টিম গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
রাজশাহী কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মুঃ যুহুর আলী জানান, শৃঙ্খলা কমিটি কাজ করছে এবং কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে তা জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরপি/আআ
বিষয়: রাজশাহী কলেজ
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: