রাজশাহী শনিবার, ২৭শে এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ ১৪৩১

সুস্থভাবে বাঁচতে চান পুলিশ একাডেমির সাবেক ঘোড়সওয়ার


প্রকাশিত:
২৯ জানুয়ারী ২০২১ ২০:৫৬

আপডেট:
২৯ জানুয়ারী ২০২১ ২০:৫৯

বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক ঘোড়সওয়ার দুলাল কুমার

রাজশাহীর সারদা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির সাবেক ঘোড়সওয়ার দুলাল কুমার। বিশ বছর আগে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। ওই দুর্ঘটনার পর পায়ের হাড়ে ক্ষয় ধরলে দেশে-বিদেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেওয়া হয়। সুস্থভাবে সুখে-শান্তিতেই জীবন কাটছিল এরপর। কিন্তু মাস দেড়েক আগে সাইকেলে উঠতে গিয়ে সামান্য আঘাতে সেই সুখের জীবনে আবার ছেদ পড়ে।

ওই আঘাতের পর রাজশাহীর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করেন। কিন্তু তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিতে শুরু করে ছোট-বড় বিভিন্ন রকমের ফোস্কা। এখানে চিকিৎসা নিয়ে কাজ না হলে ঢাকায় যান চিকিৎসা নিতে। তবে কোনো লাভ হয়নি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রক্তকণা জমাট বেঁধে বড় একটি রক্তনালী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডান পায়ে পচন ধরেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে পচন হাঁটু ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ থামাতে গত ২৩ জানুয়ারি তার একটি পা কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা।

এক পা হারানোর পরেও মনোবল কমেনি দুলাল কুমারের। সুস্থভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার বেঁচে থাকাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এখন। বড় বড় ফোস্কায় ছেয়ে গেছে পুরো শরীর। নতুন করে গভীর ক্ষত দেখা দিয়েছে বাম পা, দুই হাত এবং কেটে ফেলা ডান পায়ের বাকি অংশেও ছড়িয়েছে ক্ষত। শরীরের বেশকিছু জায়গায় পচনও দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দুলাল। অসহনীয় যন্ত্রণা নিয়ে বেডে জায়গা না পেয়ে কাতরাচ্ছেন বারান্দায়।

এদিকে, এক ছেলে, দুই মেয়ে, ছোট ভাই ও বাবাসহ সাত সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের স্বজনরা।

দুলালের স্ত্রী চম্পা রায় জানান, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। তার এমন অবস্থায় তারা ভেঙে পড়েছেন।

দুলালের বোন রিতা রাণী জানান, ঘোড়া থেকে পড়ে যাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য ঘরবাড়ি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা খরচ করে ভারতের চেন্নাই থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন ভাই। এরপর প্রায় ১৮ বছর ধরে সুস্থভাবে জীবনযাপন করছিলেন। গত মাসের শেষের দিকে সাইকেল চালাতে গিয়ে তার পা মচকে যায়। রাজশাহীর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাচ্ছিলেন। এরপর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

রিতা আরও অভিযোগ করেন, হাসপাতালে তার ভাই কোনো বেড পাননি। চিকিৎসক বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন বেড ব্যবহার করতে বললেও থাকতে হচ্ছে ওয়ার্ডের বারান্দায়।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা নাজনীন আশা বলেন, গত ১৮ বছর ধরে তিনি সুস্থই ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। হঠাৎ ডিসেম্বরের দিকে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন। এরপর একজন চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করছিলেন। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেই নাকি এমনটা হয়েছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতেই পারে। সাধারণ প্যারাসিটামলেও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে তাতে এমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না। ওই রোগীকে কিছু সাধারণ ওষুধই দেয়া হয়েছিল। আসলে একটি রক্ত কণা তার ডান পায়ের সবচেয়ে বড় রক্তনালীকে ব্লক করার কারণে তার পায়ে পচন ধরতে শুরু করে। এজন্য তার ডান পা কেটে ফেলতে হয়েছে।

তিনি বলেন, এই রোগীর রিপোর্ট দেখা জানা গেছে, তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে হাড়ের ক্যানসারে ভুগছেন। ক্যানসারের এই সংক্রমণটা তার অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ছে। তার হাতের অপারেশন করতে হবে। পিঠের নিচের অংশেও অপারেশন করতে হবে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় স্থানান্তর করা হবে বলে জানান  ডা. আফরোজা নাজনীন।

 

আরপি/এমএএইচ



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top