রাজশাহী সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


রাজশাহী কলেজে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে জারুল ফুল


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৮

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ১৯:০৬

রাজশাহী পোস্ট

জারুলের তুর্কী রঙে রাজশাহী কলেজ এখন এক নতুন আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। জারুল ফুল তার সৌন্দর্য ও সুগন্ধি দিয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের মুগ্ধ করে। এই সৌন্দর্য শুধু চোখের জন্য নয়, মনের গভীরে এক নরম আনন্দের স্পর্শ রাখে। ফুলটি বসন্তের শুরু থেকে গ্রীষ্মের শেষ পর্যন্ত পূর্ণ বিকাশ লাভ করে।

বোরবার (২৮ এপ্রিল) দেশসেরা রাজশাহী কলেজের সর্বত্র জারুল ফুলের আধিক্য দেখা যায়, যা শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের চোখ জুড়াচ্ছে।

রাজশাহী কলেজে এখন জারুল সাধারণ দৃশ্য। শহরের মানুষ বলে থাকেন, জারুলের এই নরম উপস্থিতি তাদের মনে শান্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, যা দৈনন্দিন হট্টগোল থেকে মুক্তির এক পরিবেশ সৃষ্টি করে।

পরিবেশবিদ এবং উদ্ভিদতত্ত্ববিদরা মনে করেন, জারুলের ব্যাপক বিস্তার শহরের আবহাওয়া এবং বায়ু দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি জৈববৈচিত্র্য বাড়াতে সহায়তা করে।

জারুলের অপরূপ দৃশ্য শহরের নানা অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক অধ্যায়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি এখন ফটোগ্রাফার এবং পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণের কেন্দ্র। তারা বলেছেন, জারুলের এই অসাধারণ সৌন্দর্য তাদের ক্যামেরা লেন্সে এক ভিন্ন মাত্রা ধারণ করে।

এই ফুল রাজশাহী কলেজকে এক মিষ্টি অধ্যায় যোগ করেছে। জারুলের মনোরম স্পর্শ এখানকার সৌন্দর্যকে আরও বিশেষ করে তোলে, যা রাজশাহী কলেজের মুখকে এক নতুন পরিচিতিতে পরিণত করে। এই সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস এখন এক নতুন মোহনীয়তায় আবৃত - জারুল ফুলের জাদুকরী স্পর্শে।

জারুলের নীল আভায় মুগ্ধ হয়ে কবি আহসান হাবীব তার "স্বদেশ" কবিতায় জারুলের প্রশংসা করেছেন। তিনি লিখেছেন, মনের কোনায় খুশির আলো জ্বলে ওঠে, তখন এক অনন্য চিত্র আঁকি— এক পাশে বিশাল জারুল গাছ, তার ডালে দুটি হলুদ পাখি।

শুধু আহসান হাবীব নন, 'রূপসী বাংলার কবি' জীবনানন্দ দাশও তাঁর কবিতায় জারুলের শিল্পময় রূপকে জীবন্ত করে তুলেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ-দুপুর-চিল একা নদীটির পাশে, জারুল গাছের ডালে বসে বসে চেয়ে থাকে ওপারের দিকে।’ এই কবিতার বন্দনার মতোই জারুল ফুলের মায়াবী সৌন্দর্য রাজশাহীর পথে পথে, প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে, শহরটিকে এক নতুন রূপ দান করে।

রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশি ইসলাম বলেন, রাজশাহী কলেজের ফুলের বাগানে জারুলের বিশেষ সমাহার অন্য এক প্রশান্তি এনে দেয়। বিশেষ করে নতুন লাগানো চারা গাছগুলোতে ফুটে ওঠা ফুল আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে।

রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জারুল ফুলের এই সৌন্দর্য শুধু চোখ ধাঁধানো নয়, এর মাধ্যমে রাজশাহী শহরের পরিবেশগত মান ও বৈচিত্র্যময়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জারুল ফুল পরিবেশ বান্ধব একটি উদ্ভিদ এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নগরীর আবহাওয়া ও পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, জারুল ফুল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতিদের আকর্ষণ করে, যা পরিবেশগত বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক ও রাস্তাঘাটে জারুল ফুলের ব্যবহার শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ সুরক্ষায় দ্বিগুণ ভূমিকা রাখছে। এটি শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করছে।

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাঃ আব্দুল খালেক বলেন, রাজশাহী কলেজে যে সকল ফুল রয়েছে তার মধ্যে জারুল অন্যতম। এই তীব্র তাপদহে অন্যান্য ফুলগুলো এখন দেখা মিলছে না, তবে জারুল ফুল রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসকে রঙিন করে তুলেছে। এ ফুল গাছগুলো যেমন ছায়া দিচ্ছে, তেমন ফুলগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের আনন্দ দিচ্ছে। রাজশাহী কলেজের সৌন্দর্য যেভাবে বৃদ্ধি করা যায় আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা যেনো পরিবেশ বান্ধব ক্যাম্পাস পাই, সেজন্য আমরা সব সময় নতুন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে আসছি। সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদেরকে এ জারুল ফুলের শুভেচ্ছা।

 

আরপি/আআ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top