রাজশাহী শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘হলদে পাখির কলকাকলি’তে শিশুদের সচেতনতা


প্রকাশিত:
১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০২

আপডেট:
১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৪:১৫

সংগৃহীত ছবি

শিশুরা কান পেতে থাকতো; কখন রেডিওতে শুনতে পাবে- “আমরা সব হলদে পাখি কিচির মিচির ডাকাডাকি”। ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বেজে উঠতো তাদের সেই পরিচিত ও প্রিয় সুরটি। তারা মেতে উঠতো পছন্দের গানের ছন্দে।


বলছিলাম, শিশু শিক্ষা ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ‘হলদে পাখির কলকাকলি’র কথা। করোনাকালে ঘরবন্দী অবস্থায় বিনোদনের পাশাপাশি শিশুদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে অনুষ্ঠানটি প্রচার করতো কমিউনিটি বেতার ‘রেডিও বড়াল ৯৯.০ এফ এম’। গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।

কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোড সেফটি, স্যানটিশেন এবং শিশু পাচার নিয়ে ৫টি পর্বে বিভক্ত ছিল অনুষ্ঠানটি। সেখানে গার্লস গাইড এসোসিয়েশনের কার্যক্রম সর্ম্পকে তথ্য, হলদে পাখির প্রতিজ্ঞা, সচেতনতামূলক কার্টুন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্রশসহ নানা আয়োজন দিয়ে সাজানো মনোমুগ্ধকর শিক্ষনীয় অনুষ্ঠান ছিল ‘হলদে পাখির কলকাকলি’।

করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিশুর ঘরবন্দী সময় কাটছে। এই সময়টাতে শিশুদেরকে বিনোদন দেয়ার পাশাপাশি মহামারী সম্পর্কে সচেতন করতেই ছিল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। অল্প কয়েকদিনেই শিশুদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল অনুষ্ঠানটি।

হলদে পাখি অনুষ্ঠানের নিয়মিত শ্রোতা মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী শরিফ জায়মা রহমান জানায়, ‘হলদে পাখির কলকাকলি’ অনুষ্ঠানটি শুনে সে জানতে পেরেছে কিভাবে পরিবারের অন্য সদ্যেদের সাহায্য করতে হয়। এছাড়াও মেয়ে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করনীয় সম্পর্কে জেনেছে বলে জানায় হলদে পাখি শরিফ জায়মা।

মনির্জা রহমান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী সাবরিনা সালাম জানায়, অনলাইনে রেডিও বড়ালের ‘হলদে পাখির কলকাকলি‘ অনুষ্ঠান শুনে করোনা মহামারির এই সময়ে ভাইরাস থেকে কিভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, তা জানতে পেরেছে। এছাড়াও সঠিকভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম এবং সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহনের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে বলে জানায় ছোট্ট সাবরিনা।

রাজশাহীর বাঘার আড়ানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী রিয়া বলছিলো, সে নিয়মিত রেডিও বড়াল শুনে। ‘হলদে পাখির কলকাকলি’ অনুষ্ঠানিট তার খুব ভাল লেগেছে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে সুরক্ষা আইন এবং সঠিকভাবে রাস্তাপারাপারের নিয়মগুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

শুধু শিশুরাই নয় অভিভাবকদের কাছেও সুনাম কুড়িয়েছে ‘হলদে পাখির কলকাকলি’। অভিভাবকরা বলছেন, এই ধরণের অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার হলে বিনোদনের পাশাপশি শিশুদের মানসিক বিকাশ ঘটবে। অনুষ্ঠানটি প্রচার অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান তারা।

জানা গেছে, রাজধানী অঞ্চল বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের সৌজন্যে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনায় ছিল ইন্সটটিউিট অব কমউিনকিশেন স্টাডিজ ও রেডিও বড়াল ৯৯.০ এফ এম।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন ঢাকায় ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। এটি ১৯৭৩ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব গার্ল গাইডস অ্যান্ড গার্ল স্কাউটস-এর সদস্য হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বালিকা ও তরুণীদের মধ্যে নেতৃত্ব সৃষ্টির প্রশিক্ষণদানে দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠন। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েদের সুপ্ত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা এবং জাতীয় ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য তাদের উৎসাহিত করা।

সংগঠনটি মেয়েদের মানসিক বিকাশ, চরিত্রগঠন, শারীরিক যোগ্যতা দৃঢ়করণ, বিনোদন, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন, সৃজনশীলতা, উপচিকীর্ষা, ঘরকন্নায় দক্ষতাবৃদ্ধি ইত্যাদিকে লক্ষীভূত করে একটি ৮ দফা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষানবিশ গার্ল গাইডদের তিন দলে বিভক্ত করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এগুলোর প্রথম স্তর হলো হলদে পাখি।

হলদে পাখি সম্পর্কে বাংলাদশে গার্ল গাইডস্ এ্যাসোসিয়েশন রাজধানী অঞ্চলের আঞ্চলিক কমিশনার রওশন ইসলাম জানান, ৬-১০ বছরের শিশুদের হলদে পাখি বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান সময়ে এদের নীল পাখি বলা হত। বাংলাদেশ হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে হলদে পাখি নামকরণ করা হয়।

তিনি আরও জানান, গাইডিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা হিসেবে পরিচালিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে হলদে পাখির দল গঠন করা হয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হলদে পাখির দল গান, নাচ, খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদেও দৈনন্দিন কাজ যেমন- নিজের পোশাক ধোয়া, গুছিয়ে রাখা, জুতা পরিষ্কার, চুল আঁচড়ানো, ছোট ভাই-বোনদের দেখাশুনা করা, বড়দের কথা মান্য করা, দলীয়ভাবে কাজ অর্থাৎ একমত হয়ে কাজ করা ইত্যাদি শেখে।  

 

আরপি/ এএন-০৭


বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top