তালা-চাবি মেরামত করেই সংসার চালান প্রতিবন্ধী দ্বিজেন
-2020-11-14-20-05-13.jpg)
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর বাজার হতে আড়ানী স্টেশন বাজারের যেতে বাজারের শুরুতে কয়েকটি দোকান পেরুতেই রাস্তার ডান পাশে চোখে পড়ে দোকান পেতে বসে আছে এক তালা-চাবি মেরামতকারী। বাম হাত আর ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীর সহায়তায় চলছে এই মেরামত কাজ।তিনি হলেন প্রতিবন্ধী দ্বিজেন্দ্রনাথ সরকার।
তাকে সবাই দ্বিজেন বলেই ডাকে। বয়স ৬২ বছর। তার বাড়ি আড়নী স্টেশন বাজার সংলগ্ন বেড়েরবাড়ি গ্রামে। দ্বিজেনের বয়স যখন দেড় বছর তখন খেলতে খেলতে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর জ্বর, আর তার পরেই দুই হাত এবং দুই পা শুকিয়ে যেতে থাকে। দরিদ্্র বাবা-মা অর্থাভাবে সেই সময়ে তার চিকিৎসা করাতে পারেনি। তারপর থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধী দ্বিজেন্দ্রনাথ সরকার হতাশ না হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন।তার শরীরের ডান পাশ একেবারেই অকেজো। তবে তার বাম হাতের অগ্র-ভাগে কিছুটা শক্তি পান। এ নিয়ে ১৫ বছর বয়সে তালা-চাবি মেরামতের কাজে নেমে পড়েন। তালা-চাবি মেরামতের কাজ নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।তিনি ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে চেপে ধরে বাম হাতের সহযোগিতায় এই মেরামতের কাজ করে চলেছেন। তার চোখ সমস্যা থাকায় একটা চশমা ব্যবহার করেন। এই মেরামতের কাজ করে তিনি প্রতিদিন যে টাকা আয় করেন। সেই সামান্য আয় দিয়েই ৫ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগান। বর্তমানে এক ছেলে দুই মেয়েকে ধারদেনা করে বিয়েও দিয়েছেন। ছেলে নিপেন (৩২) বিয়ে করেই আলাদা হয়ে সংসার করছেন।দুই মেয়েকে ধারদেনা করে বিয়ে দিলেও ধারের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে ভাবছেন দ্বিজেন ও তার স্ত্রী দুলালী রাণী।
একদিকে দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি, অন্য দিকে তেমন কাজ কর্ম না থাকায় মাত্র ৮০/৯০ টাকা আয় করে কোন দিন দু-বেলা, দু-মুঠো খাবার জোটে, আবার কোন দিন জোটায় দায়। কথাটি বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন দ্বিজেন। দ্বিজেনের চোখের পানি বলে দিচ্ছে তিনি কতটা কষ্টে আছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, নিজের কোন স্থায়ী জায়গা নেই, যে জায়গায় বসেন তিনি কাজ করেন, সেটাও আড়নী স্টেশন বাজার হায়দার আলীর সাইকেল পার্টসের দোকানের বারান্দায়।
তিনি বলেন, এ বারান্দা ও বারান্দা এভাবেই চলছে তার কাজ। আমার বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিঃ মিঃ পথ প্রতিদিন এক হাত আর এক পায়ের উপর ভর করেই বাজারে আসতে হয়। তিনি আরও বলেন, এই দুঃখ ভরা জীবনে তেমন কেউ কোন দিন সাহায্য করেননি। তালা-চাবি মেরামতের আয় আর প্রতিবন্ধী ভাতা থেকে মাসে যে টাকা পাচ্ছে তা দিয়ে চলে তাদের সংসার। সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান ব্যক্তি যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলে একটু ভালভাবে জীবন যাপন করতে পারেন বলে দ্বিজেনের আবেদন।
আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দ্বিজেন একজন দরিদ্র মানুষ। তাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।
আরপি /এমবি-৩
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: