রাজশাহী শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১


ঐতিহাসিক কার্ডিফ কাব্যগাথার দেড় দশক


প্রকাশিত:
১৮ জুন ২০২০ ১৭:১৬

আপডেট:
১৮ জুন ২০২০ ১৭:১৬

ফাইল ছবি

‘এটা অনেক বড় অঘটন! রিখটার স্কেলে মাপতে গেলে, স্কেলের বাইরেই চলে যাবে’- জেসন গিলেস্পির বলে ব্যাট-প্যাড করে আফতাব আহমেদ যখন জয়সূচক রানটি নিলেন, তখনই ১০০ গজের মধ্যে বসে থাকা ধারাভাষ্যকার এভাবেই দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের বর্ণনা।

অবশ্য এমনটা বলবেনই না কেন, সেদিন ইংল্যান্ডের কার্ডিফে খেলতে নেমে পুরো অস্ট্রেলিয়া তথা ক্রিকেট বিশ্বকে কাপিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। তখনকার সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলকে হারিয়ে দিয়েছিল ৫ উইকেটের ব্যবধানে। যা ছিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম বড় অঘটন।

ঘটনা আজ থেকে ঠিক দেড় দশক আগে, ২০০৫ সালে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ১৮ জুন, প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভেন্যু ছিল কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন।

তখনও পর্যন্ত প্রায় ১৯ বছরের ওয়ানডে যাত্রায় বাংলাদেশ জিতেছিল ৯টি মাত্র ম্যাচ। ফলে মহাপরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ই যেন ছিল স্বাভাবিক ফলাফল। কিন্তু সেদিন অস্বাভাবিক ঘটনারই জন্ম দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল।

বল হাতে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ রফিক, তাপস বৈশ্যদের পর ব্যাট হাতে মোহাম্মদ আশরাফুলের অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরির সঙ্গে অধিনায়ক বাশারের কার্যকরী ইনিংসে জয় পায় বাংলাদেশ। যা এখনও পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয়।

সে ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শুরুতেই মাশরাফির তোপ, রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে মারকুটে ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে ফেরান তাপস। বেশিদূর যেতে পারেননি আরেক ওপেনার ম্যাথু হেইডেনও। তখন অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৫৭, ওভার শেষ প্রায় ১৬টি।

চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁধেন মাইকেল ক্লার্ক ও ড্যামিয়েন মার্টিন। দুজনের ১০৯ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিলেও ততক্ষণে শেষ হয়ে যায় ৪২ ওভার। দলীয় ১৬৫ রানের মাথায় ফেরেন ৭৭ রান করা মার্টিন, এক ওভার পরে সাজঘরের পথ ধরেন ৫৪ রানের ইনিংস খেলা ক্লার্ক।

তখন মনে হচ্ছিল হয়তো বেশি বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারবে না অসিরা। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৩৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রান যোগ করেন সাইমন ক্যাটিচ ও মাইক হাসি। ক্যাটিচ ৩৬ ও হাসি ৩১ রানে অপরাজিত থাকলে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামে ২৪৯ রানে। গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, ব্র্যাড হগদের সাজানো বোলিং আক্রমণের জন্য যা ছিল যথেষ্ঠ সংগ্রহ।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশেরও। দলীয় ৫০ পেরুতেই লেগে যায় ১৫ ওভার। সাজঘরে ফিরে যান নাফিস ইকবাল ও তুষার ইমরান। ইনিংসের ২১তম ওভারে দলীয় ৭২ রানের মাথায় আউট হন ৫১ বলে ১৯ রান করে জাভেদ ওমর।

এরপরই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু বাংলাদেশের। চার নম্বরে নামা ২০ বছর বয়সী আশরাফুল সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান অধিনায়ক বাশারকে। দুজন মিলে যোগ করেন ১৩৮ বল খেলে গড়েন ১৩০ রানের জুটি। দলীয় ২০০ পেরুনোর পর আউট হন ৪৭ রান করা বাশার।

তখনও জয়ের বাকি ছিল বেশ খানিকটা পথ। আশরাফুল তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ও বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তবে শতক পূরণ করার পরের বলেই তিনি আউট হয়ে যান। তার ১১ চারে সাজানো ১০০ রানের ইনিংসটিই হয়ে থাকে বাংলাদেশের জয়ের ভিত।

আশরাফুল আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের দরকার ১৭ বলে ২৩ রান। যা শেষ ওভারে নেমে ৬ বলে ৭ রানে। গিলেস্পির করা সেই ওভারের প্রথম বলেই লং অন আর মিড উইকেটের মাঝামাখি জায়গা দিয়ে ছক্কা হাঁকান আফতাব আহমেদ। পরের বলেই সিঙ্গেল নিয়ে নিশ্চিত করেন অবিস্মরণীয় এক জয়।

 

আরপি/এমএএইচ-০৭



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

Top